|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||
যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য তৃতীয় স্থান। ২০১৬ সালে মেহেদী হাসান মিরাজ-সাইফউদ্দিনরা ঘরের মাঠে স্বপ্ন দেখিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। পরের আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাড়ি ফেরে সাইফ হাসানের দল। আসছে আরেকটি যুব বিশ্বকাপ। এবারের বিশ্বকাপকে ঘিরে বাংলাদেশের আশা অনেক বেশি। যুব দলের সাম্প্রতিক সময়ের পারফরম্যান্স প্রত্যাশার বেলুনকে বড় করেছে। ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে সিরিজ জয় এবং এশিয়া কাপে রানার্স আপ হয়েছে বাংলাদেশের যুবারা।
সব মিলিয়ে দেশকে বড় স্বপ্ন দেখাচ্ছে আকবর আলীর দল। বিশ্বকাপে খেলতে আগামী ৩ জানুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার উদ্দেশে উড়াল দেবেন হৃদয়-আকবররা। অধিনায়ক আকবর আলী দল নিয়ে আশাবাদী। সাকিব-তামিমদের এই অনুজ ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে একান্ত আলাপে জানিয়েছেন, দলের সবাই নিজের ভূমিকা সম্পর্কে জানেন। বিশ্বকাপে লক্ষ্য, প্রস্তুতি, দলের শক্তির জায়গাসহ আরও অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন আকবর।
ক্রিকফ্রেঞ্জির পাঠকদের জন্য পুরো সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো-
ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বিশ্বকাপের প্রস্তুতি কেমন হয়েছে?
আকবর আলীঃ আমাদের প্রস্তুতি আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো। আমরা এর আগে যে সিরিজগুলো খেলেছি সেখানে আমাদের খেলা অনেক ভালো হয়েছে। এরপর বগুড়ায় ক্যাম্প করেছি। যেসব জায়গায় আমাদের দুর্বলতা ছিল, সেসব নিয়ে বাড়তি কাজ করেছি সবাই। আমাদের দলটা বেশ ভারসাম্যপূর্ণ। আমি বলব, বেশ ভালো অবস্থানে থেকেই বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছি আমরা।
ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ অধিনায়ক হিসেবে দল নিয়ে কতটুকু আশাবাদী আপনি? কতদূর পর্যন্ত লক্ষ্য স্থির করেছেন?
আকবরঃ শুধু আমি একা না, দলের সব খেলোয়াড় বিশ্বাস করে যে আমরা শিরোপা জিততে পারব। আর সেখানে শিরোপা জেতার জন্যই যাব আমরা। তারপরও আমাদের ফোকাস থাকবে ম্যাচ বাই ম্যাচ ভালো খেলা। সবার আগে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করতে চাই। এরপর সামনের দিক নিয়ে চিন্তা করতে চাই। পুরো দলের ভাবনাই এমন।
ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে শ্রীলংকা এবং নিউজিল্যান্ডে সিরিজ জিতেছেন। দুটি টুর্নামেন্টে রানার্স আপ হয়েছেন। এক বছর ধরে দল ধারাবাহিক পারফর্ম করছে। এই সফলতার পথটা কীভাবে তৈরি হলো?
আকবরঃ আমাদের মূল শক্তি হচ্ছে আমরা দল হিসেবে খেলার চেষ্টা করি। কোনোদিন ব্যাটসম্যানরা পারফর্ম করতে না পারলে সেদিন বোলাররা সামনে থেকে এগিয়ে আসে। আবার যেদিন বোলারদের দিন খারাপ যায়, সেদিন ব্যাটসম্যানরা দায়িত্ব নিয়ে খেলে। কালেক্টিভ পারফরম্যান্সের কারণে আমাদের পেছনের ফলাফল এতো ভালো হয়েছে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে খেলার চেষ্টা করে পুরো দল। এ ছাড়া সবাই যার যার ভূমিকা নিয়ে একদম পরিষ্কার। সবাই জানে কে কোন ভূমিকা পালন করবে। কারও মনের মধ্যে কোনো দ্বিধা নেই। যার যেখানে যে ভূমিকায় খেলা দরকার, সে সেটাই করছে। কোনোদিন কেউ কেউ বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে নিচ্ছে। দলের জন্য সবাই চেষ্টা করছে সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলার। এসব কারণেই পেছনের ম্যাচগুলোতে সাফল্য এসেছে।
ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেট এবং কন্ডিশন বাংলাদেশের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাউন্সি উইকেটে খেলা হয়, সিমিং কন্ডিশন থাকে। সিনিয়র খেলোয়াড়রা সেখানে গিয়ে সফল হননি, আপনরা কী পরিকল্পনা করেছেন?
আকবরঃ সেখানে তো সিমিং কন্ডিশন থাকে, উইকেটে বাউন্স থাকে। তো আমরা চেষ্টা করেছি ঘাসের উইকেটে খেলার। বগুড়ায় উইকেটও এমন ছিল। চেষ্টা করেছি সম্পূর্ণভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার কন্ডিশন এবং উইকেটের কথা ভেবে খেলার। এ ছাড়া অন্য যে সকল প্রস্তুতি দরকার ছিল, সেগুলো অনেক ভালোভাবে নিয়েছি। দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েও প্রস্তুতি নেয়া হবে। আশা করছি সেখানে সব পরিকল্পনা সাজাতে পারব।
ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডে খেলার অভিজ্ঞতা আছে আপনাদের। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এই অভিজ্ঞতা কতটুকু সাহায্য করবে?
আকবরঃ অবশ্যই অনেক সাহায্য করবে। ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডে যে কন্ডিশন এবং উইকেটে খেলেছি, সেগুলো দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলতে আমাদের অনেক সাহায্য করবে। খেলোয়াড়রাও বুঝতে পারবে, কোনো কিছু পুরোপুরি নতুন মনে হবে না ওদের। বিশ্বকাপে ভালো করতে অবশ্যই এই অভিজ্ঞতা অনেক কাজে আসবে।
ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ দলে আপনিসহ অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে। তৌহিদ হৃদয়, মৃত্যুঞ্জয়, সাকিব, রাকিবরা নিয়মিত পারফর্ম করছেন। বিশ্বকাপে দলের তুরুপের তাস কে হতে পারেন?
আকবরঃ আমাদের দলে সবাই সাম্প্রতিক সময়ে অনেক ভালো খেলছে। তাই একজনকে নির্দিষ্ট করে কিছু বলব না। সবাই সমান। সবাই ভালো খেলছে, নিয়মিত পারফর্ম করছে। প্রতি ম্যাচে কেউ না কেউ পারফর্ম করছে। কেউ ব্যাটিংয়ে ভালো করছে তো কেউ বোলিংয়ে। সবাই সবার মতো খেলে যাচ্ছে। তেমন কোনো চাপ নেই। ওরা ওদের ভূমিকা সম্পর্কে জানে বলেই ভালো খেলছে।
ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আপনি উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান, পাশাপাশি অধিনায়ক। ব্যাটিং করছেন ৫, ৬ নম্বরে। সাম্প্রতিক সিরিজগুলোতে নিয়মিত রান করেছেন, অনেক ম্যাচে দলকে একাই জিতিয়েছেন। ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করছেন, এর রহস্য কী?
আকবরঃ ওই যে বললাম আমাদের দলে সবাই সবার ভূমিকা সম্পর্কে জানে। আমি ৫, ৬ নম্বরে নামি। কখনও হাল ধরতে হয়, আবার কখনও ইনিংস লম্বা করতে হয়। কখনও আবার মেরে খেলতে হয়। এটা আসলে নির্ভর করে কোন পরিস্থিতিতে খেলছি। আমাদের প্রধান কোচ এবং কোচিং স্টাফ পুরো দল নিয়ে অনেক কাজ করেছেন। সবার পেছনে যথেষ্ট সময় দিয়েছেন। এগুলো অনেক সাহায্য করেছে। আর যেটা বললাম ক্লিয়ার মাইন্ডসেটটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণেই শুধু আমি নই, পুরো দলই নিয়মিত পারফর্ম করে যাচ্ছে। আমরা শেষ ৩-৪ মাস যেখানেই খেলেছি, সেখানেই ভালো করেছি। আশা করছি দক্ষিণ আফ্রিকায় আমিসহ পুরো দল এইভাবেই পারফর্ম করবে।
ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সাফল্য তৃতীয় স্থান। মিরাজ-সাইফউদ্দিনরা ঘরের মাঠে খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। আপনাদের দলটা খুব ভালো করছে। সবাই অনেক আশাবাদী আপনাদের নিয়ে। আপনাদের হাতে কি এবার শিরোপা দেখা যাবে?
আকবরঃ আপনাদের মতো আমরা নিজেরাও অনেক আশাবাদী। সবাই ভালো বলছে আমাদের। সবার আশা ভরসা অনেক। আমরা কাউকে নিরাশ করতে চাই না। নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে খেলার চেষ্টা থাকবে। দল হিসেবে পারফর্ম করলে ইনশা আল্লাহ হয়ে যাবে।