promotional_ad

‘কোথাও না কোথাও থেকে আব্বাও তৃপ্তির হাসিতে বলছেন, ওয়েল ডান।’

ক্রিকফ্রেঞ্জি ডেস্ক
সতীর্থ হিসেবে নাফিস ইকবাল ও তামিম ইকবাল
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান ও দুবাইয়ে হতে যাওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে তামিম ইকবালকে চেয়েছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশের অধিনায়কের এমন চাওয়ার প্রেক্ষিতে কদিন আগে সিলেটে তামিমের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নির্বাচক প্যানেল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবারও ফিরবেন কিনা এমন সিদ্ধান্ত নিতে কয়েকদিন সময় নিয়েছিলেন তামিম।

promotional_ad

গাজী আশরাফের কয়েকদিনের মাঝে নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের সাবেক ওপেনার। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে জাতীয় দলের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলা তামিম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করে নিশ্চিত করেছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর অধ্যায় শেষ। বাঁহাতি ওপেনারের বিদায়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাঁর বড় ভাই নাফিস ইকবাল। যেখানে সতীর্থ, প্রতিপক্ষ, ছোট ভাই, অধিনায়ক তামিমের গল্প তুলে ধরেছেন তিনি। সেই সঙ্গে নিজের পরিবার ও তাঁর বাবাকে নিয়েও স্মৃতিচারণ করেছেন নাফিস। 


পাঠকদের সুবিধার্থে নাফিস ইকবালের পুরো ফেসবুক পোস্ট তুলে ধরা দেয়া হলো”


“বাংলাদেশের জার্সিতে তামিমকে আর দেখব না, এখনও যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না। আমার জন্য, আমাদের পরিবারের জন্য দিনটি প্রচণ্ড আবেগময়। 


এই তো সেদিন, ছোট্ট তামিম প্রথমবার ব্যাট হাতে নিল। সময়ের সঙ্গে আমাদেরকে চমকে দিতে থাকল। আমরা ক্রিকেট পরিবারের মানুষ, তার পরও সবাই বুঝতে পারছিলাম, তামিম আমাদের সবার চেয়ে আলাদা। ছোট থেকেই আগ্রাসী, ভয়ডর ছিল না। তখন থেকেই জানতাম, আমাদের সবাইকে ছাপিয়ে যাবে ও। 


আব্বা যতদিন বেঁচে ছিলেন, তামিমকে সময় দিয়েছেন অনেক। হাত ধরে মাঠে নিয়ে যাওয়া, ম্যাচ খেলার ব্যবস্থা করা, ক্রিকেটের জন্য যা যা করা দরকার, সব করেছেন আব্বা। আমাদের পরিবারের সবার আফসোস, তামিমকে দেশের হয়ে খেলতে দেখে যেতে পারেননি আব্বা।  আব্বার চলে যাওয়ার পর থেকে আমি চেষ্টা করেছি, তামিমকে ঠিক আগের মতো করেই মানুষ করতে। 


promotional_ad

কোনো ঘাটতি, কোনো অভাব-অভিযোগ যেন ওর না থাকে। কতটুকু পেরেছি, সেটা ও ভালো বলতে পারবে। আমি নিজে ওর প্রতিটি পদক্ষেপে সবসময় গর্ব অনুভব করেছি। অনূর্ধ্ব-১৫, অনূর্ধ্ব-১৭, অনূর্ধ্ব-১৯, ওই দিনগুলোতেও ওকে নিয়ে আমার গর্বের শেষ ছিল না। ও যেখানেই খেলেছে, যে পর্যায়ে যে দলেই হোক, সবসময় সেরা ব্যাটসম্যান হতে চেয়েছে। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কিছুদিন পর যখন ও জাতীয় দলে এলো, আমাদের পরিবারের জন্য সেটি ছিল যেন ঈদের দিন। 


২০০৭ সালে জিম্বাবুয়েতে ওর আন্তর্জাতিক অভিষেক থেকে শুরু করে ২০২৩ সালে শেষ ম্যাচ, আমার মনে হয় না, ওর কোনো খেলা আমি মিস করেছি। লাইভ দেখতে পারিনি সবসময়, তবে পরে যে কোনোভাবে দেখে নিয়েছি। ও যে মনোযোগ দিয়ে ব্যাট করত, আমি একই একাগ্রতায় ওর খেলা দেখতাম। তামিম আমাদেরকে সবসময় গর্বিত করেছে।


আমাদের পরিবারের সবাই, যত বাচ্চা আছে, যখন নিজেরা খেলে, এমনকি আমার মেয়ে যখন ফুটবল খেলে, সবাই ২৮ নম্বর জার্সি গায়ে খেলে। ও যেমন আমাদের আপনজন, তেমনি আমাদের সুপারস্টার। ভাই হিসেবে বললে, ওর চেয়ে ভালো কাউকে আর পেতে পারতাম না। শুধু আমি কেন, পরিবারের সবার প্রতি দারুণ যত্নশীল ও। যদিও সেটা খুব একটা প্রকাশ্যে দেখায় না, কিন্তু আমাদের জন্য সবটুকুই করে। সবার যে কোনো সমস্যায় সবার আগে এগিয়ে আসে ও।
 
মাঠে প্রতিপক্ষ হিসেবেও ওকে পেয়েছি আমি। খুবই কঠিন এবং আপোসহীন প্রতিপক্ষ। আমার মনে আছে, পোর্ট সিটি ক্রিকেট লিগে আমার বিপক্ষ দলে ছিল তামিম। আমাকে প্রচণ্ড স্লেজিং করেছিল। আমি খুবই বিব্রত হয়েছিলাম। ভাবতেও পারিনি, ওর কাছ থেকে রেকম কিছু পাব। সেদিন বুঝেছিলাম, মাঠের লড়াইয়ের ওর কাছে সবকিছুর আগে নিজের দল। আবার একসঙ্গে যতটুকু খেলতে পেরেছি জাতীয় লিগে চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে, ঢাকা লিগে ব্রাদার্স, মোহামেডান, বিমানে, দেখেছি ওর চেয়ে ভালো সতীর্থ আর হয় না।


পরে জাতীয় দলে আমি যখন ম্যানেজার, ওকে পেয়েছি অধিনায়ক হিসেবে। আমার কাজের জায়গা থেকে বললে, খুবই আন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল ও। সতীর্থদের তো বটেই, ম্যানেজমেন্টের যে কোনো প্রয়োজনেও ওকে দেখেছি পাশে থাকতে। এমন নয় যে সবসময় সবকিছুতে আমরা একমত ছিলাম। তবে আমি ম্যানেজার হিসেবে ওকে কিছু বোঝাতে চাইলে, বুঝত খুব ভালোভাবে। 


আমার আশা ছিল, আবার ওকে দেশের জার্সিতে দেখব। ব্যক্তিগতভাবে এখনও মনে করি, তামিম ফুরিয়ে যায়নি এবং দেশকে আরও কিছু দেওয়ার ছিল ওর। তবে নিজেকে সবচেয়ে ভালো চেনে ও নিজেই। ২০২৩ বিশ্বকাপের আগে ওর সঙ্গে যা হয়েছে, এটা ওর জন্য ছিল প্রচণ্ড এক ধাক্কা, যা সহ্য করার মতো নয়। ওই ব্যাপারটায় তখন আমি ভুগেছি, আমাদের পরিবার ভুগেছে। পুরো পরিবারকে দুঃসহ সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। 


কিছু মানুষ এসব জায়গা থেকে বের হতে পারে, কেউ পারে না। তামিম হয়তো পারেনি। তবে ওর প্রতি সম্মান, ভালোবাসা, সমর্থন, সবটুকুই আছে আমার। আমি নিশ্চিত, সামনেও অনেক রোমাঞ্চকর সময় ওর অপেক্ষায়।


তামিম, আবারও বলছি, “তোমাকে আমরা ভালোবাসি ও তোমাকে নিয়ে সবাই অসম্ভব গর্বিত। কোথাও না কোথাও থেকে আব্বাও তৃপ্তির হাসিতে বলছেন, ‘ওয়েল ডান।”



আরো খবর

সম্পাদক এবং প্রকাশক: মোঃ কামাল হোসেন

বাংলাদেশের ক্রিকেট জগতে এক অপার আস্থার নাম ক্রিকফ্রেঞ্জি। সুদীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্রিকেট বিষয়ক সকল সংবাদ পরম দায়িত্ববোধের সঙ্গে প্রকাশ করে আসছে ক্রিকফ্রেঞ্জি। প্রথমে শুধুমাত্র সংবাদ দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে ক্রিকফ্রেঞ্জি একটি পরিপূর্ণ অনলাইন মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম।

মেইল: cricfrenzy@gmail.com
ফোন: +880 1305-271894
ঠিকানা: ২য় তলা , হাউজ ১৮, রোড-২
মোহাম্মাদিয়া হাউজিং সোসাইটি,
মোহাম্মাদপুর, ঢাকা
নিয়োগ ও বিজ্ঞপ্তি
বিজ্ঞাপনের জন্য যোগাযোগ
নিয়ম ও শর্তাবলী
নীতিমালা
© ২০১৪-২০২৪ ক্রিকফ্রেঞ্জি । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
footer ball