|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
ওয়েস্ট ইন্ডিজের চেয়ে তখনও ১৮১ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ। সকালের শুরুতে তাসকিন আহমেদ ও শরিফুল ইসলাম ব্যাটিংয়ে নামার কথা থাকলেও মেহেদী হাসান মিরাজ দিলেন ইনিংস ঘোষণা। বাংলাদেশ অধিনায়কের এমন সিদ্ধান্ত খানিকটা কৌতূহল জাগানিয়া হওয়ারই কথা। তবে উইকেটের সুবিধা নিতে মিরাজ এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সেটা বুঝতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হয়নি ক্রিকেটপ্রেমীদের। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরির খুব কাছে যাওয়া মিকাইল লুইসকে দ্রুতই ফিরিয়ে শুরুটা করলেন তাসকিন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের শেষ ব্যাটার হিসেবে কেমার রোচকেও ফিরিয়েছেন ডানহাতি এই পেসারই। শুরু ও শেষের মাঝে তাসকিন নিয়েছেন আরও ৪ উইকেট।
প্রথম ইনিংসে ২ উইকেট নেয়া বাংলাদেশের পেসার এবার নিয়েছেন ৬ উইকেট। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেটের স্বাদ পাওয়া দিনটা পুরোপুরি তাসকিনের হওয়ার কথা ছিল। তবে ২৯ বছর বয়সী পেসারের এমন ‘স্বপ্নের’ দিনকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটাররা। জাকির হাসান, মাহমুদুল হাসান জয়, মুমিনুল হকদের ব্যর্থতায় ৭ উইকেটে মাত্র ১০৯ রান করতে পেরেছে সফরকারীরা। অ্যান্টিগা টেস্ট জিততে শেষ দিনে বাংলাদেশকে করতে হবে ২২৫ রান। সিরিজে এগিয়ে যেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাই মাত্র ৩ উইকেট। এমন অবস্থায় প্রথম টেস্টে হারের দুয়ারে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ।
অ্যান্টিগায় ৩৩৪ রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হলো না বাংলাদেশের। ইনিংসের প্রথম ওভারেই জাকির হাসানের উইকেট হারিয়েছে সফরকারীরা। কেমার রোচের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ইনসাইড এজে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন বাঁহাতি এই ওপেনার। প্রথম ইনিংসে ১৫ রান করা জাকির এবার থেমেছেন রানের খাতা খোলার আগেই। আরেক ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ও বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না। জেইডেন সিলসের দারুণ এক ডেলিভারিতে আউট সাইড এজ হয়ে স্লিপে থাকা জাস্টিন গ্রিভসকে ক্যাচ দিয়েছেন ৬ রান করা জয়। নাজমুল হোসেন শান্তর চোটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের টেস্ট দলে জায়গা পেয়েছিলেন শাহাদাত হোসেন দিপু।
সুযোগ পেয়েও অবশ্য সেটা কাজে লাগাতে পারলেন না তিনি। প্রথম ইনিংসে ১৮ রান করা ডানহাতি ব্যাটার দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থ হয়ে ফিরেছেন মাত্র ৪ রানে। ফিরতে পারতেন মুমিনুল হকও। তবে শামার জোসেফের বলে ক্যাচ ছেড়ে বাঁহাতি ব্যাটারকে দুবার জীবন দিয়েছেন উইকেটকিপার জশুয়া ডি সিলভা ও চতুর্থ স্লিপে থাকা মিকাইল লুইস। তবে জীবন পেয়েও সেটা কাজে লাগাতে পারেননি মুমিনুল। পরের ওভারে রোচকে তার বলে তারই হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ডানহাতি পেসারের বলে স্ট্রেইট ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন মুমিনুল। তবে লিডিং এজ হওয়ায় ফলো থ্রুতে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ এক ক্যাচ লুফে নেন রোচ।
প্রথম ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করলেও দ্বিতীয় ইনিংসে দলকে বিপদে ফেলে মুমিনুল ফিরেছেন ১১ রানে। জোসেফের আগের ওভারে স্লিপে অ্যাথানাজের হাতে ক্যাচ দিয়েছিলেন মিরাজ। একই ওভারে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে জেইডেনকে ক্যাচ দিয়েছিলেন লিটন দাস। তবে দুজনের কেউই তাদের ক্যাচ নিতে পারেননি। তবে পরের ওভারে ঠিকই লিটনকে ফিরিয়েছেন জোসেফ। লিটনকে অনেকটা পরিকল্পনা করেই আউট করেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের তরুণ এই পেসার। বাংলাদেশের ব্যাটারকে ফেরাতে ডিপ শর্ট ফাইন লেগ, ফাইন লেগ এবং ডিপ স্কয়ার লেগ নিয়ে বোলিং করছিলেন তিনি। শর্ট বল দিতেই জোসেফের ফাঁদে পা দেন লিটন।
ডানহাতি পেসারের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে থাকা আলজারিকে ক্যাচ দিয়েছেন ২২ রান করা উইকেটকিপার ব্যাটার। তাতে নিজেদের পরিকল্পনায় পুরোপুরি সফল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাকিদের ব্যর্থতায় শুরু থেকেই ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং করছিলেন মিরাজ। চার-ছক্কায় রানও বের করছিলেন তিনি। দলের রান একশ হওয়ার পর হাফ সেঞ্চুরির সুযোগ ছিল বাংলাদেশের অধিনায়কের সামনে। তবে মিরাজকে হাফ সেঞ্চুরি করতে দেননি জেইডেন। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দারুণ এক ক্যাচ নেন ডি সিলভা। মিরাজকে ফিরতে হয় ৪৫ রানের ইনিংস খেলে। একটু পর আউট হয়েছেন তাইজুল ইসলামও। ৭ উইকেটে ১০৯ রান নিয়ে চতুর্থ দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ।
এর আগে সফরকারীদের চেয়ে ১৮১ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই উইকেট হারাতে পারতো স্বাগতিকরা। তাসকিন আহমেদের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে ডিফেন্স করতে গিয়ে এজ হয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছিলেন ক্রেইগ ব্রাথওয়েট। তবে সহজ ক্যাচ লুফে নিতে পারেননি শাহাদাত হোসেন দিপু। পরের বলে মিকাইল লুইসকেও ফেরানোর সুযোগ ছিল বাংলাদেশের সামনে। তাসকিনের ফুল লেংথ ডেলিভারিতে খেলতে গিয়ে বলের লাইন মিস করেছিলেন লুইস। বল প্যাডে আঘাত করায় ডানহাতি পেসার আবেদন করলেও খুব বেশি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন না।
আম্পায়ারও সাড়া দেয়নি বাংলাদেশের আবেদনে। তাসকিন আত্মবিশ্বাসী না হওয়ায় রিভিউও নেয় সফরকারীরা। তবে একটু পর টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় রিভিউ নিলে আউট হতেন ১ রান করা লুইস। যদিও কয়েক ওভার পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওপেনারকে ফিরিয়েছেন তাসকিনই। বাংলাদেশের পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন। প্রথম ইনিংসে ৯৭ রান করা লুইস এবার ফিরেছেন মাত্র ৮ রানে। তিনে নেমে সুবিধা করতে পারেননি কেসি কার্টি। তাসকিনের অফ স্টাম্পে পড়ে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিতে খেলতে গিয়ে স্লিপে থাকা মাহমুদুল হাসান জয়কে ক্যাচ দিয়েছেন।
পরের ওভারে আউট হয়েছেন ব্রাথওয়েটও। স্লিপে থাকা জয়কে ক্যাচ দিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক। এরপর জুটি গড়ে তোলেন কাভেশ হজ ও অ্যালিক অ্যাথানাজ। তারা দুজনে মিলে ৫০ রানের জুটি গড়ে। লাঞ্চ থেকে ফেরার কয়েক ওভার পর কাভেমকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন তাসকিন। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে এজ হয়ে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন ১৫ রান করা কাভেম। পরের ওভারে অ্যাথানাজকে নিজের শিকার বানান মিরাজ। ডানহাতি অফ স্পিনারের বলে লেগ বিফোর উইকেট হয়েছেন ৪২ রান করা অ্যাথানাজ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান একশ হওয়ার আগে ফিরেছেন জাস্টিন গ্রিভসও। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করা ব্যাটারকে এবার ২ রানে ফিরিয়েছেন তাসকিন। বাংলাদেশের পেসারের দুর্দান্ত ডেলিভারিতে বোল্ড হয়েছেন তিনি। দ্রুত রান তোলার চেষ্টায় থাকা জশুয়া ডি সিলভাকে ফিরিয়ে সফরকারীদের স্বস্তি আরও বাড়িয়ে দেন তাইজুল ইসলাম। বাঁহাতি স্পিনারের অফ স্টাম্পের বাইরের বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা হাসান মুরাদকে ক্যাচ দিয়েছেন ২২ রান করা ডি সিলভা। লিড বাড়িয়ে নিতে দ্রুত রান তোলায় মনোযোগী ছিলে আলজারি ও রোচ। যদিও তাদের দুজনকে বাংলাদেশের পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে দেননি মিরাজ।
বাংলাদেশের স্পিনারের বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে দাঁড়িয়ে থাকা জাকেরকে ক্যাচ দিয়েছেন ১৭ রান করা আলজারি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পরের দুই উইকেটই নিয়েছেন তাসকিন। শামার জোসেফকে দারুণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো ৫ উইকেটের দেখা পান বাংলাদেশের এই পেসার। শেষ ব্যাটার হিসেবে স্লোয়ার ডেলিভারিতে রোচকেও ফিরিয়েছেন তিনি। তবে সেখানে অবিশ্বাস্য ক্যাচ ধরা মিরাজের অবদানই হয়ত বেশি। তাসকিনের ৬ উইকেটে দ্বিতীয় ইনিংসে ১৫২ রানে অল আউট হয়েছে ক্যারিবীয়রা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (প্রথম ইনিংস)- ৪৫০/৯ (১৪৪.১ ওভার) (লুইস ৯৭, আথানেজ ৯০, হজ ২৫, সিলভা ১৪, গ্রেভস ১১৫*, রোচ ৪৭, সিলস ১৮, শামার ১১*; হাসান ৩/৮৭, তাসকিন ২/৭৬)
বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস)- ২৬৯/৯ (৯৮ ওভার) (জাকির ১৫, জয় ৫, দিপু ১৮, মুমিনুল ৫০, লিটন ৪০, মিরাজ ২৩, জাকের ৫৩; আলজারি ৩/৬৯, সিলস ২/৪২)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ (দ্বিতীয় ইনিংস)- ১৫২/১০ (৪৬.১ ওভার) (লুইস ৮, ব্রাথওয়েট ২৩, কাভেম ১৫, অ্যাথানাজ ৪২, ডি সিলভা ২২, আলজারি ১৭; তাসকিন ৬/৬৪)
বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস)- ১০৯/৭ (৩১ ওভার) (জাকির ০, জয় ৬, মুমিনুল ১১, দিপু ৪, লিটন ২২, মিরাজ ৪৫)