|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই জিতেছে টসে জিতে আগে ব্যাটিং নেয়া দল। অনেকেই ভেবে নিয়েছিলেন শেষ ম্যাচে টসে জিতে আগে ব্যাটিং নিলেই ম্যাচ জিতে নেয়া যাবে। তবে সেই মিথকে সত্যি হতে দেয়নি আফগানিস্তান। বাংলাদেশের দেয়া ২৪৫ রানের লক্ষ্য ৫ উইকেট আর ১০ বল হাতে রেখেই পেরিয়ে গেছে তারা। রহমানউল্লাহ গুরবাজের সেঞ্চুরির সঙ্গে আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের ৭০ ও মোহাম্মদ নবির অপরাজিত ৩৪ রানে স্বাচ্ছন্দ্যে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে আফগানরা। অভিষেক ম্যাচ খেলা নাহিদ রানা এই ম্যাচে ভালো বোলিং করলেও বাকিদের বোলিং আহামরি কোনো পার্থক্য গড়ে দিতে পারেনি। সেই সঙ্গে ফিল্ডিংয়ে বেশ কিছু সুযোগ হাতছাড়াই ডুবিয়েছে বাংলাদেশ দলকে।
বাংলাদেশের দেয়া মাঝারি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একটু ধীর গতিতে শুরু করলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রানের চাকা ঘোরাতে থাকেন দুই ওপেনার গুরবাজ ও সেদিকউল্লাহ অটল। এর মধ্যে শরিফুল ইসলামকে ইনিংসের তৃতীয় ওভারে কাউ কর্নার দিয়ে একটি ছক্কাও মারেন তিনি। এদিকে অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা নাহিদ রানা প্রথম ওভারে খরচ করেন ৬ রান। দ্বিতীয় ওভার করতে এসে গুরবাজের পরীক্ষা নেন তিনি। এই টাইগার পেসারের একের পর এক গতিময় ডেলিভারিতে হাঁসফাঁস করতে থাকেন এই আফগান ব্যাটার। সেই ওভারে কোনো রানই তুলতে পারেনি আফগানিস্তান।
ইনিংসের অষ্টম ওভারে সেদিকউল্লাহকে বোল্ড করে নিজের প্রথম উইকেট তুলে নেন নাহিদ। তার করা ১৪৭ কিলোমিটার গতির বল ব্যাটে-বলেই করতে পারেননি এই আফগান ব্যাটার। অটল চেয়েছিলেন ব্যাকফুটে গিয়ে ডিফেন্স করতে। তবে নাহিদের গতির কাছে পরাস্ত হতে হয় তাকে। এরপর অল্পের জন্য গুরবাজ জীবন পেয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমানের বলে।
১২তম ওভারে মুস্তাফিজের করা পঞ্চম বলটি ব্যাটে-বলে করতে পারেননি গুরবাজ। লেগে খেলার চেষ্টা করলেও বল ব্যাটের কানায় লেগে হাওয়ায় ভেসে চলে যায় পয়েন্টের দিকে। সেখানে ফিল্ডিং করা রিশাদ হোসেন ডাইভ দিয়েও সেই ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি। পরের বলেই মুস্তাফিজকে ফাইন লেগ দিয়ে ছক্কা মারেন এই আফগান ব্যাটার।
অবশ্য মুস্তাফিজ সেই আক্ষেপ পূরণ করেছেন রহমত শাহকে ফিরিয়ে। মুস্তাফিজের বলে পুল করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন রহমত। সেই ক্যাচ দৌড়ে এসে নিয়েছেন মুস্তাফিজ নিজেই। ফলে ৮ রান করা এই ব্যাটারকে ফিরে যেতে হয়। এরপর গুরবাজ ৬০ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নিলেও শহীদিকে থিতু হতে দেননি মুস্তাফিজ। তার বলে আউট সাইড এজ হয়ে স্লিপে সৌম্য সরকারের হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হন আফগান অধিনায়ক।
এরপরই মিরাজের বলে কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলেন গুরবাজ। তবে বলটি ওয়াইড হলেও স্টাম্পিং করতে পারেননি জাকের আলী। এই বল গ্লাভসেই নিতে পারেননি বাংলাদেশের এই উইকেটরক্ষক। এরপর আজমতউল্লাহ ওমরজাইকে নিয়ে প্রায় একশ রানের জুটি গড়েন গুরবাজ। এই জুটির পথে ১১৭ বলে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন গুরবাজ। এটি ওয়ানডেতে তার তৃতীয় সেঞ্চুরি। অবশ্য সেঞ্চুরির পর গুরবাজকে নিজের প্রথম শিকার বানান মিরাজ।
মিরাজের শর্ট অব লেন্থ ডেলিভারিতে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়িয়ে মেরেছিলেন গুরবাজ। তবে সীমানা ছাড়া করতে পারেননি। বল সোজা চলে যায় জাকির হাসানের হাতে। গুলবাদিন নাইব আউট হয়েছেন নাহিদ রানার বলে টপ এজ হয়ে উইকেটের পেছনে জাকের আলীকে ক্যাচ দিয়ে। অবশ্য একপ্রান্তে উইকেট হারালেও অন্যপ্রান্তে অবিচল ব্যাটিং করতে থাকেন ওমরজাই। তিনি ৫৭ বলে তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি।
এরপর তাকে সঙ্গ দিতে আসেন নবি। এরপর দুজনে মিলে বাংলাদেশের কাছ থেকে ম্যাচ ছিনিয়ে নেন। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ৫৮ রানের জুটিতে ১০ বল হাতে রেখেই জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আফগানিস্তান। শরিফুল ইসলামের হাফ ভলিতে ওয়াইড লং অন দিয়ে ছক্কা মেরে আফগানিস্তানকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন ওমরজাই। ওমরজাই ৭৭ বলে ৭০ ও ২৭ বলে ৩৪ রান করে নবি শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই উইকেট হারাতে পারতো বাংলাদেশ। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে ফজলহক ফারুকির অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে চেয়েছিলেন তানজিদ। এজ হয়ে প্রথম স্লিপে থাকা গুলবাদিনের হাতে ক্যাচ গেলেও সেটা লুফে নিতে পারেননি। চতুর্থ ওভারেও বাঁহাতি ওপেনারকে ফেরানোর সুযোগ ছিল আফগানিস্তানের সামনে। গাজানফারের বলে সুইপ করতে গিয়ে টপ এজ হয়ে ক্যাচ দিলেও শর্ট মিড উইকেট ক্যাচ ছেড়েছেন হাশমতউল্লাহ। জীবন পাওয়ার পর সৌম্যকে সঙ্গে নিয়ে এগিয়ে যেতে থাকেন তানজিদ।
তাদের দুজনের ব্যাটে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো উদ্বোধনী জুটিতে পঞ্চাশ পার করে বাংলাদেশ। যদিও ওমরজাইয়ের বলে চার মেরে জুটির পঞ্চাশ ছোঁয়ার ওভারে সাজঘরে ফিরেছেন সৌম্য। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পে পড়ে বেরিয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হয়েছেন তিনি। বাঁহাতি ওপেনারকে ফিরতে হয়েছে ২৪ রানে। আরেক ওপেনার তানজিদ জীবন পেয়েও সেটাকে কাজে লাগাতে পারেননি। নবির অফ স্টাম্পের বলে ড্রাইভ করার চেষ্টায় শর্ট মিড অফে থাকা হাশমতউল্লাহকে ক্যাচ দিয়েছেন ১৯ রান করা এই ব্যাটার।
নাজমুল হোসেন শান্তর চোটে একাদশে সুযোগ পাওয়া জাকিরও ফিরেছেন দ্রুতই। মিরাজের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউটে কাটা পড়তে হয়েছে তাকে। ওমরজাইয়ের লেংথ ডেলিভারিতে পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে রান নিতে চেয়েছিলেন মিরাজ। ডানহাতি ব্যাটারের ডাকে সাড়াও দিয়েছিলেন জাকির। তবে শেষ মুহূর্তে মিরাজ না করে দেয়ায় নন স্ট্রাইক প্রান্তে ফিরতে পারেননি জাকির। ফেরার আগে খারোটের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হয়েছেন ৪ রান করা তরুণ এই ব্যাটার। একটু পর আউট হয়েছেন হৃদয়ও। পুরো সিরিজে ব্যাট হাতে রানের দেখা না পাওয়া হৃদয় ফিরেছেন ৭ রান।
রশিদের অফ স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে একটু পিছিয়ে কাট করবেন নাকি ডিফেন্স করবেন এমন দ্বিধায় পড়ে এজ হয়ে স্লিপে থাকা গুলবাদিনকে ক্যাচ দিয়েছেন। ৭২ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মিরাজ ও মাহমুদউল্লাহ। তাদের দুজনের সাবলীল ব্যাটিংয়ে বিপদ কাটে বাংলাদেশের। মিরাজ একেবারে ধীরগতিতে খেললেও মাহমুদউল্লাহ ছিলেন ওয়ানডে মেজাজেই। দুজনে মিলে এদিন পেছনে ফেলেছেন ১৯৯৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে আমিনুল ইসলাম ও আকরাম খানের ৭২ রানের জুটিকে।
সবশেষ চার ম্যাচে ব্যাট হাতে রানের দেখা না পাওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে মাহমুদউল্লাহকে। ৬৩ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে ব্যাট হাতে সমালোচনার জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। একটু পর পঞ্চাশ ছুঁয়েছেন মিরাজও। ১০৬ বলে নিজের একশত ওয়ানডেতে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। যদিও হাফ সেঞ্চুরির একটু পরই ফিরেছেন সাজঘরে। ওমরজাইয়ের অফ স্টাম্পের বাইরের স্লোয়ার ডেলিভারিতে উড়িয়ে মারার চেষ্টায় গুলবাদিনের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন তিনি। মাহমুদউল্লাহকে উইকেটে রেখে ৬৬ রানের ইনিংস খেলে আউট হন মিরাজ। তার বিদায়ে ভাঙে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ১৪৫ রানের জুটি।
ডানহাতি ব্যাটার ফেরার পর দ্রুতই সাজঘরের পথে হেঁটেছেন জাকের আলী অনিক। ওমরজাইয়ের অফ স্টাম্পের বাইরের লেংথ ডেলিভারিতে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে গুরবাজের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়েছেন ১ রান। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ক্যামিও ইনিংস খেলা নাসুম আউট হয়েছেন ৫ রানে। শেষ ওভারে এসে সেঞ্চুরির সুযোগ ছিল মাহমুদউল্লাহর সামনে। তবে সুযোগটা লুফে নিতে পারেননি তিনি। শেষ বলে যখন ৯৭ রানে দাঁড়িয়ে তখন দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়েছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। মাহমুদউল্লাহকে থামতে হয় ৯৮ রানের লড়াকু ইনিংস খেলে। আফগানিস্তানের হয়ে চারটি উইকেট নিয়েছেন ওমরজাই।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ- ২৪৪/৮ (৫০ ওভার) (তানজিদ ১৯, সৌম্য ২৪, মিরাজ ৬৬, মাহমুদউল্লাহ ৯৮; ওমরজাই ৪/৩৭)
আফগানিস্তান- ১৪৬/৫ (৪৮.২ ওভার) ( গুরবাজ ১০১, সেদিকউল্লাহ ১৪, রহমত ৮, ওমরজাই ৭০*, নবি ৩৪/ নাহিদ ২/৪০, মুস্তাফিজ ২/৫০)