|| ডেস্ক রিপোর্ট ||
লাল মাটির উইকেটে খানিকটা ঘাস থাকায় পেসাররা বাড়তি সুবিধার সঙ্গে বাউন্স পাবেন এটা অনেকটা নিশ্চিতই ছিল। বাংলাদেশের পেসাররা পেয়েছেনও তাই। লাইন লেংথ বজায় রেখে ভারতকে চেপে ধরতে কাজটা করেছেন হাসান মাহমুদ। ডানহাতি পেসার সকালের শুরুতে লাগাম টেনেছেন রোহিত শর্মা, শুভমান গিল এবং বিরাট কোহলির। প্রথম সেশনের পর দ্বিতীয় সেশনেও ছিল সফরকারীদের দাপট। লোকেশ রাহুল যখন সাজঘরে ফিরলেন ভারতের রান তখন ৬ উইকেটে ১৪৪ রান।
এমন অবস্থা থেকে ভারত দ্রুত অল আউট হয়ে যাবে এমন ভাবনায় ব্যস্ত ছিলেন সবাই। তবে সবকিছু বদলে গেছে রবিন্দ্রন অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাদেজার কাউন্টার অ্যাটাকে। দিনের শেষ সেশনে বাংলাদেশের বোলাররা মনোযোগ হারিয়েছেন তাদের দুজনের পাল্টা আক্রমণে। ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি তুলে নেয়া অশ্বিন ১০২ এবং জাদেজা ৮৬ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। তাদের দুজনের ব্যাটে প্রথম দিন শেষে ভারতের সংগ্রহ ৬ উইকেটে ৩৩৯ রান।
চেন্নাইয়ে টস জিতে বোলিংয়ে নেমে শুরুটা দারুণ করেছিলেন বাংলাদেশের দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও হাসান। ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই সাফল্য পেতে পারত বাংলাদেশ। হাসানের করা গুড লেংথের বলে বিট হয়েছিলেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত। বল সোজা আঘাত করেছিল রোহিতের প্যাডে। অবশ্য বাংলাদেশের ফিল্ডারদের জোরালো আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। টাইগাররা রিভিউ নিলে দেখা যায় বল অফ স্টাম্পের বাইরে পিচ করে লাইনের মধ্যেই ইম্প্যাক্ট করেছিল।
উইকেটে হিটিংও করে বলের অল্প অংশ। তবে আম্পায়ার্স কলের কারণে বেঁচে যান রোহিত। অবশ্য পরের ওভারেই বোলিংয়ে এসে বাংলাদেশকে উইকেটের স্বাদ দিয়েছেন হাসান। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে রোহিত ক্যাচ দিয়েছেন স্লিপে শান্তর হাতে। ফলে শেষ হয়েছে রোহিতের ৬ রানের ইনিংস। এরপর ভারতের ইনিংস ধরতে ব্যাট করতে নামেন শুভমান গিল। এরপর আবারও বোলিং আক্রমণে এসে শুভমান গিলকেও আউট করেছেন হাসান। লেগ স্টাম্পের কাছ দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে লেগ সাইডে খেলতে গিয়ে এজ হয়ে লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়েছেন গিল।
এর ফলে রানের খাতাও খুলতে পারলেন না তিনি। হাসানের তৃতীয় শিকার হয়েছেন বিরাট কোহলি। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়েছেন ভারতীয় এই ব্যাটার। মাত্র ৬ রান করেই ফিরলেন তিনি। ইনিংসের শুরুতে অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কোহলির দুর্বলতা কারো অজানা নয়। সেই দুর্বলতা আবারও ফুটে উঠল বাংলাদেশের বিপক্ষে। প্রথম সেশনে ভারতকে আর কোনো বিপদ হতে দেননি জায়সাওয়াল ও ঋষভ পান্ত। দুজনে অপরাজিত থেকে ভারতকে মধ্যাহ্নভোজের বিরতি পর্যন্ত নিয়ে যান। প্রথম সেশনে মাত্র ২৩ ওভার খেলা হয়েছে।
৩ উইকেটে ৮৮ রান তোলে ভারত বিরতিতে যায়। তবে বিরতির আগের ওভারে ফিরতে পারতেন পান্ত। কিন্তু স্লিপে সুযোগ লুফে নিতে পারেননি সাদমান ইসলাম। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর ঋষভ পান্তকে সাজঘরে ফেরান হাসান। এই টাইগার পেসারের শর্ট অব লেংথ ডেলিভারিতে এজ হয়ে উইকেটের পেছনে লিটনে ক্যাচ দেন ৫২ বলে ৩৯ রান করা পান্ত। তাতে করে জায়সাওয়ালের সঙ্গে ৬২ রানের জুটি ভাঙে পান্তের। ভারতের চতুর্থ উইকেটের পতন হয়। ভারতীয় ব্যাটারদের আসা যাওয়ার মিছিলে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন জায়সাওয়াল।
তার সঙ্গে পঞ্চম উইকেটে জুটি বাধেন লোকেশ রাহুল। তাকে সঙ্গে নিয়েই টেস্টের ধ্রুপদী ব্যাটিংয়ে বাউন্ডারি মেরে ৯৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন জায়সাওয়াল। টেস্ট ক্যারিয়ারে এ নিয়ে পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরির দেখা পেলেন জায়সাওয়াল। যদিও তাকে ইনিংস বড় করতে দেননি নাহিদ রানা। দারুণ বল করলেও উইকেটের দেখা পাচ্ছিলেন না। নাহিদের লেংথ ডেলিভারির অফ সাইডের বাইরের বল খোঁচা দিয়ে স্লিপে সাদমান ইসলামকে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন। এরপর রাহুলকে ফিরিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
এই টাইগার স্পিনারের শর্ট লেগে দারুণ ক্যাচ নিয়েছেন জাকির হাসান। ফলে শেষ হয়েছেন রাহুলের ১৬ রানের ইনিংস। রাহুল ফিরে যাওয়ার পর ব্যাটিংয়ে এসে কাউন্টার অ্যাটাক করেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন এবং রবীন্দ্র জাদেজা। তাদের দুজনের ব্যাটেই শেষ পর্যন্ত চা বিরতিতে যায় ভারত। চা বিরতি থেকে ফেরার পরও নিজেদের ব্যাটিং কৌশলে খুব বেশি পরিবর্তন করেননি তারা দুজন। চেন্নাই টেস্টের প্রথম ইনিংসের ৫২ ওভার পেরিয়ে যাওয়ার পর প্রথমবারের মতো সাকিব আল হাসানের হাতে বল তুলে দেন নাজমুল হোসেন শান্ত।
সাকিবকে বোলিংয়ে পেতেই চড়াও হয়ে ওঠেন অশ্বিন ও জাদেজা। বাংলাদেশের স্পিনারের বিপক্ষে ওয়ানডে মেজাজে ব্যাটিং করতে থাকেন তারা দুজন। এদিন শুরু থেকেই আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করা অশ্বিন সাত চার এবং এক ছক্কায় ৫৮ বলে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন। টেস্টে ক্যারিয়ারে এটি তার ১৫ তম হাফ সেঞ্চুরি। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পরও দ্রুত রান তুলতে থাকেন অশ্বিন। নাহিদ রানা, হাসান মাহমুদ, সাকিব কিংবা মেহেদী হাসান মিরাজ, কেউই সুবিধা করতে পারেননি তাদের বিপক্ষে।
অশ্বিনকে সঙ্গ দিতে থাকা জাদেজাও হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ৭৩ বলে। তাদের দুজনের অবিচ্ছিন্ন শতরানের জুটিতে বাংলাদেশের লড়াই আরও কঠিন করে তুলছেন জাদেজা ও অশ্বিন। দিনের তৃতীয় সেশনে বাংলাদেশের বোলারদের পাত্তাই দেননি তারা। নব্বই পেরোনোর পর দ্রুতই সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন অশ্বিন। সাকিবের বলে মিড উইকেটে ঠেলে দিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেছেন ডানহাতি এই ব্যাটার। এটি তার ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরি। অশ্বিনের এমন ব্যাটিংয়ে আরও চাপে বাংলাদেশ।
সংক্ষিপ্ত স্কোর (প্রথম দিন শেষে)-
ভারত (প্রথম ইনিংস)- ৩৩৪/৬ (৭৮ ওভার) (জায়সাওয়াল ৫৬, রোহিত ৬, গিল ০, কোহলি ৬, পান্ত ৩৯, অশ্বিন ১০০*, জাদেজা ৮৩*; হাসান ৪/৫৮)