সাক্ষাৎকারে তানভির

বাংলাদেশের হয়ে খেলতে চান ইংল্যান্ড মাতানো লেগ স্পিনার

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 16:20 বুধবার, 23 মে, 2018

বাংলাদেশে জন্ম নিয়েও খেলছেন ইংল্যান্ডে। যেখানে আমাদের দেশে কোন পরিপক্ব লেগ স্পিনার নেই, সেই দেশে জন্ম নেয়া এক লেগ স্পিনার পাড়ি জমিয়েছেন ইংল্যান্ডে।

দেশের থেকে দূরে আছেন প্রায় ৮ বছর ধরে। সেখানে বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলে যাচ্ছেন তিনি। সেখানকার ক্লাবের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলারও সে।

তানভির হাসান সোহাগ নামের এই স্পিনার হতে পারতেন বাংলাদেশের সম্পদ। কিন্তু পড়াশোনার কারণে ইংল্যান্ডে গিয়েও ছাড়েননি ক্রিকেট। চালিয়ে যাচ্ছেন খেলা প্রতিনিয়ত।

শেন ওয়ার্নে অনুপ্রাণিত হয়ে লেগ স্পিন রপ্ত করেছেন। দেশের হয়ে এখনও খেলার স্বপ্ন দেখা এই তরুন গেল বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ছিলেন নেট বোলার। 

সেখানে অংশ নেয়া সব দলের সঙ্গেই ছিলেন তিনি। বল করেছেন কোহলি-ধোনিদের বিপক্ষে। লেগ স্পিন দিয়ে বোকা বানিয়েছেন ম্যাক্সওয়েলদের, উপদেশ নিয়েছেন ইমরান তাহির-আদিল রশিদের কাছ থেকে।

দেশের হয়ে খেলার স্বপ্ন দেখা এই স্পিনার সম্প্রতি কথা বলেছেন ক্রিকফ্রেঞ্জির সাথে। ক্রিকফ্রেঞ্জিকে জানিয়েছেন নিজের ইচ্ছা এবং কীর্তির কথা। পাঠকদের সুবিধার জন্য সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হল...

বাংলাদেশ ছেড়ে ইংল্যান্ডে কেন?

আসলে এখানে আসা মূলত পড়াশোনার জন্য। কিন্তু ছোট বেলা থেকেই ক্রিকেট অনেক পছন্দ করি তাই ক্রিকেটটা ছাড়তে পারিনি। তাই এখানে এসেও ক্রিকেট নিয়েই আছি আর ক্রিকেট নিয়েই থাকতে চাই। এখানে আছি ৮-৯ বছর ধরে। খেলে যাচ্ছি দেখি কতদূর যেতে পারি।

আরও কি বাংলাদেশীরা আছে ইংল্যান্ডে ক্লাব ক্রিকেট খেলছে?

অনেকেই আছে এখানে। এখানে জন্ম প্লাস বাংলাদেশ থেকেও এসেছে। কিন্তু তারা কোন ক্লাবে খেলেনা তারা ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলে থাকেন সাধারণত। তবে বাংলাদেশীদের সংখ্যা অনেক বেশি এখানে। আমি একাই বিভিন্ন ক্লাবের হয়ে খেলি, সাসেক্স, কেন্ট এবং কেভিন পিটারসেন ক্রিকেট একাডেমিতে ছিলাম অনেকদিন।

লেগ স্পিনই কেন?

ছোট বেলা থেকেই শেন ওয়ার্নকে খুব ফলো করতাম। সেখান থেকেই আসলে লেগ স্পিনার হয়ে ওঠার ইচ্ছা। প্রায় ১০ বছরের বেশী সময় ধরে লেগ স্পিন করছি। এখনও অনেক কিছু শেখা বাকি আছে। তারপরও চেষ্টা করে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।

গেল বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নেট বোলার ছিলেন, সেখানকার অভিজ্ঞতাটা যদি বলতেন?

আমি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময় সব দলের সঙ্গেই ছিলাম। ভারতের সঙ্গে থাকার সময় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের ম্যাচের আগে তারা লেগ স্পিনার খুঁজছিল। আমি ছিলাম একমাত্র লেগ স্পিনার। সেখান থেকে কোহলি, ধোনি, যুবরাজ এবং কেদার জাদভকে বোলিং করি।

এছাড়াও বাংলাদেশ টিমের সঙ্গে প্রথমে ছিলাম। রিয়াদ ভাই আমার বোলিংয়ের প্রশংসা করেছেন। সাকিব ভাই যাওয়ার সময় আমাকে এক জোড়া জুতো দিয়ে গিয়েছেন। এছাড়াও সোহান ভাইকে নেটে বল করার পর তিনি খুশি হয়ে আমাকে এক জোড়া গ্লাভস উপহার দিয়েছিলেন।

এছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুন্দর স্মৃতি আছে আমার। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল এবং অ্যাডাম জাম্পাকে বল করে বোল্ড করেছিলাম। ইংল্যান্ডের আদিল রশিদ, মইন আলি, এবং নিউজিল্যান্ডের ইশ সোদি, দক্ষিন আফ্রিকার ইমরান তাহির ভাই আমাকে অনেক টিপস দিয়েছে। যা পরবর্তীতে আমার অনেক কাজে এসেছে।

ইংল্যান্ডে যাওয়ার আগে কোথায় খেলতেন, আর বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য আপনাকে কেউ কিছু বলেনি?

আমি এখানে আসার আগে ইন্দিরা রোড ক্রিকেট একাডেমির হয়ে খেলতাম। সেখানে অনেক কয়েক বছর খেলেছি। সেখান থেকেই পরে এখানে চলে আসি। এখানে আসার পর এতো বছর ধরে খেলছি কিন্তু বাংলাদেশ থেকে কেউ কিছু বলেনি। তবে একাত্তর টিভি একটা ইন্টারভিউ নিয়েছিল চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সময়। সেখানেই অনেক কিছু বলেছিলাম আরকি। 

বাংলাদেশের ক্রিকেট সার্কিটে খেলতে চান কিনা?

পরের বছর বিপিএলের জন্য চেষ্টা করবো। যেহেতু আমাদের দেশে কোন লেগ স্পিনার নেই। এছাড়াও ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ বলেন বা বিসিএল বলেন এসব কিছুর খোঁজ রাখি তবে খেলার ইচ্ছা আছে। আর যেহেতু আমাদের দেশে কোন লেগ স্পিনার নেই। আমি চাই এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে। দেশের হয়ে খেলাটাই মূল লক্ষ্য।

ইংল্যান্ডে এখানে যে ক্লাবের হয়ে খেলি সেখানে টানা তিন বছর সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলাম এছাড়াও কেভিন পিটারসেন একাডেমিরও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলাম। তাই সব মিলিয়ে এই অভিজ্ঞতা গুলোই আমাকে ভবিষ্যতে কাজে দিবে আমি আশা করছি।

বাংলাদেশের কোন ক্রিকেটার আপনাকে অনুপ্রেরণা দেয়?

মাশরাফি ভাই বলেন সাকিব ভাই বলেন সবার থেকেই অনুপ্রেরণা পাই। ইচ্ছা আছে একদিন দেশের হয়ে তাদের সঙ্গে খেলার। সেই জন্যই চেষ্টা করছি নিজেকে পুরোদমে প্রস্তুত করতে।

ইংল্যান্ডে এত বছর আছেন, ইংল্যান্ডের হয়ে খেলার সুযোগ আছে কি?

আসলে এখানে অনেক প্রতিযোগীতা। বলতে গেলে ইংল্যান্ড দলে অনেক ভালো ভালো স্পিনার আছেন। তাই আমি এখানে খেলার চেয়ে দেশের হয়ে খেলতে চাই। এমনে চেষ্টা করেছিলাম এখানে সুযোগ বের করে নেয়ার কিন্তু পরে আর হয়নি।