ত্রিদেশীয় সিরিজ

'ভারতে যেমন শাহরুখ, আমাদের দেশে রশিদ'

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 10:46 শনিবার, 21 সেপ্টেম্বর, 2019

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে লড়াই চলছিল আফগানিস্তান এবং জিম্বাবুয়ের। জিম্বাবুয়ে দলপতি হ্যামিল্টন মাসাকাদজার বিদায়ী ম্যাচ, অথচ স্টেডিয়ামে দর্শকের উপস্থিতি তেমন নেই বললেই চলে। তবে বিদায়ী ম্যাচেও আগ্রাসী হ্যামিল্টন। আফগানিস্তানের বোলাররা কোন প্রকার পাত্তাই পাচ্ছেন না বিদায়ী ম্যাচ খেলতে নামা এই জিম্বাবুয়ে দলপতির কাছে।

হুট করে প্রেস বক্স থেকে চোখ বাকা করতেই নজরে আসলো একঝাক আফগান সমর্থককে, যাদের সকলেই নারী। ৮০-৯০ জনের মতো ঝাক বেঁধে হাজির হয়েছেন ক্লাব হাউজে, নিজ দেশকে সমর্থন দিতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেল, তারা সকলেই চট্টগ্রামে থাকেন। পড়াশোনার জন্য এসেছেন বাংলাদেশে।

এখানকার বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিবিএ, অর্থনীতি, কম্পিউটার সাইন্স সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে সম্পূর্ণ বৃত্তি নিয়ে পড়ছেন। ঘরের মাঠে আন্তর্জাতিক খেলা খেলা দেখার সুযোগ পান না আফগানিস্তানের সমর্থকরা। হোম ভেন্যু প্রথমে দুবাই-আবুধাবি হলেও এখন ভারতের দেরাদুন। তাই নিজ দেশের ক্রিকেটারদের একঝলক দেখার সুযোগ পেয়ে ছুটে এসেছেন তারা।

একজন ভক্তের সঙ্গে প্রথমে আলাপ করে জানা গেল, ক্রিকেট খুব বেশি দেখা হয় না তাদের। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ক্রিকেট খেলা দেখতে এসেছেন স্টেডিয়ামে। ফুটবল ম্যাচ নিয়মিত দেখা হয় তাদের। ক্রিকেট ভক্ত হিসেবে নয়, দেশের টানে ছুটে আসা হয়েছে স্টেডিয়ামে।

সাকিব আল হাসান তাদের দেশে বেশ জনপ্রিয় উল্লেখ করে সাবিরা নামের আফগান এই দর্শক বলেন, 'ক্রিকেটের জন্য নয়, দেশের টানে এসেছি। আমরা সবাই এখানকার বেসরকারী একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। রশিদ খান, মোহাম্মদ নবীরা আমাদের দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিকেটার। ভারতে যেমন শাহরুখ খান, আমাদের দেশে রশিদ খান।

স্টেডিয়ামে আসা হয় না সহজে, আজ সুযোগ পেয়ে ছুটে এসেছি। ফুটবল বেশি দেখা হয়, এই নিয়ে দ্বিতীয়বার স্টেডিয়ামে এলাম। আমাদের দেশের পশ্চিম অঞ্চল, কাবুলের দিকে ক্রিকেট বেশি জনপ্রিয়। সেখানকার মানুষ খেলাটাকে অনেক ভালোবাসে এবং উপভোগ করে। আমি বাংলাদেশের বেশি ক্রিকেটারকে না চিনলেও সাকিবকে চিনি। সে আমাদের দেশে ভালো জনপ্রিয়। রশিদ এবং সাকিব একসঙ্গে আইপিএল খেলেন।'

সাবিরাদের সঙ্গে আসা আরেক সমর্থক উজমার প্রত্যাশা, ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল জিতবে আফগানিস্তান। সেই সঙ্গে বাংলাদেশে থেকে অনেক উপভোগ করছেন তিনি। এখানকার পরিবেশ তাদের দেশ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।

উজমা বলেন, 'আমরা এখানেই পড়াশোনা করছি। আমার প্রিয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ নবী। রশিদ খানকে ঘরে ঘরে সকলেই চেনেন। বাংলাদেশে পরিবেশ অনেক সুন্দর, মানুষের ব্যবহার অনেক ভালো। এখানকার সঙ্গে আমাদের খাবারের অনেক পার্থক্য আছে। এই দেশের মানুষ অনেক ঝাল খেতে পছন্দ করে, যদিও আমার পছন্দ।' 

যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধীরে ধীরে উন্নতি করছে। ওয়ানডে এবং টেস্টের তুলনায় টি-টোয়েন্টি সংস্করণে তাদের উন্নতির ধারা চোখে পরার মতো। র‍্যাঙ্কিংয়ে ৭ নম্বরে আছে রশিদ খানের দল।

২০১১ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে খেলার সময় ওয়ানডে মর্যাদা পাওয়ার পায় আফগানিস্তান। এর দুই বছর পর দেশটি আইসিসির সহযোগী সদস্যপদ লাভ করে। চার বছর পর টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জন করে তারা। 

মাঝে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বেশ কয়েকবার অংশ নিয়েছে আফগানরা। ক্রিকেটে উন্নতির ধারা বজায় রাখলেও নিজ দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা হয় না আফগান দর্শকদের। তাই তো চট্টগ্রামে সুযোগ পেয়ে ছুটে এসেছেন দেশকে সমর্থন দিতে।