বিপিএল সমাচার

বিপিএল ফ্র্যাঞ্চাইজির বাউন্সারে পরাস্ত বিসিবি

শান্ত মাহমুদ

শান্ত মাহমুদ
প্রকাশের তারিখ: 10:55 শুক্রবার, 13 সেপ্টেম্বর, 2019

|| সিনিয়র ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট ||

দিনক্ষণ আগেই জানানো হয়েছিল। কোন কোন মাঠে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) খেলা হবে, সেটাও ঠিক করা ছিল। আগামী ৩ ডিসেম্বর উদ্বোধনী অনষ্ঠানের পর ৬ ডিসেম্বর শুরু হবে বিপিএলের মাঠের লড়াই- এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। 

ঘোষণার আগে থেকেই দল গোছানোর কাজ শুরু করে দেয় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো।  মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবালদের নতুন ঠিকানাও ঠিক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু সাকিব আল হাসান দল বদলাতেই টনক নড়ে ওঠে বিসিবির। তাড়াহুড়ো করে সংবাদ সম্মেলন ডেকে জানিয়ে দেয়া হয়, মুশফিক, তামিম, সাকিবদের চুক্তি বৈধ নয়। 

হঠাৎ এমন কথা কেন বিসিবি কর্তাদের মুখে? জানানো হলো, বিসিবির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেনি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। সেই হিসেবে বিপিএলে এখন তো কেনো দলই নেই, খেলোয়াড়দের সঙ্গে, চুক্তি হয় কীভাবে? বলা যায় হ য ব র ল একটা অবস্থা। কিন্তু এর মাঝেই ঘোষণা দেয়া হয় বিপিএলের সপ্তম আসর শুরুর। 

ঘোষণার পর প্রধান ইস্যুতে পরিণত হয় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে বিসিবির চুক্তির ব্যাপারটি। আলাদা আলাদাভাবে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে বিসিবি। কেমন ছিল সেই আলোচনা, সেটা বোঝা গেল বেশ কিছুদিন পর। বৈঠকে যে বিসিবিকে একটার পর একটা বাউন্সার দিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে হলেও সেটা মেনে নিতে হয়েছে বিসিবি সভাপতিকে।

ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর বাউন্সারে পুরোপুরি পরাস্ত বিসিবি। যে কারণে বিপিএলের চেহারাই পুরোপুরি বদলে যাচ্ছে। বিপিএল হয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু বিপিএল। থাকছে না কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। সব দলের মালিক বিসিবি। ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক, থাকা-খাওয়া সব নিশ্চিত করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে বিসিবি। এমনকি ক্রিকেটার বাছাই ও কোচিং স্টাফ নিয়োগ দেয়ার কাজটিও বিসিবিই করবে বলে জানানো হয়েছে। 

বিপিএলের যেসব পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে, সব কিছুর মূলে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর বেঁকে বসা। মোটা দাগে ভাবলে, এটাকে বিসিবির বড় ব্যর্থতাই বলতে হবে। তারা দলগুলোকে তাদের নতুন নিয়ম-নীতি দিয়ে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। যদিও এই ব্যর্থতা এড়িয়ে যেতে খুব একটা সমস্যা হয়নি বিসিবির নীতি নির্ধারকদের। বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে অনেক পরিবর্তনের কথা জানালেও ব্যর্থ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে কোনো প্রশ্ন শুনতে হয়নি বিসিবি সভাপতিকে।

প্রথম প্রভাবটা নামে, বঙ্গবন্ধু বিপিএল। অথচ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে আগামী বছর আলাদা টুর্নামেন্ট আয়োজন করার পরিকল্পনা আছে বিসিবির। যেখানে খেলার কথা বিশ্বের নামিদামি ক্রিকেটারদের। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর বেঁকে বসায় বিকল্প চিন্তা থেকে বিপিএলের নামে পরিবর্তন আনতে হয়তো একপ্রকার বাধ্য হয়েছে বিসিবি! যদিও এটাকে বিপিএল না বলে অন্য একটি নামের টুর্নামেন্ট বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত!

ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর কাছে যে বিসিবি পরাস্ত, সেটা নাজমুল হাসানের কথাতেই স্পষ্ট। বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর অনেক দাবি-দাওয়া আছে। ওদের চাওয়া পাওয়া আমাদের নিয়মের সঙ্গে মেলে না। আবার কিছু ফ্র্যাঞ্চাইজি আমাদের বলেছে, এই বছর দুটি বিপিএল হোক, এটা তারা চায় না। খেলবে না যে তা না। কিন্তু এতে ওদের ওপর চাপ বেশি হচ্ছে। সবকিছু চিন্তা করে আমরা দেখলাম, এবারের বিপিএল বিসিবি নিজেরাই চালাবে।’

টুর্নামেন্ট আয়োজন থেকে ‍শুরু করে পাড়ার টুর্নামেন্টের কমিটির মতো দল খেলানো, ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিক, খাওয়া-থাকা-যাতায়াতের সব দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেয়ায় সবাই নাকি খুশি হবেন বলে ধারণা বিসিবি সভাপতির। এতোটুকুই নয়, প্রতিটা দলের স্পন্সররের জন্যও দৌড়াদৌড়ি করবে বিসিবি। 

ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর দাবি না মেনে এত ঝামেলা কেন কাঁধে নিচ্ছে বিসিবি? এমন প্রশ্ন উঠেই যাচ্ছে, আর সেটা খুব স্বাভাবিকই। উত্তর জানতে বেশি কষ্ট করতে হবে না। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর দাবি দাওয়ার দিকে নজর দিলেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে। এসব দাবিই বিসিবিকে পিছু হটতে বাধ্য করেছে। 

নতুন চুক্তিতে যাওয়ার আগে বিসিবিকে প্রায় প্রতিটা ফ্র্যাঞ্চাইজিই তাদের ইচ্ছার কথা জানিয়েছে। দৃঢ় কণ্ঠেই বলেছে দাবি-দাওয়ার কথা। এর মধ্যে অন্যতম টুর্নামেন্টের লভ্যাংশ দাবি করা। এ ছাড়া ড্রাফটের বাইরে থেকে ক্রিকেটার নেয়া এবং পুরনো খেলোয়াড় ধরে রাখার ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট দাবি ছিল ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর।

এসব দাবির প্রত্যেকটি বিসিবির কাছে বাড়তি চাওয়া মনে হয়েছে। বিশেষ করে কোনোভাবেই লভ্যাংশ দিতে রাজি নয় দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। 

নাজমুল হাসান বলেছেন, ‘লভ্যাংশ বাটোয়ারা করা সম্ভব নয়। আমাদের ৮০ কোটি টাকা দিক, আমরা ৪০ কোটি দিয়ে দেব। দল বাবদ ৮ কোটি টাকা করে নেয়া হতো, সাত কোটি ছেড়ে দিয়েছি। আবার কী চায়। এখানে খেলার উন্নয়ন, খেলোয়াড়ের উন্নয়নের জন্য আসতে হবে। ব্যবসা করার জন্য নয়। এখানে সেই সুযোগ নেই।’

বিসিবি সভাপতি এমনও বলেছেন, ‘এবার থেকে আমরা যেটা করবো সেটা সবাইকে মানতে হবে।’ যদিও সেই মানার ব্যাপারটি দেখা যাচ্ছে না। বিসিবির দেখানো রাস্তা পছন্দ হয়নি বলেই বেঁকে বসেছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। আর এই বেঁকে বসাতেই বিপিএলের পরবর্তী আসরের ভাগ্য পড়ে গেছে ঘোর অন্ধকারের মধ্যে। যদিও বিসিবি বলছে, অন্ধকারে পড়ার মতো এখনো কিছু হয়নি! 

বিপিএলকে বলা হয় বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসর। জমজমাট যে শুধু ক্রিকেটের কারণে, তা নয়। বিতর্কের জন্ম দিতেও টি-টোয়েন্টি এই আসরের জুড়ি নেই। গত ছয় আসরের ধারাবাহিকতায় এবারও সমালোচনার বিভিন্ন প্লট তৈরি হয়ে গেছে এবং সেটা বেশ আগেই। আর এবারের বিতর্কের এতোটাই ঝাঁঝ যে, বিপিএল নামে কোনো আসরই মাঠে গড়াচ্ছে না।