অ্যাশেজ সিরিজ

অবিশ্বাস্য স্টোকসে ইংল্যান্ডের ইতিহাস

তামজিদুর রহমান

তামজিদুর রহমান
প্রকাশের তারিখ: 21:29 রবিবার, 25 আগস্ট, 2019

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয় একটি টেস্ট ম্যাচের সাক্ষী হয়ে থাকলো হেডিংলি। কারণ অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার দেয়া ৩৫৯ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে মাত্র ১ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয় তুলে নিয়েছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। আর এই জয়ের মূল নায়ক ছিলেন অলরাউন্ডার বেন স্টোকস।  

তাঁর অসামান্য বীরোচিত এক ইনিংসের কল্যাণেই পরাজয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছে স্বাগতিক ইংল্যান্ড। রেকর্ড জয়ের লক্ষ্যে শেষ উইকেটে জ্যাক লিচের সঙ্গে ৭৬ রানের জুটি গড়েন স্টোকস। যার মধ্যে তাঁর নিজের রানই ছিল ৭৪। ৮ ছয় এবং ১১ চারের সাহায্যে ১৩৫ রানে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন এই অলরাউন্ডার।   

অবশ্য ব্যতিক্রম ঘটনাও হতে পারতো। ইংল্যান্ড নয়, জয় পেতে পারতো অস্ট্রেলিয়াই। কেননা লাথান লায়নের করা ১২৫তম ওভারের শেষ বলটি স্লগ সুইপ করতে গিয়ে প্যাডে লাগে স্টোকসের। স্পষ্ট আউট থাকা সত্ত্বেও সেটি দেননি আম্পায়ার জোয়েল উইলসন। 

টিভি রিপ্লেতেও দেখা গেছে এটি এলবিডব্লিউ ছিল। সেসময় জয়ের জন্য ৬ রানের দরকার ছিল ইংল্যান্ডের। তবে অস্ট্রেলিয়ার হাতে কোনো রিভিউ না থাকায় শেষ পর্যন্ত আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হয়েছে।   

দলীয় ২৮৬ রানে ৯ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর হাত খুলে খেলা শুরু করেন স্টোকস। ওয়ানডে মেজাজে খেলে নিজের টেস্ট ক্যারিয়ারের অষ্টম সেঞ্চুরি তুলে নেন তিনি। অপর প্রান্তে থাকা লিচকে কম স্ট্রাইক দিয়ে নিজেই চড়াও হন অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের ওপর।   

আজ সকালে (চতুর্থ দিন) খেলতে নেমে শুরুতেই ৭৭ রান করে আউট হন অধিনায়ক জো রুট। এরপর জনি বেয়ারস্টো এবং বেন স্টোকসের ব্যাটে ভালোই এগিয়ে যাচ্ছিলো ইংল্যান্ড।  ৮৬ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটসম্যান। কিন্তু দলীয় ২৪৫ রানের সময় বেয়ারস্টোকে লাবুশানের হাতে ক্যাচ বানিয়ে সাজঘরে ফেরান হ্যাজেলউড। 

এরপর দলীয় ২৫৩ রানে জস বাটলার রান আউট হয়ে ফিরলে বিপদে পড়ে ইংল্যান্ড। দলের বিপর্যয় আরো বাড়িয়ে তোলে ক্রিস ওকস, জফরা আর্চার এবং স্ট্রুয়ার্ট ব্রডের বিদায়। নবম উইকেট হিসেবে যখন ব্রড ফিরে যাচ্ছিলেন তখন জয়ের আগাম উল্লাসই যেন করে রাখছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ক্রিজে যে তখনও ছিলেন স্টোকস! 

শেষ উইকেটে তাঁর দারুণ ব্যাটিংই রেকর্ড লক্ষ্য তাড়া করে জয় এনে দেয় ইংল্যান্ডকে। সর্বশেষ ১৯২৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩৩২ রান তাড়া করে জিতেছিল স্বাগতিকরা। আর আজকের ম্যাচের আগে এটাই ছিল তাদের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড। 

অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ৮৫ রান খরচায় ৪ উইকেট শিকার করেছেন পেসার জস হ্যাজেলউড। অপরদিকে স্পিনার নাথান লায়ন নিয়েছেন ১০৭ রানে ২ উইকেট। এছাড়াও একটি করে উইকেট পান প্যাট কামিন্স এবং জেমস প্যাটিনসন।

এর আগে ম্যাচটির প্রথম দিন টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ১৭৯ রানে অলআউট হয় অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ৪৫ রান খরচায় ৬ উইকেট শিকার করেন ইংল্যান্ডের ক্যারিবিয়ান বংশোদ্ভূত পেসার জফরা আর্চার।  

অস্ট্রেলিয়ার এই রানের জবাবে প্রথম ইনিংসে খেলতে নেমে মাত্র ৬৭ রানে গুঁটিয়ে যায় জো রুটের ইংল্যান্ড। তাদের ব্যাটিং লাইন আপে ধ্বস নামান পেসার হ্যাজেলউড। ৩০ রানে ৫ উইকেট নেন তিনি। এছাড়াও প্যাট কামিন্স পান ২৩ রানে ৩ উইকেট। এগিয়ে থেকে খেলতে নামার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৬ রানে গুঁটিয়ে যায় টিম পেইনের অস্ট্রেলিয়া। ফলে ইংল্যান্ডের সামনে ৩৫৯ রানের লক্ষ্য নির্ধারিত হয়। 

সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ 

অস্ট্রেলিয়া (প্রথম ইনিংস)- ১৭৯/১০ (৫২.১ ওভার) (লাবুশানে- ৭৪, ওয়ার্নার- ৬১; আর্চার-৬/৪৫, ব্রড-২/৩২) 

ইংল্যান্ডঃ (প্রথম ইনিংস)- ৬৭/১০ (২৭.৫ ওভার) (ডেনলি-১২, বার্নস-৯; হ্যাজেলউড-৫/৩০, কামিন্স-৩/২৩)

অস্ট্রেলিয়াঃ (দ্বিতীয় ইনিংস)- ২৪৬/১০ (৭৫.২ ওভার) (লাবুশানে-৮০, ওয়েড-৩৩; স্টোকস-৩/৫৬, আর্চার-২/৪০)

ইংল্যান্ডঃ (দ্বিতীয় ইনিংস)- ৩৬২/৯ (১২৫.৪ ওভার) (স্টোকস-১৩১*, রুট-৭৭; হ্যাজেলউড-৪/৮৫, লায়ন-২/১১৪)