বিশ্বকাপ ২০১৯

দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে শীর্ষে নিউজিল্যান্ড

তামজিদুর রহমান

তামজিদুর রহমান
প্রকাশের তারিখ: 01:11 বৃহস্পতিবার, 20 জুন, 2019

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের ২৫তম ম্যাচে ৪ উইকেটে পরাজিত হয়েছে ফাফ ডু প্লেসির দক্ষিণ আফ্রিকা। আর এই পরাজয়ের ফলে তাদের সেমিফাইনালে খেলার স্বপ্ন অনেকটাই ধুসর হয়ে গিয়েছে। অপরদিকে ৫ ম্যাচে ৪ জয় নিয়ে ইংল্যান্ডকে টপকে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে এসেছে নিউজিল্যান্ড। ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের জয়ের সংখ্যা সমান হলেও পয়েন্টের দিক থেকে এগিয়ে আছে কিউইরা। দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে তাদের পয়েন্ট বর্তমানে ৯। 

নিউজিল্যান্ডের আজকের এই জয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ১৩৮ বলে ১০৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে মাঠ ছেড়েছেন তিনি। হাঁকিয়েছেন ১টি ছয় এবং ৯টি চার। উইলিয়ামসনের অনবদ্য শতকের সুবাদে এদিন বার্মিংহ্যামের এজবাস্টনে দক্ষিণ আফ্রিকার ছুঁড়ে দেয়া ২৪১ রানের লক্ষ্য ৩ বল হাতে রেখে টপকে যায় নিউজিল্যান্ড।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য কিউইদের প্রয়োজন ছিল ৮ রান। আন্দাইল ফেহলুকায়োর করা সেই ওভারের প্রথম বলটি থেকে ১ রান নেন মিচেল স্যান্টনার। এরপর দ্বিতীয় বলে ছয় হাঁকিয়ে শতক তুলে নেন উইলিয়ামসন। এরপর তৃতীয় বলটিতে চার হাঁকিয়ে জয় তুলে নেন তিনি।  

কিউই দলপতিকে অবশ্য এদিন দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন অলরাউন্ডার কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম। ৪৭ বলে ৬০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন তিনি। যেখানে ছিল ২টি ছয় এবং ৫টি চার। এছাড়াও মার্টিন গাপটিল ৩৫ এবং জিমি নিশাম ২৩ রান করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে বল হাতে ১০ ওভারে ৪৯ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার করেছেন ক্রিস মরিস। আর ১টি করে উইকেট নিয়েছেন কাগিসো রাবাদা এবং আন্দাইল ফেহলুকায়ো। 

এর আগে ম্যাচটির শুরুতে বৃষ্টি বাঁধা দেওয়ায় টস হতে কিছুটা বিলম্বিত হয়েছিল। ফলে দুই দলের ইনিংস থেকে এক ওভার করে কমিয়ে খেলা শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন আম্পায়াররা। এরপর টসে জিতে শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ব্যাটিংয়ে আমন্ত্রণ জানান কিউই দলপতি উইলিয়ামসন।

নিউজিল্যান্ডের আমন্ত্রণে খেলতে নেমে মাত্র ৯ রান তুলতেই কুইন্টন ডি ককের উইকেটটি হারিয়ে বিপাকে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। ট্রেন্ট বোল্টের বলে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে মাত্র ৫ রান করেন তিনি। দলীয় ৫৯ রানের মাথায় প্রোটিয়া শিবিরে আঘাত হানেন লকি ফার্গুসন। ডানহাতি এই পেসারের বলে বোল্ড হন প্রোটিয়া অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসি। 

২৩ রান করে ডু প্লেসি ফিরলে এইডেন মার্করামকে সাথে নিয়ে ৫২ রানের জুটি গড়েন ওপেনার হাশিম আমলা। কিন্তু দলীয় ১১১ রানের মাথায় আমলাকে আউট করে ব্রেক থ্রু এনে দেন কিউই স্পিনার মিচেল স্যান্টনার। ৫৫ রান করা আমলার বিদায়ের পর দ্রুত ফিরতে হয় মার্করামকেও। কলিন মুনরোর হাতে ক্যাচ বানিয়ে তাঁকে নিজের প্রথম শিকারে পরিণত করেন গ্র্যান্ডহোম।

পঞ্চম উইকেটে রাসি ভ্যান ডার ডুসেন এবং ডেভিড মিলার ৭২ রানের জুটি গড়ে দলকে কিছুটা বিপদমুক্ত করেছিলেন। ২০৮ রানের সময় ৩৬ রান করা মিলারকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙ্গেন লকি ফার্গুসন। পরবর্তীতে আর বেশিদূর এগোতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ পর্যন্ত ৬ উইকেটে ২৪১ রান নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে তাদের। ভ্যান ডার ডুসেন সর্বোচ্চ ৬৭ রান করেছেন।  

নিউজিল্যান্ডের পক্ষে ৫৯ রানে ৩ উইকেট শিকার করা ফার্গুসন ছিলেন সবথেকে সফল বোলার। এছাড়াও ১টি করে উইকেট পেয়েছেন গ্র্যান্ডহোম, স্যান্টনার এবং বোল্ট। ২৪২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে মাত্র ১২ রানের মাথায় কলিন মুনরোকে ফিরিয়ে দিয়ে ব্রেক থ্রু এনে দিয়েছিলেন প্রোটিয়া পেসার রাবাদা। 

৯ রান করা মুনরোর বিদায়ের পর দ্বিতীয় উইকেটে ৬০ রানের জুটি গড়েন অধিনায়ক উইলিয়ামসন এবং ওপেনার মার্টিন গাপটিল। ফেহলুকায়োর বলে হিট উইকেটের শিকার হয়ে ফেরার আগে গাপটিলের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৫ রান। 

গাপটিল আউট হওয়ার পর শত রানের কোটা পার করার আগে আরো দুই উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে নিউজিল্যান্ড। তবে সেসময় জিমি নিশামের সাথে পঞ্চম উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে উইলিয়ামসন। ২৩ রান করা নিশাম আমলার হাতে ক্যাচ বানিয়ে এই জুটি ভাঙ্গেন মরিস। এরপরই গ্র্যান্ডহোম এবং উইলিয়ামসনের ব্যাটে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ায় কিউইরা।

৯১ রানের দারুণ একটি জুটি গড়ে দলকে জয়ের বেশ কাছে নিয়ে যান তারা। কিন্তু ৪৮ তম ওভারের প্রথম বলে গ্র্যান্ডহোমকে ফিরিয়ে ম্যাচের উত্তেজনা ফিরিয়ে আনেন লুঙ্গি এনগিদি। ৬০ রান করে আউট হওয়া এই কিউই অলরাউন্ডারের বিদায়ের পর জয়ের সম্ভাবনা জিইয়ে ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। তবে অধিনায়ক উইলিয়ামসন আর সেটি হতে দেননি। ১০৬ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয় এনে দিয়ে তবেই মাঠ ছেড়েছেন তিনি। তাঁর সঙ্গী হিসেবে ২ রানে অপরাজিত ছিলেন মিচেল স্যান্টনার। 

সংক্ষিপ্ত স্কোরঃ 

দক্ষিণ আফ্রিকাঃ ২৪১/৬ (৪৯ ওভার) (ডুসেন-৬৭, আমলা-৫৫; ফার্গুসন-৩/৫৯, স্যান্টনার-১/৪৫) 

নিউজিল্যান্ডঃ ২৪৪/৬ (৪৮.৩ ওভার) (উইলিয়ামসন-১০৬*, গ্র্যান্ডহোম-৬০; মরিস-৩/৪৯, রাবাদা-১/৪২)