বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপ দল পরিচিতিঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজ

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 15:51 শুক্রবার, 24 মে, 2019

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

ক্রিকেট ইতিহাসের চতুর্থ টেস্ট খেলুড়ে দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯২৬ সালে ইম্পেরিয়াল ক্রিকেট কনফারেন্সে যোগ দেয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট মর্যাদা পায় ১৯২৮ সালে। ফ্র্যাঙ্ক ওয়ারেল, ক্লাউড  ওয়ালকট, এভারটন উইকসের পর গ্যারি সোবার্সের মত উইন্ডিজ ক্রিকেটাররা মেরুন ক্যাপ পরে দুনিয়া কাঁপিয়েছেন। তবে সত্তরের দশকে এসে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে।

প্রথমে ক্লাইভ লয়েড ও পরবর্তীতে ভিভ রিচার্ডসের নেতৃত্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দীর্ঘদিন ক্রিকেট বিশ্ব শাসন করেছে। ক্রিকেট দুনিয়াকে আগ্রাসী এবং দৃষ্টিনন্দন ক্রিকেটের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে ক্যারিবিয়রা। তবে ৯০’র দশকে এসে ক্যারিবিয় ক্রিকেটের স্বর্ণযুগের সমাপ্তি ঘটে। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটের আবির্ভাবের পর ক্যারিবিয়ান ক্রিকেট প্রাণ ফিরে পেলেও ওয়ানডে ও টেস্টে নাজুক অবস্থায় আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বর্তমানে ওয়ানডে র‍্যাঙ্কিংয়ে অষ্টম অবস্থানে আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টেস্ট ও টি-টুয়েন্টিতে যথাক্রমে অষ্টম ও নবম অবস্থানে আছে ক্যারিবিয়রা।

ক্রিকেট বিশ্বকাপ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের উত্থান হয় প্রায় হাত ধরাধরি করে। ১৯৭৫ ও ১৯৭৯ সালের প্রথম দুই বিশ্বকাপ দাপট দেখিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ১৯৮৩ বিশ্বকাপও জেতার সুযোগ সৃষ্টি করেছিল ভিভ রিচার্ডসরা, কিন্তু কপিল দেবের ভারতের কাছে তালগোল পাকিয়ে হেরে বসে ক্যারিবিয়রা। এরপর থেকে উইন্ডিজ ক্রিকেটে ভাটা নামে। এরপরের দশ বিশ্বকাপে একবারও ফাইনালে উঠতে পারেনি। এবারের বিশ্বকাপের আগে জেসন হোল্ডারের উইন্ডিজ দলের বর্তমান ফর্ম আশা জাগাচ্ছে ক্যারিবিয় সমর্থকদের। সম্প্রতি ঘরের মাঠে বিশ্বের এক নম্বর দল ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে তাঁরা।

বিশ্বকাপে উইন্ডিজের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা তাদের ব্যাটিং। ক্রিস গেইল, শেই হোপ, শিমরন হেটমায়ার, আন্দ্রে রাসেলের বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানরা একা হাতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।

ব্যাটিংয়ের মতন শক্তিশালী নয় উইন্ডিজের বোলিং আক্রমণ। কিমার রোচ, শেলডন কট্রেল, শ্যানন গ্যাব্রিয়েলদের মত পেসার থাকলে ওয়ানডে ক্রিকেটে তাক লাগানোর মত পারফর্মেন্স নেই কারোই। স্পিন আক্রমণও বিশ্বমানের নয়। ফ্যাবিয়ান অ্যালান, অ্যাশলে নার্সরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সদ্য পা রেখেছেন।

উইন্ডিজের স্কোয়াড বিশ্লেষণ -

ক্রিস গেইলঃ ৩৯ বছর বয়সী ক্রিস গেইল এবারের বিশ্বকাপ দিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেট ছাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তবে ঘরের মাঠে বিশ্ব সেরা দল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে দুটি সেঞ্চুরি ও দুটি ফিফটি হাঁকিয়েছেন, বিশ্বকাপের আগে বিশ্বকে বার্তা দিয়েছেন, তিনি এখনো ফুরিয়ে যান নি। একই সিরিজে ওয়ানডে ক্রিকেটে দশ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা গেইলের চোখ থাকবে বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে।

শাই হোপঃ ২৫ বছর বয়সী শাই হোপ উইন্ডিজ ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ তারকাদের একজন। মাত্র ৫৩ ওয়ানডে খেলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই তরুণ উইকেট কিপার ব্যাটসম্যান। ৫০ গড়ে দুই হাজার রান করে ফেলেছেন ছোট্ট ক্যারিয়ারের, ছোট্ট ক্যারিয়ারে হোপের সেঞ্চুরি সংখ্যা ছয়টি। বিশ্বকাপে সারা বিশ্বের চোখ থাকবে এই তরুণ ক্রিকেটারের দিকে।

আন্দ্রে রাসেলঃ উইন্ডিজ দলের সবচেয়ে বড় শক্তির নাম আন্দ্রে রাসেল। ব্যাটে-বলে প্রতিপক্ষের বুকে কাঁপুনি ধরিয়ে দিতে অভ্যস্ত তিনি। টি-টুয়েন্টি লীগ দিয়ে দর্শকদের মনে জায়গা করে নিলেও ৫০ ওভারের ক্রিকেটে রাসেলের প্রমাণের আছে অনেক কিছু। এবারের বিশ্বকাপ হতে পারে রাসেলের জন্য নিজেকে প্রমাণের যোগ্য মঞ্চ।

শিমরন হেটমায়ারঃ শাই হোপের মত ছোট্ট ক্যারিয়ারে তাক লাগানো পারফর্মেন্স দিয়ে আসছেন শিমরন হেটমায়ার। মাত্র ২৫ ওয়ানডে খেলে ৪০ গড়ে ৮৯৯ রানের মালিক বনে গেছেন তিনি। ইতিমধ্যে চারটি ওয়ানডে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন তিনি। সবচেয়ে নজরকাড়া বিষয় হচ্ছে হেটমায়ারের স্ট্রাইক রেট, ১১০ স্ট্রাইক রেটে রান তুলে আসছেন ২০১৮ সালে অভিষেকের পর থেকেই।

শেলডন কোট্রেলঃ খুব অল্প সময়ে উইন্ডিজ বোলিং আক্রমণকে নেতৃত্ব দেয়া শুরু করেছেন বাঁহাতি ফাস্ট বোলার শেলডন কোট্রেল। মাত্র ১৪ ম্যাচ খেলে ১৭ উইকেট নিয়েছেন তিনি। নতুন বলে ডানহাতি ব্যাটসম্যানদের ইন সুইং ডেলিভারিতে পরাস্ত করতে পটু কোট্রেল বিশ্বকাপে উইন্ডিজ বোলিং আক্রমণের অন্যতম শক্তির দিক।

জেসন হোল্ডার (অধিনায়ক): ২০১৪ সালে উইন্ডিজ দলের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই নতুন করে ক্যারিবিয় ক্রিকেটকে পথ দেখাতে শুরু করেন হোল্ডার। তাঁর অধীনে টেস্টের পর ওয়ানডে ক্রিকেটেও উন্নতির হাওয়া লেগেছে। বিশ্বকাপে ব্যাটে বলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সাথে অধিনায়কত্বের গুরু দায়িত্ব সামলাতে হবে হোল্ডারকে। এখন পর্যন্ত ৯৫ ম্যাচ খেলে ১৫৭৪ রান করেছেন তিনি, স্ট্রাইক রেট প্রায় একশ ছুঁই ছুঁই। নামের উইকেট আছে ১২১টি। ইতিমধ্যে দুইবার পাঁচ উইকেট ও চারবার চার উইকেট পেয়েছেন তিনি।

এভিন লুইসঃ বিধ্বংসী ওপেনার এভিন লুইস এখন পর্যন্ত ৩৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। ৮২ স্ট্রাইক রেট ও ৩২ গড়ে এক হাজার রানের মালিক তিনি। ইনজুরির কারণে নিয়মিত একাদশে জায়গা না পেলেও বিশ্বকাপ স্কোয়াডে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ক্রিস গেইলের সাথে উইন্ডিজ টপ অর্ডার সামলানোর দায়িত্ব বর্তাবে এভিন লুইসের ওপর।

কার্লোস ব্র্যাথওয়েটঃ ২০১৬ সালের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক কার্লোস ব্র্যাথওয়েট বিশ্বকাপ স্কোয়াডে আন্দ্রে রাসেলের ব্যাক আপ হিসেবে থাকবেন। মূল একাদশে আন্দ্রে রাসেল ও কার্লোস ব্র্যাথওয়েটকে একই দলে দেখা নাও যেতে পারে। তবে নিজের দিনে অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলার সামর্থ্য রাখেন এই দীর্ঘদেহী অলরাউন্ডার।

ড্যারেন ব্রাভোঃ উইন্ডিজ ব্যাটিং অর্ডারের আঠা বলা যায় ড্যারেন ব্রাভো। ১০৭ ওয়ানডে খেলা এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান প্রান্ত বদল করে খেলার জন্য পরিচিত। হার্ড হিটারে ভরা উইন্ডিজ ব্যাটিং অর্ডার আগলে রাখায় দায়িত্ব পালন করতে দেখা যাবে ব্রাভোকে। এখন পর্যন্ত ওয়ানডে ক্রিকেটে ২৮২০ রানের মালিক ব্রাভোর নামের পাশে তিনটি সেঞ্চুরি ও ১৮টি ফিফটি আছে।

নিকোলাস পুরানঃ তরুণ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নিকোলাস পুরান এখন পর্যন্ত মাত্র একটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টি খেলেছেন ১১টি। তবে বিশ্ব জুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগ গুলোতে নিজের সামর্থ্যের স্বাক্ষর রেখেছেন ২৩ বছর বয়সী এই বাঁহাতি হার্ড হিটার। বিদ্যুৎগতির ফিল্ডিং এর জন্যও পরিচিতি পেয়েছেন তিনি। বিশ্বকাপে উইন্ডিজ দলের মূল একাদশে থাকলে নিজেকে চেনাতে চাইবেন পুরান।

অ্যাশলে নার্সঃ উইন্ডিজ স্কোয়াডে বিশেষজ্ঞ স্পিনারদের মধ্যে একজন হচ্ছেন অ্যাশলে নার্স। অফ স্পিন দিয়ে ৫০ ম্যাচ খেলে ৪৯ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। স্পিনে নির্ভরশীল নন তিনি, বরং গতির বৈচিত্র্য এনে প্রতিপক্ষকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেন তিনি।

কিমার রোচঃ ৮৫ ওয়ানডে ম্যাচে ১১৭ উইকেটের মালিক কিমার রোচ গত দুই বছরে নিজেকে সম্পূর্ণ বদলে ফেলেছেন। গতি কমিয়ে সুইং এর ওপর জোর দিয়ে সফল হয়েছেন তিনি। ইংল্যান্ডের কন্ডিশনে নতুন বলে ম্যাচের গতিপথ ঠিক করে দেয়ার দায়িত্ব সামলাতে হবে রোচকে।

ওশানে থমাসঃ ২২ বছর বয়সী তরুণ ফাস্ট বোলার ওশানে থমাস ছোট্ট অল্প সময়েই গতির ঝড় তুলে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। মাত্র ৯টি ওয়ানডে খেলা এই দীর্ঘদেহী ফাস্ট বোলার ১৫ উইকেট শিকার করেছেন। নিয়মিত ১৫০ কিলোমিটার বেগে বল সক্ষম তিনি। গতির ঝড় তুলে প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের বুকে কাঁপুনি ধরাতে সক্ষম তিনি। বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে থমাস হতে পারেন ক্যারিবিয়দের বড় অস্ত্র।

ফ্যাবিয়ান অ্যালেনঃ উইন্ডিজ স্কোয়াডের দ্বিতীয় স্পিনারের নাম ফ্যাবিয়ান অ্যালেন। ৭ ম্যাচ খেলা এই বাঁহাতি স্পিনারের সাথে অফ স্পিনার অ্যাশলে নার্সের একাদশে জায়গা করে নেয়া নিয়ে লড়াই করতে হবে। অভিজ্ঞতার দিক থেকে নার্স এগিয়ে থাকলেও বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে কোনো কোনো ম্যাচে প্রাধান্য পেতে পারেন অ্যালেন।

শ্যানন গ্যাব্রিয়েলঃ শ্যানন গ্যাব্রিয়েল টেস্টের নিয়মিত বোলার হলেও ওয়ানডে ক্রিকেটে নিয়মিত ছিলেন না কখনই। সম্প্রতি আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের স্কোয়াডে জায়গা করে নেন তিনি। তবে পারফর্মেন্স খুব একটা ভালো ছিল না। বিশ্বকাপে মূল একাদশে জায়গা করে নিতে হলে যথেষ্ট লড়াই করতে হবে ২২ ওয়ানডে খেলা ফাস্ট বোলার গ্যাব্রিয়েল।