বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপ দল পরিচিতিঃ পাকিস্তান

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 10:50 বুধবার, 22 মে, 2019

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

পাকিস্তান ক্রিকেটের চিরকালীন অনিশ্চয়তার ছাপ পড়েছে বিশ্বকাপেও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৬৪ রানে পরাজিত হওয়ার কারণে প্রথম বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলা হয়নি পাকিস্তানের। পরের আসরেও সেমিফাইনালের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায় ক্যারিবিয়রা। ১৯৮৩ ও ১৯৮৭’র বিশ্বকাপে শেষ চারে জায়গা করে নেয়া পাকিস্তান ১৯৯২ সালে এসে ইমরান খানের নেতৃত্ব শিরোপা জয় করে। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের সেরা দল ছিল পাকিস্তান। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কাছে ফাইনালে হেরে বসে ওয়াসিম আকরামের দল। চরমভাবে ব্যর্থ হয় ২০০৩ বিশ্বকাপেও। ২০১১ সালে এসে ফের শেষ চারে জায়গা করে নেয় পাকিস্তান। কিন্তু ভারতের কাছে এসে ফাইনালের আশা ধূলিসাৎ হয় শহীদ আফ্রিদির পাকিস্তানের। ২০১৫ সালে কোয়ার্টার ফাইনালে এসে থামে পাকিস্তান, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টানটান উত্তেজনার ম্যাচে হারতে হয় তাদের। ২০১৯ সালের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের আগে ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সুখস্মৃতি প্রত্যাশা বাড়াচ্ছে পাকিস্তানি সমর্থকদের।

বর্তমান পাকিস্তান দলের শক্তির জায়গা বরাবরের মতই বোলিং। মোহাম্মদ আমির, ওয়াহাব রিয়াজ, সাদাব খানদের নিয়ে গড়া বোলিং আক্রমণ যে কোনো দলের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। সাথে তরুণ শাহিন শাহ আফ্রিদি ও মোহাম্মদ হাসনাইনের মত ফাস্ট বোলাররা আছে। সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ড সিরিজে পাকিস্তানি বোলারদের বাজে সময় কাটলেও দলে ছিলেন না আমির, ওয়াহাব ও সাদাব খানরা। বিশ্বকাপের মত বড় আসরে নিজেদের সেরা পারফর্মেন্সটা জমা রাখতে চাইবেন পাক ফ্রন্ট লাইন বোলাররা।

ইংল্যান্ড সিরিজে পাক ব্যাটসম্যানরা বড় রান পেলেও চাপের মুখে ভেঙ্গে পড়ার যথেষ্ট উদাহরণ আছে তাদের। বড় আসরে ব্যাটসম্যানরা ভালো পারফর্ম করলে দল হিসেবে ভালো করার সুযোগ থাকবে পাকিস্তানের।

পাকিস্তানের স্কোয়াড বিশ্লেষণ -

ফখর জামানঃ ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন ফখর জামান। গত বছর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ওয়ানডেতে দ্বিশতক হাঁকিয়েছেন তিনি। ওয়ানডেতে ৯৭ স্ট্রাইক রেটের সাথে ফখরের ব্যাটিং গড় প্রায় ৫৪। বিশ্বকাপের মত আসরে পাকিস্তানকে বড় উড়ন্ত সূচনা এনে দেয়ার দায়িত্ব থাকবে ফখরের ওপর।

বাবর আজমঃ পাকিস্তান দলের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যানদের একজন বাবর আজম। টি-টুয়েন্টি র‍্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বরে থাকলেও ওয়ানডেতে এখনো নিজের সামর্থ্যের সবটুকু প্রদর্শন করতে পারেন নি তিনি। আসন্ন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপই হতে পারে বাবরের জন্য সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম।

শোয়েব মালিকঃ বর্তমান পাকিস্তান দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার শোয়েব মালিক। এবারের বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলের মিডেল অর্ডারের দায়িত্বভার সামলাতে হবে তাঁকেই। নিজের শেষ বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন মালিক।

সরফরাজ আহমেদঃ ২০১৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তান দলের নেতৃত্বে থাকছেন সরফরাজ আহমেদ। সরফরাজ অধীনে দুই বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করেছিল পাকিস্তান। অধিনায়কত্বের সাথে উইকেটের পেছনে দায়িত্ব সামলানো ছাড়াও পাকিস্তান ব্যাটিং অর্ডারকে আগলে রাখতে হবে সরফরাজকে।

হাসান আলিঃ ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে পাকিস্তানের শিরোপা জয়ের পেছনে বড় অবদান রেখেছেন হাসান আলি। ৫ ম্যাচে ১৩ উইকেট শিকার করে আসরের সেরা বোলার নির্বাচিত হন তিনি। সম্প্রতি সময়ে বল হাতে তেমন ফর্মে না থাকলেও বিশ্বকাপে তাঁর উপরেই আস্থা রাখবে পাকিস্তান।

আসিফ আলিঃ মাত্র ১৬ ওয়ানডে খেলা আসিফ আলি ছোট্ট ক্যারিয়ারে বিগ হিটার তকমা পেয়ে গেছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে আসিফ আলির স্ট্রাইক রেট ১৩১। সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ড সিরিজে দুটি ঝড়ো ফিফটি হাঁকিয়েছেন তিনি। লোয়ার অর্ডারে দ্রুত রান তোলার জন্য আসিফ আলিকে ব্যবহার করবে পাকিস্তান।

ওয়াহাব রিয়াজঃ বিশ্বকাপের প্রাথমিক দলে ছিলেন না ওয়াহাব রিয়াজ। তবে ইংল্যান্ড সিরিজে ফাহিম আশরাফের বোলিং সন্তোষজনক না হওয়ায় দলে ফিরেছেন ঘরোয়া ক্রিকেটে ফর্মে থাকা ওয়াহাব রিয়াজ। গত পিএসএলে ১৩ ম্যাচ খেলে ১৭ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। বিশেষ করে ওয়াহাবের ডেথ ওভারের বোলিং ছিল চোখে পড়ার মতন। ২০১৫ বিশ্বকাপে আগুনঝরা বোলিং করা রিয়াজ ২০১৯ বিশ্বকাপকেও স্মরণীয় করতে চাইবে।

হারিস সোহেলঃ মিডেল অর্ডারে শোয়েব মালিকের জায়গায় সুযোগ পেতে পারেন হারিস সোহেল। ৩৪ ওয়ানডে খেলে ১৩২০ রানের মালিক তিনি। ৪৭ গড় ও ৮৩ স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করে আসছেন তিনি। সম্প্রতি ইংল্যান্ড সিরিজেও বেশ কিছু ভালো ইনিংস খেলেছেন তিনি। দলের বিপদে উইকেটে থিতু হয়ে ব্যাটিং করার সামর্থ্য রাখেন এই বাঁহাতি।

ইমাদ ওয়াসিমঃ স্পিন বোলিং অলরাউন্ডার ইমাদ ওয়াসিমকে মূল একাদশে জায়গা করে নিতে লড়তে হবে সাদাব খানের সাথে। ব্যাটে বলে কার্যকরী এই ক্রিকেটার লোয়ার অর্ডারে দ্রুত রান তোলার দায়িত্বে থাকবেন। বাঁহাতি স্পিনে খুব একটা স্পিন না ধরলেও যথেষ্ট স্কিডি বোলার তিনি। ফ্ল্যাট উইকেটে এই ধরনের বোলার যথেষ্ট কার্যকরী। সাম্প্রতিক সময়ে ফর্মে না থাকলেও ৪৬ ওয়ানডে খেলা ওয়াসিমে আস্থা রাখবে পাকিস্তান।

ইমাম-উল-হকঃ ২৩ বছর বয়সী বাঁহাতি ওপেনার ইমাম উল হক আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে উড়ন্ত সূচনা করেছেন। ২৮ ম্যাচ খেলে ইতিমধ্যে ছয়টি সেঞ্চুরি ও পাঁচটি ফিফটি হাঁকিয়েছেন তিনি। আঁটসাঁট টেকনিকের জন্য পরিচিত ইমাম বিশ্বকাপের আগে দারুণ ফর্মে আছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সদ্য সমাপ্ত সিরিজে ১৫১ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি।

মোহাম্মদ আমিরঃ সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিশ্বকাপ একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন মোহাম্মদ আমির। গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ফর্ম হারিয়ে দল থেকে বাদ পড়েন তিনি। বিশ্বকাপের প্রাথমিক স্কোয়াডেও সুযোগ পান নি তিনি। তবে আবিদ আলির পারফর্মেন্স মনঃপুত না হওয়ায় কপাল খুলেছে আমিরের। প্রথমবারের বিশ্বকাপ খেলতে নামা আমিরের জন্য এবারের বিশ্বকাপ একরকম বাঁচা মরার লড়াই হতে যাচ্ছে। ক্যারিয়ার বাঁচাতে হলে বিশ্বকাপে অবিশ্বাস্য কিছু করে দেখাতেই হবে তাঁকে।

মোহাম্মদ হাফিজঃ এখন পর্যন্ত ২১০ ওয়ানডে খেলা মোহাম্মদ হাফিজের জন্য এটাই শেষ বিশ্বকাপ। দলে সুযোগ পেলে মিডেল অর্ডারের দায়িত্ব সামলাবেন তিনি। ইংলিশ সিরিজে দুই ম্যাচ খেলে একটি ফিফটি হাঁকিয়েছেন তিনি। ফর্মে থাকা হাফিজ বিশ্বকাপে কেমন করে, সেটাই দেখার বিষয়।

মোহাম্মদ হাসনাইনঃ পিএসএলে গতির ঝড় তুলে বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নিয়েছেন ১৯ বছর বয়সী তরুণ। ১৫০ কিলোমিটার বেগে বল করতে সক্ষম এই তরুণ সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছেন। পাঁচ ম্যাচ খেলে পাঁচ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। বিশ্বকাপ দলে পাক দলের চমক হতে পারেন তিনি।

সাদাব খানঃ ইনজুরি কাটিয়ে বিশ্বকাপ দলের সাথে যোগ দিয়েছেন ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পারফর্ম করা সাদাব খান। মাত্র ২০ বছর বয়সে পাকিস্তান দলের বোলিং আক্রমণের অন্যতম হাতিয়ারে পরিণত হয়েছেন তিনি। ৩৪ ম্যাচে ৪৭ উইকেট নেয়া সাদাব খান মিডেল ওভারে রান আটকে উইকেট নেয়ার দায়িত্ব সামলাবেন।

শাহিন শাহ আফ্রিদিঃ তরুণ পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদি এখন পর্যন্ত ১৪ ম্যাচ খেলে ২৪ উইকেট শিকার করেছেন। ছোট্ট ক্যারিয়ারে ইতিমধ্যে তিনবার চার উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজেও চার উইকেট শিকার করেছেন তিনি। দীর্ঘদেহী এই তরুণ বাঁহাতি পেসারে ক্রিকেট বিশ্লেষকরা ভবিষ্যতের তারকা দেখতে পাচ্ছেন।