বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপ দল পরিচিতিঃ শ্রীলঙ্কা

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 00:08 মঙ্গলবার, 21 মে, 2019

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

পরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার পদচিহ্ন পড়েছে প্রতিটি বিশ্বকাপেই। ‘‘রোল অব অনার’’ দেখলে মনে হবে প্রথম পাঁচটি বিশ্বকাপ জুড়ে তাদের কাজ ছিল স্রেফ শোভা বাড়ানো। শুরুর পথ চলায় বেশ কিছু অঘটনের জন্ম দিলেও ধারবাহিকতার অভাব ছিল স্পষ্ট। তবে ১৯৯৬ সালের বিশ্বকাপে এসে শিরোপার স্বাদ পায় শ্রীলঙ্কা। ২০০৩ সাল থেকে বড় মঞ্চে সবচেয়ে ধারাবাহিক দল গুলোর একটি শ্রীলঙ্কা। ২০০৩ বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়ার পর ২০০৭ ও ২০১১  বিশ্বকাপে ফাইনাল থেকে বিদায় নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। ২০১৫ বিশ্বকাপেও নক আউট পর্ব (কোয়ার্টার ফাইনাল) থেকে বিদায় নিয়েছে লঙ্কানরা।

তবে ২০১৫ সালের পর থেকে লঙ্কান ক্রিকেটে ভাটা পড়ে। মাঠে ও মাঠের বাইরে বাজে সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট। এর মধ্য দিয়েই বিশ্বকাপ মিশনে যেতে হচ্ছে লঙ্কানদের। বড় মঞ্চের ধারাবাহিক দল শ্রীলঙ্কা সাম্প্রতিক পারফর্মেন্স পেছনে ফেলে বিশ্বকাপের মঞ্চে বিশেষ কিছু করে দেখাতে পারবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয়।

এবারের বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করবে লাসিথ মালিঙ্গা ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের ওপর। ৩৫ বছর বয়সি মালিঙ্গা আইপিএলে দারুণ ফর্মে আছেন। সম্প্রতি শ্রীলঙ্কার ঘরোয়া ক্রিকেটে ফর্মে আছেন ম্যাথিউস। চার ইনিংস ব্যাট করে এক সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে ২২৭ রান করেছেন তিনি। বিশ্বকাপে ব্যাটে ও বলে এই দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটের ওপর নির্ভর করবে লঙ্কান ভাগ্য।

লঙ্কান ব্যাটিং লাইন আপের জন্য এবারের বিশ্বকাপ সহজ হবে না। চাপের মুখে দ্রুত ভেঙ্গে পড়ার উদাহরণ আছে বর্তমান শ্রীলঙ্কা দলের। বিশ্বকাপে ব্যাটিং দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের দিকে তাকিয়ে থাকবে লঙ্কানরা।

শ্রীলঙ্কার স্কোয়াড বিশ্লেষণ –

অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসঃ অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ২০৩ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ৪২ গড় ও ৮৩ স্ট্রাইক রেটে ৫৩৮০ রান করেছেন। ইনজুরির কারণে নিয়মিত বোলিং না করলেও ম্যাথিউসের নামের পাশে ১১৪ ওয়ানডে উইকেট আছে। বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা দলের ভাগ্য অনেকটাই নির্ভর করবে ম্যাথিউসের পারফর্মেন্সের ওপর।

লাসিথ মালিঙ্গাঃ আধুনিক ক্রিকেটের গ্রেট লাসিথ মালিঙ্গা তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন। ২১৮ ওয়ানডে খেলা মালিঙ্গা নতুন করে প্রমাণের কিছু নেই। ৩২২ ওয়ানডে উইকেটের মালিক মালিঙ্গা ২০১৯ বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখতে চাইবেন পারফর্মেন্স দিয়ে। এবারের আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে শিরোপা জেতানোর পেছনে বড় অবদান রাখা মালিঙ্গার প্রমাণ করেছেন, তিনি এখনো ফুরিয়ে যান নি।

কুশল মেন্ডিসঃ ছোট ক্যারিয়ারে ইতিমধ্যেই চাপ সামলে ভালো পারফর্ম করার ইঙ্গিত দিয়েছেন এই তরুণ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ৬২ ম্যাচ খেলা মেন্ডিস ওয়ানডে ক্রিকেটে একটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, তবে নামের পাশে ১৫টি ফিফটি আছে তাঁর। বিশ্বকাপে দেশের জন্য লম্বা ইনিংস খেলতে চাইবেন এই তরুণ প্রতিভাবান ব্যাটসম্যান।

কুশাল পেরেরাঃ ৮৮ ওয়ানডে খেলা শ্রীলঙ্কার এই মারকুটে ওপেনারকে সাবেক লঙ্কান গ্রেট সনাথ জয়সুরিয়ার সাথে তুলনা করা হয়। ২৮ বছর বয়সী পেরেরার নামের পাশে চারটি ওয়ানডে সেঞ্চুরি ও এগারোটি ফিফটি আছে। ধারাবাহিকতা নিয়ে সমালোচনার সম্মুখীন হলেও একা হাতে ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য আছে এই বাঁহাতি ওপেনারের।

থিসারা পেরেরাঃ শ্রীলঙ্কার বিশ্বকাপ স্কোয়াডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার থিসারা পেরেরা। লোয়ার অর্ডারে মারকুটে ব্যাটিংয়ের সাথে বল হাতে ডেথ ওভারের চাপ সামলানোর অভিজ্ঞতা আছে পেরেরার। ১৫৩ ওয়ানডে খেলে দুই হাজার ছাড়ানো রান ও ১৬৯ উইকেটের মালিক পেরেরা শ্রীলঙ্কার সাফল্যের বড় কারণ হতে পারেন।

দিমুথ করুনারত্নে (অধিনায়ক): বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কা দলের নেতৃত্বে থাকবেন ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে। গত দুই বছর ধরে অধিনায়কের পদকে ম্যাজিকাল চেয়ারে পরিনত করেছে শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত দিমুথ করুনারত্নে থিতু হয়েছে লঙ্কানরা। মাত্র ১৭ ওয়ানডে খেলা করুনারত্নে সর্বশেষে ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৫ বিশ্বকাপে। পরিসংখ্যানও খুব নাজুক। মাত্র একটি ফিফটি হাঁকিয়েছেন তিনি। বড় মঞ্চে কেমন করে সেটাই এখন দেখার বিষয়।

ধনঞ্জয়া ডি সিলভাঃ ৩২ ম্যাচের ছোট্ট ক্যারিয়ারে প্রতিভার স্বাক্ষর রাখলেও ধারবাহিকতার অভাব আছে ধনঞ্জয়ার ব্যাটিংয়ে। ৩০ ইনিংসে ৪টি ফিফটি হাঁকিয়েছেন তিনি। পার্ট টাইম অফ স্পিন দিয়েও গুটিকয়েক উইকেট হাসিল করেছেন তিনি। তবে মূল কাজটা করতে হবে ব্যাট হাতেই।

ইসুরু উদানাঃ লঙ্কান পেস বোলিং অলরাউন্ডার ইসুরু উদানা এখন পর্যন্ত মাত্র ৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। মূলত টি-টুয়েন্টি স্পেশালিস্ট হিসেবে পরিচিতি তাঁর। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে এই পেসারের জায়গা পাওয়ার অবাক হয়েছেন অনেকেই। বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে সুযোগ পেলে কেমন করেন তিনি, সেটাই দেখার বিষয়।

মিলিন্দা সিরিবর্ধনেঃ তরুণ অলরাউন্ডার মিলিন্দা সিরিবর্ধনে মাত্র ২৬টি ওয়ানডে খেলেছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিফটি আছে তিনটি। উইকেট নিয়েছেন এখন পর্যন্ত নয়টি। ছোট ক্যারিয়ারে পারফর্মেন্স খুব একটা ভালো না হলেও লঙ্কান নির্বাচকরা মিলিন্দার মাঝে ভবিষ্যৎ তারকা দেখতে পাচ্ছেন।

আভিস্কা ফার্নান্দোঃ বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ব্যাক আপ ওপেনার হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন আভিস্কা ফার্নান্দো। লঙ্কান অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ফসল আভিস্কা আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জন্য সুপরিচিত। শ্রীলঙ্কার হয়ে ৫টি ওয়ানডে ও ৩টি টি-টুয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি।

জীবন মেন্ডিসঃ ৩৬ বছর বয়সী লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার জীবন মেন্ডিসের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া চোখ কপালে তোলার মত ঘটনা। ২০১৫ সালে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলা মেন্ডিস চার বছর বিশ্বকাপের ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে যাচ্ছেন। ২০১০ সালে অভিষেক হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৫৪ ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। দলে আসা যাওয়ার মধ্যে থাকা মেন্ডিসের রেকর্ড খুব সমৃদ্ধ নয়।

লাহিরু থিরিমান্নেঃ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান লাহিরু থিরিমান্নে কখনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে থিতু হতে পারেননি। ২০১০ সালে ওয়ানডে অভিষেকের পর ১১৭ ওয়ানডে খেলেছে। ৩৫ গড়ে সেঞ্চুরি ও ২০ ফিফটিতে প্রায় তিন হাজার রান করেছেন তিনি। ২০১৭ সালে ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। এবছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে অবশ্য টেস্ট খেলেছিলেন তিনি।

জেফরি ভ্যান্ডারসেঃ ২৯ বছর বয়সী লেগ স্পিনার জেফরি ভ্যান্ডারসে ২০১৫ সালে প্রথম ওয়ানডে খেলেছিলেন। মাত্র ১১টি ওয়ানডে খেলার সুযোগ পেয়েছেন তিনি। নামের পাশে ১০টি আন্তর্জাতিক উইকেট আছে। তিনি সর্বশেষে ওয়ানডে খেলেছেন ২০১৭ সালে।

নুয়ান প্রদীপঃ ইনজুরির সাথে লড়াই করে আসা নুয়ান প্রদীপ বিশ্বকাপে লঙ্কান বোলিং আক্রমণের ধাঁর বাড়াবেন। ৩৪ ওয়ানডে খেলে ৩৮ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। ওয়ানডের তুলনায় টেস্টের রেকর্ড সমৃদ্ধ হলেও বিশ্বকাপের মত বড় মঞ্চে পারফর্ম করার সামর্থ্য রাখেন তিনি। নিজের দিনে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার সামর্থ্য রাখেন তিনি।

সুরাঙ্গা লাকমলঃ ৩২ বছর বয়সী পেসার সুরাঙ্গা লাকমল মালিঙ্গার সাথে লঙ্কান বোলিং আক্রমণের দায়িত্ব সামলাবেন। নতুন বলে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা বোলারদের একজন সুরাঙ্গা লাকমল। আউট সুইং দিয়ে প্রতিপক্ষ দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের কাঁপুনি ধরিয়ে আসছেন গত দুই বছর ধরে। বিশ্বকাপে আদর্শ কন্ডিশন পেলে আগুনে বোলিং করার সামর্থ্য রাখেন ৮১ ওয়ানডে ম্যাচ  ১০৫ উইকেটের মালিক লাকমল।