বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপ দল পরিচিতিঃ আফগানিস্তান

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 20:15 বৃহস্পতিবার, 16 মে, 2019

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

২০১৯ বিশ্বকাপ উপলক্ষে ক্রিকফ্রেঞ্জির পাঠকদের জন্য বিশ্বকাপে অংশ নেয়া দশ দলের পরিচিতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবারের আলোচ্য দল আফগানিস্তান

আধুনিক ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় চমকের নাম আফগানিস্তান। আফগানিস্তান ক্রিকেট ফেডারেশনের যাত্রা শুরু হয় ১৯৯৫ সালে। ২০০৩ সালে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সদস্যপদ লাভ করে। অতি অল্প সময়ে ২০০৯ সালে আইসিসির বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে পঞ্চম অবস্থানে থাকায় ওয়ানডে মর্যাদা পায় দেশটি। পরের বছরই টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলে আফগানিস্তান।

অল্পের জন্য ২০১১ সালের বিশ্বকাপে না খেলতে পারলেও ২০১৫ সালে এসে প্রথমবারের মত ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পায় আফগানিস্তান। ২০১৭ সালে এসে টেস্ট স্ট্যাটাস পায় আফগানিস্তান। ১০ দলের বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের বাঁধা পার করে ২০১৯ সালের বিশ্বকাপেও জায়গা করে নিয়েছে আফগানিস্তান। শুধু তাই নয়, এবারের বিশ্বকাপে বড় দল গুলোর পথের কাঁটা হওয়ার যথেষ্ট সামর্থ্য আছে দলটির।

টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার পর এবার ওয়ানডে ক্রিকেটে নিজেদের সামর্থ্যের ছাপ রাখতে মুখিয়ে আছে আফগানিস্তান। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের পাঁচটি ম্যাচ হারলেও স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল আফগানরা। গত এশিয়া কাপে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে শক্তিশালী ভারতের সাথে ম্যাচ টাই করেছে দলটি।

সাম্প্রতিক সময়ের পারফর্মেন্স আফগানদের আসন্ন বিশ্বকাপে শেষচারে জায়গা করে নেয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। বিশেষ করে দলের সবচেয়ে বড় তারকা রাশিদ খান ও তরুণ মুজিব উর রহমানের সাথে অভিজ্ঞ মোহাম্মদ নবি, গুলবাদিন নাইবরা বিশ্বকাপে আফগান স্বপ্ন লালন করবে।

বিশ্বকাপের আসরে আফগানিস্তানের শক্তির জায়গা স্পিন বোলিং। রাশিদ খান, মজিবুর রহমান ও মোহাম্মদ নবিদের মতন পরীক্ষিত স্পিনার দিয়ে যে কোনো ব্যাটিং আক্রমণে ধস নামাতে পারে আফগানিস্তান। গ্রীষ্মের শেষের দিকে বিশ্বকাপ হওয়ায় ইংল্যান্ডের কন্ডিশন স্পিন সহায়ক হতে পারে। সেক্ষেত্রে আফগানিস্তান হয়ে উঠতে পারে ভয়ঙ্কর দল।

চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে আফগানদের ব্যাটিং। রহমত শাহ, আসগর আফগান, হজরতুল্লাহ জাজাই, মোহাম্মদ শেহজাদদের দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হবে। স্কোরবোর্ডে বড় রান তুলতে পারলে অঘটন ঘটানোর সুযোগ থাকবে আফগানিস্তানের।

আফগানিস্তান স্কোয়াড বিশ্লেষণ 

রাশিদ খানঃ টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট দিয়ে শুরু, এরপর ধাপে ধাপে ওয়ানডে ও বর্তমানে টেস্ট ম্যাচেও রাশিদ খান চোখ জুড়ানো পারফর্মেন্স দিয়ে আসছেন। মাত্র ৫৭ ওয়ানডে খেলা রাশিদ খান নিঃসন্দেহে এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেয়া সেরা লেগ স্পিনারদের একজন ছোট্ট ক্যারিয়ার দ্রুততম একশ উইকেটের রেকর্ডে নাম লিখিয়েছেন তিনি। শুধু কব্জি ঘুরিয়ে নয়, ব্যাট হাতেও আফগানিস্তানের ভরসার নাম হতে পারেন এই তরুণ ক্রিকেটার।

মোহাম্মদ নবিঃ ব্যাটে-বলে আফগানিস্তানের অন্যতম আস্থার প্রতিক মোহাম্মদ নবি। আফগান ক্রিকেটের উত্থানের পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখা এই অলরাউন্ডার এখন পর্যন্ত ১১১ ওয়ানডে খেলেছেন। ২৫৬৫ ওয়ানডে রানের সাথে ১১৮ উইকেটের মালিক তিনি। বিশ্বকাপে আফগানকের একা হাতে ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য রাখেন তিনি।

মুজিব উর রহমানঃ ১৮ বছর বয়সী অফ স্পিনার মুজিব ২০১৭ সালের শেষের দিকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেই তাক লাগিয়ে দেন। মাত্র ২৮ ওয়ানডে খেলে ইতিমধ্যে ৫১ উইকেট শিকার করে নিয়েছেন এই তরুণ। বিশ্বকাপে আফগান স্পিন আক্রমণকে শক্তিশালী করবেন এই তরুণ।

রহমত শাহঃ ২৫ বছর বয়সী আফগান ব্যাটসম্যান রহমত শাহ ৫৯ ম্যাচ খেলে চারটি ওয়ানডে সেঞ্চুরি ও ১৩টি ফিফটির সাহায্যে প্রায় দুই হাজার রান করেছেন। রহমত শাহকে আফগান ব্যাটিং অর্ডারের স্তম্ভ বললে ভুল হবে না। বিশ্বকাপে গুরু দায়িত্ব পালন করতে হবে রহমত শাহকে।

মোহাম্মদ শেহজাদঃ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ শেহজাদ টপ অর্ডার ঝড়ো ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিত। ৮০ ম্যাচ খেলে ২৬১৭ রান করা শেহজাদের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি সংখ্যা ছয়টি। বড় মঞ্চে পারফর্ম করতে পছন্দ করেন শেহজাদ, এমন সুনাম আছে এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের। ইনিংসের শুরুতে প্রতিপক্ষের সেরা বোলারদের বিপক্ষে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের দায়িত্বটা পালন করবেন তিনি।

গুলবদিন নাইবঃ বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করবেন গুলবদিন নাইব। বিশ্বকাপ স্কোয়াড ঘোষণার আগে নিয়মিত অধিনায়ক আসগর আফগানকে সরিয়ে দায়িত্ব তুলে দেয়া হয় নাইবের কাঁধে। আফগান ক্রিকেটাররা প্রিয় অধিনায়ককে বাদ দেয়ায় নির্বাচকদের প্রতি ক্ষোভ ঝারলেও নিজেদের সিদ্ধান্ত অটল থাকে নির্বাচকরা। স্বভাবতই অধিনায়ক হিসেবে বাড়তি চাপ সামলাতে হবে গুলবদিন নাইবকে।

আফতাব আলমঃ এখন পর্যন্ত ২২ ওয়ানডে খেলা আফতাব আলম ছোট্ট ক্যারিয়ারে ৩৩ উইকেট শিকার করেছেন। বিশ্বকাপে আফগান বোলিং আক্রমণকে শক্তিশালী করবেন তিনি।

দৌলত জাদরানঃ ৩১ বছর বয়সী পেসার দৌলত জাদরান আফগান বোলিং আক্রমণের অন্যতম সেরা হাতিয়ার। ৭৫ ম্যাচ খেলে ১০৩ উইকেট শিকার করা জাদরান চাপের মুখে পারফর্ম করার ক্ষেত্রে পটু। ডেথ ওভারের দায়িত্ব সামলাবেন এই ডানহাতি পেসার।

আজগর আফগানঃ সাবেক অধিনায়ক আজগর আফগান এবারের বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের নেতৃত্ব দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচকরা অভিজ্ঞ আজগরকে সরিয়ে গুলবদিন নাইবকে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব তুলে দেন। ১০০ ওয়ানডে খেলা আসগর মিডেল অর্ডার আগলে রাখার দায়িত্ব পালন করে আসছেন গত এক যুগ ধরে। নামের পাশে একটি সেঞ্চুরি ও এগারো ফিফটি আছে আজগর আফগানের। বিশ্বকাপে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেয়ায় নিজেকে প্রমাণ করার বিষয় থাকবে আজগরের।

হামিদ হাসানঃ অভিজ্ঞ পেসার হামিদ হাসানের জন্য এবারের বিশ্বকাপই শেষ বিশ্বকাপ হতে চলছে। ৩৩ ওয়ানডে খেলা এই ফাস্ট বোলার ৫৮ উইকেটের মালিক। নতুন বলে আফগানিস্তানের বোলিং আক্রমণের নেতৃত্ব দিতে দেখা যাবে তাঁকে।

হাশমতুল্লাহ শাহিদিঃ ২৪ বছর বয়সী তরুণ আফগান টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান হাশমতুল্লাহ শাহিদি এখন  পর্যন্ত ২৯ ম্যাচ খেলেছেন। ৩৫ গড়ে সাতটি ফিফটি সহ ৮০৬ রান করেছেন তিনি। বিশ্বকাপের মঞ্চে বাঁহাতি শাহিদির কাছ থেকে বড় ইনিংস প্রত্যাশা করবে আফগানিস্তান।

হজরতুল্লাহ জাজাইঃ মাত্র ৭ ওয়ানডে খেলেই নিজের আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের জন্য জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন হজরতুল্লাহ জাজাই। ছোট্ট ক্যারিয়ারে ১০৭ স্ট্রাইক রেটে রান তুলেছেন তিনি। বিশ্বকাপের মতন বড় মঞ্চে জাজাই হতে পারেন প্রতিপক্ষ দলের মাথা ব্যথার কারণ।

নাজিবুল্লাহ জাদরানঃ ২৬ বছর বয়সী মিডেল অর্ডার ব্যাটসম্যান নাজিবুল্লাহ জাদরান ৫৫ ম্যাচ খেলে ১২১০ রান করেছেন। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত একটি সেঞ্চুরি ও আটটি ফিফটি হাঁকিয়েছেন তিনি। দ্রুত রান তোলা ও ধারাবাহিকতার মিশেল পাওয়া যায় নাজিবুল্লাহ জাদরানের ব্যাটিংয়ে।

শামিউল্লাহ শিনওয়ারিঃ ৩১ বছর বয়সী অলরাউন্ডার শামিউল্লাহ শিনওয়ারি আফগানিস্তান দলের অন্যতম সদস্য। ৮১ ওয়ানডে ম্যাচ খেলে ১১ ফিফটিতে ১৭৩৭ রানের সাথে ৪৫ উইকেটের মালিক তিনি। বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের লোয়ার অর্ডার সামলাতে দেখা যাবে শিনওয়ারিকে।

নূর আলি জাদরানঃ ৪৭ ওয়ানডে খেলার অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নূর আলি জাদরান ১১৪৮ রানের মালিক। একটি সেঞ্চুরি ও সাতটি ফিফটির মালিক তিনি। ৩১ বছর বয়সী এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করতে চাইবেন।