সাক্ষাৎকার

নিজেকে প্রমাণের মিশনে সফল সাইফ

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 01:30 সোমবার, 29 এপ্রিল, 2019

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

সদ্য সমাপ্ত ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে প্রাইম দোলেশ্বরের ওপেনার সাইফ হাসানকে ভিন্ন রূপে দেখা গেছে। বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে মন্থর ব্যাটিংয়ের জন্য পরিচিতি পাওয়া সাইফ ২০১৭ সালের বিপিএলে খুলনা টাইটান্স দলে সুযোগ পেয়েছিলেন, কিন্তু কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পান নি। এবারের বিপিএলে কোনো দল সাইফের প্রতি আগ্রহ দেখায় নি। ২০১৮ সালের ডিপিএলে খেলেছিলেন আবাহনীর মত শীর্ষ দলে। কিন্তু দ্রুত রান তোলার ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকায় বাদ পড়তে হয় আবাহনী থেকেও। তাই এবারের আসরটি এই তরুণ ওপেনারের জন্য নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ ছিল। ব্যক্তিগত মিশনে সফলও হয়েছেন সাইফ। লিস্ট 'এ' স্বীকৃতি পাওয়ার পর ডিপিএলের এক আসরে সর্বোচ্চ রানের অতীত রেকর্ড ছাপিয়ে নতুন রেকর্ড গড়েন তিনি। প্রায় ৮০ স্ট্রাইক রেটে ৪ ফিফটি ও ৩ সেঞ্চুরিতে ৮১৪ রান করেছেন এই ডানহাতি ওপেনার। সম্প্রতি ক্রিকফ্রেঞ্জির সাক্ষাৎকারে নিজের ব্যাটিং নিয়ে বিস্তারিত কথা বলেছেন সাইফ হাসান।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ প্রিমিয়ার লীগে সব গুলো ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েছেন, রেকর্ড ভেঙ্গে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হলেন। সব মিলিয়ে নিজের পারফর্মেন্সকে কিভাবে দেখছেন?

সাইফঃ আমি কাজ করছিলাম আমার ব্যাটিং নিয়ে। আগে যেমন একটা আক্ষেপ ছিল, শেষের দিকে কয়েকটা ম্যাচ খেলতে পারি নি। গত প্রিমিয়ার লীগটা ভালো ছিল। ১২ ম্যাচে ৪৮০ রান হয়েছিল। তবে একটা আক্ষেপ ছিল যে, সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হতে পারি নি, সামনে যেখানে সুযোগ পাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। প্রাইম দোলেশ্বরে সব ম্যাচ খেলতে পেরেছি। আর সার্বিক প্রস্তুতি খুব ভালো ছিল। কঠোর পরিশ্রম করেছিলাম করেছিলাম স্যারের (প্রাইম দোলেশ্বর কোচ মিজানুর রহমান বাবুল) সাথে। সব মিলিয়ে ভালো ফলাফল এসেছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ এবার বেশিরভাগ উইকেট ব্যাটিং সহায়ক ছিল না, বিশেষ করে মিরপুরে, কঠিন উইকেটে রান পাওয়া অবশ্যই সন্তুষ্টির?

সাইফঃ মিরপুরে এবার রান করাটা কঠিন ছিল। এতো সহয ছিল না। ওখানেও গাজি গ্রুপের সাথে সেঞ্চুরি হয়েছে, তারপর বিকেএসপিতে একটা হয়েছে। ফতুল্লায় কিছু কিছু উইকেট কঠিন ছিল, তো ওখানেও রান হয়েছে। বাবুল স্যার যেটা বলেণ যে, তোমার যদি বেসিক ঠিক থাকে তুমি সব কিছু করতে পারবে। উনি অনেক কাজ করছে আমার সাথে। অনূর্ধ্ব-১৯ থেকে আমাকে দেখেছে। উনার আসলে বড় হাত আছে আমার ব্যাটিংয়ের ওপর। আমি যখন অনূর্ধ্ব-১৯ এ ছিলাম তখন থেকেই উনি শুরু করলেন আমার বেসিক শক্তিশালী করার কাজ। একদম প্রথম থেকে, উনি বলে আসছে বেসিক যদি ঠিক থাকে, তাহলে তুমি নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ গত প্রিমিয়ার লীগের পর এবার অনেক কিছু প্রমাণ করার ছিল আপনার...

সাইফঃ অবশ্যই। গত বছর একটা সেঞ্চুরি ছিল। আর ফিফটি ছিল তিনটা। কিন্তু এবার চিন্তা করেছিলাম যে বড় ইনিংস খেলব আর যতো দ্রুত রান করা যায়, সেই চেষ্টা করব। স্ট্রাইক রেটটা মাথায় রেখে প্রান্ত বদল করে খেলার চেষ্টা করব। আর দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলা, দল যেটা চাচ্ছিল সেটা যেন করতে পারি। টিমের ফলাফলও খুব ভালো হয়েছে, আমরা তৃতীয় অবস্থানে থেকে প্রিমিয়ার লীগ শেষ করেছি। সব মিলিয়ে অনেক বেশি সন্তুষ্ট। অবশ্য আমরা চ্যাম্পিয়নের হওয়ার জন্য লড়াই করছিলাম। তবুও খুব ভালো হয়েছে আমাদের।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বিপিএলে খেলার সুযোগ পান নি গতবার। বিপিএলে দল পাওয়ার জন্য নিজেকে প্রমাণের আলাদা চেষ্টা ছিল?

সাইফঃ হ্যাঁ, যেমন গত বিপিএলে ছিলাম না, এবার এটা মাথায় ছিল। অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল টুর্নামেন্টটা। এই প্রিমিয়ার লীগের আগে টি-টুয়েন্টি একটা টুর্নামেন্ট হয়েছিল, ওখানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলাম। সব মিলিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। মাথায় ছিল, অবশ্যই এসব যদি ঠিক থাকে তাহলে বিপিএলের জন্য অনেকখানি এগিয়ে থাকব। মানে যদি আমার দিকটা স্লো থাকে, যদি  স্ট্রাইক রেটের দিক থেকে পিছিয়ে থাকি... তাহলে ওখানে দল পাওয়াটা কঠিন হয়ে যায়। আমি আমার দিক থেকে একটু এগিয়ে রাখলাম। স্ট্রাইক রেটটা ঠিক রাখার চিন্তা আমার মাথায় ছিল। সব মিলিয়ে ভালোই হয়েছে। ছক্কার রেকর্ডগুলো, ২৭ টি ছয়, ১৬ ম্যাচে। স্ট্রাইক রেটটাও ভালো ছিল।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বড় শটে দ্রুত রান করার জন্য নিজেকে তৈরি করেছেন কিভাবে?

সাইফঃ বড় শট.. এটা আসলে অনেক অনুশীলন করা লাগে। আর সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল সাহস। সাহসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর ফিটনেসও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনার সিঙ্গেল গুলো ক্যারি করতে হয়। যেমন এক কে দুই রানে পরিনত করতে হয়। যেই বলে রান হয়না সেখানেও যদি আপনি এক নিয়ে নেন তাহলেও অনেকখানি এগিয়ে যান। প্রান্ত বদল করে খেলার ক্ষেত্রে ফিটনেসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তারপর জিম অবশ্যই অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আপনার বড় শটের পেছনে শক্তির জন্য জিম করা দরকার।   

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ফিটনেস নিয়ে অনেক কাজ করেছেন প্রিমিয়ার লীগের আগে... 

সাইফঃ গত বছর আবাহনীতে যখন ছিলাম তখন আমার ওজন বেড়ে গিয়েছিল। পরে এটা নিয়ে অনেক কাজ করেছি। ফিটনেস করেছি, অফ সিজনে প্রচুর কঠোর পরিশ্রম করেছি। তারপর যেখানে গিয়েছি সেখানেই ফিটনেস করেছি, প্রতিদিনই করেছি বলতে গেলে। তারপর খাবার অভ্যাস বদলে ফেলেছি। খাবার অভ্যাসটা আসলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যতই ফিটনেস নিয়ে কাজ করি না কেন, খাবার অভ্যাস যদি আগের মতোই রয়ে যায় তাহলে একই হল, লাভ হল না ফিটনেস নিয়ে কাজ করে। আমার মনে হয় সেটাই কাজে দিয়েছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ভালো পারফর্মেন্সের পর সেটা ধরে রাখাও জরুরী...

সাইফঃ হ্যাঁ আসলে, অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এক আসরের পারফর্মেন্স দিয়ে বিচার করা ঠিক না। আমার উচিত যতটা সম্ভব ধারবাহিক থাকা। ফিটনেসটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটার পাশাপাশি ব্যাটিংয়ের যেই সব জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না, সেগুলো নিয়ে কাজ করা। আরও দ্রুত রান করার অনুশীলন করতে হবে। নিজের শক্তির জায়গায় বাইরে গিয়ে অনুশীলন বেশি করতে হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের পারফর্মেন্স নির্বাচকরা আলাদাভাবে মূল্যায়ন করে থাকে। আপনি অবশ্যই এমন সফল টুর্নামেন্টের পর জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখছেন?

সাইফঃ প্রত্যেক প্লেয়ারের স্বপ্ন থাকে জাতীয় দলে খেলার। আমি চিন্তা করছি, সামনে যে টুর্নামেন্টটা আসবে, সেটা আসলে অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে আমার জন্য। সামনে যদি লঙ্গার ভার্সন থাকে সেটা আমার ভালো খেলতে হবে, সামনে যদি এইচপির কোন পোগ্রাম থাকে সেটা আমার ভালো খেলতে হবে। সামনে যে খেলা গুলো আসবে সেটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ আর চ্যালেঞ্জিং হবে আমার জন্য। ওখানে পারফর্ম করতে হবে।