সাক্ষাৎকার

ডিপিএলের মান ভারতের ওয়ানডে প্রতিযোগিতার মতইঃ ওয়াসিম

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 12:03 সোমবার, 18 মার্চ, 2019

|| ক্রিকফেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

ভারতের অন্যতম প্রতিভাবান ওপেনার হওয়ার পরও ওয়াসিম জাফরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার দীর্ঘ হয়নি। অধারাবাহিকতা ছোট্ট কারণ হলেও বড় কারণ ছিল তাঁর সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটে ওপেনিং পজিশনের জন্য ভিরেন্দ্র শেহবাগ, গৌতম গম্ভীর, শেখর ধাওয়ানদের তুমুল প্রতিযোগিতা। কিন্তু ৪০ বছর বয়সে এসেও ঘরোয়া ক্রিকেটে রান বন্যা বইয়ে চলছেন তিনি। মুম্বাই এর এই স্টাইলিস্ট ওপেনার বর্তমানে ঢাকা প্রিমিয়ার লীগে (ডিপিএল) ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আবাহনীর হয়ে খেলছেন। প্রথমবারের মত বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে আসা ওয়াসিম জাফর বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিজের উপস্থিতি জানান দিতে চান। সম্প্রতি ক্রিকফ্রেঞ্জির বিশেষ সাক্ষাৎকারে নিজের ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেছেন ওয়াসিম জাফর।

পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ভারতের হয়ে ৩১টি টেস্ট খেলেছেন, যখন ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ ছিল ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যাটিং লাইনআপের একটি। শচিন, রাহুলদের সময় খেলার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?

ওয়াসিমঃ প্রথমত ভারতের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারা অনেক বড় সম্মানের ব্যাপার ছিল। যখন ক্রিকেট খেলা শুরু করেছিলাম, তখন এটাই স্বপ্ন ছিল। ভারতের হয়ে খেলাই ছিল সর্বোচ্চ অর্জন। এখন পর্যন্ত ২৭৫ থেকে ৩০০ জন ভারতের জার্সিতে খেলেছেন। সুতরাং নিজ দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে আমি নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে করি। আর আমি খেলেছি একঝাঁক মহান ক্রিকেটারদের সাথে। আমি শচিন টেন্ডুলকারকে দেখে বড় হয়েছি। শচিন ও আমি একই রাজ্যের ক্রিকেটার। সুতরাং আমার শচিনকে খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। রাহুল দ্রাবিড়, সৌরভ গাঙ্গুলি, আজহারউদ্দিন, অনিল কুম্বলে, ভিভিএস লক্ষ্মণের মত ক্রিকেটাররা খেলেছে সেই সময়। সেই স্বর্ণযুগে ভারতের হয়ে ৩০টির মতন টেস্ট খেলতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি আমি।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ সুনিল গাভাস্কার, শচিন টেন্ডুলকার সহ আরও অনেক ভারতীয় তারকা ব্যাটসম্যান মুম্বাই থেকেই উঠে এসেছে। মুম্বাই ব্যাটসম্যানদের বিশেষত্ব কী?

ওয়াসিমঃ নিজের উইকেট সহজে বিলিয়ে দিয়ে আসার সংস্কৃতি নেই মুম্বাই ক্রিকেটে। ‘খাড়স’ (দৃঢ়চেতা) মনোভাব বলে থাকি আমরা এটাকে। যে কোন অবস্থাতেই আমরা জিততে চাই। যেভাবেই হোক, জিততে হবে, রান করতে হবে, উইকেট নিতে হবে। মুম্বাই প্লেয়ারদের এই মনোভাব দেখেই আমি বড় হয়েছে। তাদের সাথে খেলেই বড় হয়েছি। ওদের মধ্যে অনেকে ভালো ক্রিকেটার পরও দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে নি কিন্তু তাঁরা খুব গর্বের সাথে মুম্বাই ক্রিকেটকে প্রতিনিধিত্ব করেছে। মুম্বাই ব্যাটসম্যানদের এটাই উল্লেখযোগ্য দিক। আপনি ২০-৩০ রান করেছেন তো সেঞ্চুরি করতেই হবে। সেঞ্চুরি করলেই থেমে যাবেন না, আপনাকে ১৫০-২০০-২৫০ রান করার চেষ্টা করতে হবে। মুম্বাই এর প্লেয়াররা এমন মনোভাব নিয়েই খেলে থাকে। ছোটবেলা থেকে আমি এমন পরিবেশেই খেলেছি বড় হয়েছি ও শিখেছি।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও একই মনোভাব নিয়ে খেলেছেন আপনি

ওয়াসিমঃ হ্যাঁ আমি চেষ্টা করেছি। আমার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দুটি ডাবল সেঞ্চুরি আছে। ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সেঞ্চুরি আছে। আমি ভাগ্যবান বলতে পারেন। পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি আছে আমার। ভাগ্যবান মনে করি নিজেকে, প্রথমত দেশকে প্রতিনিধিত্ব করতে পেরে এবং সামর্থ্যের কিছুটা হলেও দেখাতে পেরে। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজে ডাবল সেঞ্চুরি, কেপটাউনে সেঞ্চুরি, ইংল্যান্ডে রান করা ও সিরিজ জয়ী দলের অংশ হওয়া...আপনার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত গুলোর মধ্যে পড়ে?

ওয়াসিমঃ অবশ্যই। আমরা ইংল্যান্ডে ২৬ বছর পর সিরিজ জয় করেছিলাম। ৩১ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজে জিতেছিলাম। আমার ক্যারিয়ারের বড় হাইলাইটস বলা যায়। পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরিও স্মরণীয়। একমাত্র ভারতীয় ওপেনার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার কেপ টাউনে সেঞ্চুরি আছে আমার। সেই সময়টায় খেলতে পেরে এবং পারফর্ম করতে পেরে নিজেকে খুবই ভাগ্যবান মনে হয়।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আপনার টেস্ট ক্যারিয়ার তুলনামূলক ভাবে ধারাবাহিক ছিল না। নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে কিভাবে দেখেন?

ওয়াসিমঃ আমার মনে হয় আমি আরও ভালো করতে পারতাম। কোন ক্রিকেটারই বলতে পারবে না তাঁর ক্যারিয়ারে নিয়ে কোন আক্ষেপ নেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমার মনে হয় আমার দ্বারা আরও ভালো করা সম্ভব ছিল। গৌতম গম্ভীর আমার জায়গায় এসে ভালো করেছে। শেখর ধাওয়ান পরবর্তীতে সুযোগ পেয়ে ভালো করেছে। ওরা সুযোগ লুফে নিয়েছে। আমার কোন অভিযোগ নেই। যেটা প্রাপ্য সেটাই পেয়েছি। আমি সুযোগ লুফে নেই নি, বাকিরা নিয়েছে। এটাই জীবন।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ কখন মনে হলো আপনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষের পথে, ২০০৮ অস্ট্রেলিয়া সিরিজ? 

ওয়াসিমঃ অনেকটা, তিনটি বাজে ম্যাচ গিয়েছিল আমার। আমি জানতাম সুযোগ সীমিত। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনি এমনিতেই অনেক চাপের মুখে, আপনি যখন তিন-চার ইনিংসে ব্যর্থ হন তখন চাপ তো আসবেই। কিন্তু এটাই জীবন, উত্থান পতন আসবেই, এইসব মেনে নিয়েই চলতে হয়।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ২০০০ সাল থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটে আমুল পরিবর্তন আসা শুরু হয়, পেছনের কারণ কী?

ওয়াসিমঃ পরিবর্তন এসেছে সৌরভ গাঙ্গুলির সময়। যখন তিনি অধিনায়কত্ব নিয়েছেন তখন ভারত ভালো দলে পরিণত হয়। আমরা জাহির খানকে খুঁজে পাই। জাভাগল শ্রীনাথ আগে থেকেই ছিল। আশিষ নেহরা ছিল। পরবর্তীতে ইরফান পাঠান এসেছিল। সুতরাং আমি মনে করি পরিবর্তন এসেছে গাঙ্গুলির অধীনে এবং পরবর্তীতে সেটা ক্রমান্বয়ে ধোনি ও ভিরাটের হাত ধরে এক ধাপ থেকে আরেক ধাপের দিকে যাচ্ছে। মানসিকতার পরিবর্তনের জন্য কৃতিত্ব গাঙ্গুলিকেই দিতে হবে। ভারতের মাঠে এসে সিরিজ জয় করার মতন দল এখন খুব বেশি নেই। সমস্যা ছিল বিদেশের মাটিতে ভারতের পারফর্মেন্সে, বিশেষ করে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায়। এইসব দেশে আমরা জয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেও জিততে পারতাম না। আমাদের এই দিকটায় একটু খেয়াল দেয়া দরকার ছিল। আমরা সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়াকে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মত হারিয়েছি। এটা প্রমাণ করে ভারতীয় দল এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বর্তমান ভারতীয় দলকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন, ভিরাটের ভারত দেশে এবং বিদেশেও সাফল্য পেতে শুরু করেছে

ওয়াসিমঃ আমরা খুব ভালো সফরকারী দল ছিলাম না। কিন্তু গত দুই তিন বছরে আমাদের বোলিং আক্রমণ অনেক শাণিত হয়েছে। বিশেষ করে বিদেশ সফরে ব্যাটসম্যানদের ভোগান্তিতে ফেলার মত অস্ত্র এখন ভারতের আছে। আমাদের বুমরাহ, শামির মতন বোলার আছে। তাদের সাথে আছে ইশান্ত শর্মা, যিনি সময়ের সাথে সাথে পরিপক্ব হয়েছেন। ভুবনেশ্বর কুমার আছেন। হার্দিক পান্ডিয়ার মত অলরাউন্ডার পেয়েছে ভারত। ব্যাটিং আমাদের সব সময় ছিল। কিন্তু বোলিং আক্রমণ ভয়ঙ্কর ছিল না। অস্ট্রেলিয়ায় আমরা সিরিজ জিতেছি। ইংল্যান্ডকেও হারানোর খুব কাছে এসেছিল ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকাকেও আমাদের হারানো উচিত ছিল। আমি মনে করি ভিরাট কোহলির অধীনে দল খুবই ইতিবাচক ক্রিকেট খেলছে। যে কোন পরিস্থিতিতেই দল জয়ের চিন্তা করে থাকে। এটাই মানসিকতার পরিবর্তন।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনো অবিশ্বাস্য ফর্ম ধরে রেখেছেন আপনি, ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে কিভাবে নিজেকে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা খুঁজে পান?

ওয়াসিমঃ অনুপ্রেরণা হচ্ছে খেলা চালিয়ে যাওয়া। আমি ভারতের হয়ে খেলছি না, তাই বলে আমার খেলা চালিয়ে যাওয়ার প্রেরণা হারিয়ে যাবে, এমন হওয়া উচিত না। আমি ক্রিকেট খেলছি কারণ আমি খেলাটা উপভোগ করি। যতদিন আমার ফিটনেস থাকবে এবং ইচ্ছে থাকবে, ততদিন খেলা চালিয়ে যাব। ভারতের হয়ে খেলছি না তাই বলে মন ভেঙ্গে যাবে তা নয়। আমি খেলছি কারণ আমি এখনো রান করা উপভোগ করি। আমি এখনো পর্দার পেছনের কঠোর পরিশ্রম উপভোগ করি। ম্যাচ খেলার জন্য যা যা করার দরকার তা করতে পছন্দ করি। যতদিন উপভোগ করব, দলের স্বার্থে অবদান রাখতে পারব, ততদিন খেলা চালিয়ে যেতে বাড়তি অনুপ্রেরণার দরকার হবে না। আমি জানি ভারতের হয়ে আর খেলা হবে না আমার। কিন্তু আমি খেলাটা এখনো পছন্দ করি। এখনো প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট ভালোবাসি, রান করতে পছন্দ করি।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ গত পাঁচ-ছয় বছরে ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে কী কী পরিবর্তন এসেছে যার ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভূতপূর্ব উন্নতি করছে দলটি? 

ওয়াসিমঃ আমি মনে করি ক্রিকেট কমিটি ভালো সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। নিরপেক্ষ কিউরেটর ফর্মুলার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে কর্তারা। যা খুবই ভালো পরিবর্তন আমি মনে করি। ফলে যেমন ইচ্ছা তেমন উইকেট তৈরি করা বন্ধ হয়েছে। স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হবে ক্রিকেট ভালো হচ্ছে, ভালো ক্রিকেটার বের হয়ে আসছে। ভারতে আম্পায়ারিং এর মান ভালো হয়েছে। ক্রিকেটাররা ১০-১১টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলছে। অনেক কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে যেতে হয় তাদের। ঘর থেকে দীর্ঘদিন বাইরে থাকতে হয় ক্রিকেটারদের। ফিটনেসের কঠিন পরীক্ষা হয়, মানসিক ও শারীরিক। আমি আশা করি ভারতে ক্রিকেটাররা প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটকে মূল্যায়ন করুক। আমি জানি আইপিএল বড় মঞ্চ। তবে আইপিএল হওয়া উচিত দ্বিতীয় ধাপ, প্রথম ধাপ হওয়া উচিত প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট। তরুণ ক্রিকেটারদের কাছে আমার এটাই চাওয়া। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটকে গুরুত্ব সহকারে দেখুক ওরা। কারণ চারদিনের ক্রিকেট টি-টুয়েন্টি থেকে ভিন্ন। আর টেস্ট ক্রিকেটের গুরুত্ব আলাদা। একজন ক্রিকেটার সত্যিকারের সম্মান পায় টেস্ট ক্রিকেট খেলে। তরুণরা বিষয়টি মনে রাখুক, এটাই চাওয়া। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বাংলাদেশের দেশের বাইরে টেস্ট ক্রিকেটে ভালো করছে না। আপনার কি মনে হয় ভারতের সফল ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামোর ব্লুপ্রিন্ট বাংলাদেশেও কার্যকরী হবে?

ওয়াসিমঃ আমি তাই মনে করি। কোচ, ক্রিকেট কর্তাব্যক্তিদের ক্রিকেট এবং ক্রিকেটারদের প্রাধান্য দেয়া উচিত। যেই পদক্ষেপই নেয়া হোক না কেন, সেটা হওয়া উচিত ক্রিকেট ও ক্রিকেটারের কথা চিন্তা করেই নেয়া উচিত। ক্রিকেটারদেরও নিজেদের কঠিন পরিস্থিতির জন্য তৈরি করা উচিত। আমি জানি বাংলাদেশ দল ঘরের মাঠে ভালো দল। তবে তাদের নিজেদের চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে হবে। তাদের অচেনা কন্ডিশনের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। বাংলাদেশ সব সময় নিজেদের ঘরের মাঠে এসে রান করতে পারবে, উইকেট নিতে পারবে, ম্যাচ জিততে পারবে। স্পিন তাদের পছন্দের অস্ত্র। কিন্তু তাদের পেসারদেরও ধাপে ধাপে উন্নতি করতে হবে। ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন মাথায় রেখে উইকেট তৈরি করা উচিত। নিজেদের সুবিধাজনক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বাংলাদেশে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলছেন প্রথমবারের মতন, কেমন লাগছে?

ওয়াসিমঃ এবারই প্রথম খেলছি বাংলাদেশে। এখানে খেলতে পেরে ভালো লাগছে। এখানে প্রতিযোগিতা ভারতের ওয়ানডের প্রতিযোগিতার মতই। আবাহনী দলটি দারুণ, জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটারে ভরা দল আবাহনী। প্রথমত এটা একটা ভালো দিক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাররা এখানে খেলছে। তরুণ ক্রিকেটাররা উৎসাহিত হবে তারকাদের সাথে খেলতে পারলে। মাশরাফি বা সাকিবদের খেলতে দেখলে যে কেউই নিজেদের সর্বোচ্চটা দিতে চাইবে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ডিপিএলের অন্যতম সেরা দল আবাহনীতে খেলছেন, অবশ্যই ভালো অনুভূতি কাজ করছে?

ওয়াসিমঃ অবশ্যই। আগেই বলেছি, আবাহনীতে বাংলাদেশ জাতীয় দলের অনেক ক্রিকেটার খেলছে। একদম জাতীয় দলের মতই দল আবাহনী। খুবই শক্তিশালী দল। আমি প্রথমত চাইব দলের হয়ে পারফর্ম করতে। এরপর যেভাবেই পারি দলকে সাহায্য করতে। নিজের অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান তরুণদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে মুখিয়ে আছি আমি। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ মাশরাফি আপনাকে টেস্টের প্রথম বলেই বোল্ড করেছিল, এখন আপনারা দুইজনই একই দলে খেলছেন...

ওয়াসিমঃ হ্যাঁ, তবে আমি সেই স্মৃতি মনে করতে চাই না (হাসি)। তবে হ্যাঁ, খুবই ভালো লাগছে তাঁর সাথে খেলতে পেরে। মাশরাফি এখন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক। আমি আগামী বিশ্বকাপের জন্য তাঁকে শুভ কামনা জানাতে চাই। বাংলাদেশ দলকেও শুভ কামনা জানাতে চাই। আমি মনে করি বাংলাদেশ দলের সামর্থ্য আছে যে কোন বড় দলের বিপক্ষে অঘটন ঘটানোর এবং অনেক দূর যাওয়ার। আমি তাদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে খেলতে দেখেছি। সুতরাং তাদের মধ্যে সেই সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে। তবে তাদের সঠিক সময়ে জ্বলে উঠতে হবে। মাশরাফি বাংলাদেশ ক্রিকেটের মহান সেবক। তিনি ১০-১৫ বছর ধরে খেলে যাচ্ছেন। আমি মাশরাফি ও তাঁর দলকে শুভ কামনা জানাতে চাই। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আপনার পরিবারের আরেকজন সদস্য ক্রিকেট খেলছে, আরমান জাফর, তার সম্পর্কে কিছু বলুন। 

ওয়াসিমঃ হ্যাঁ সে খুব ভালো ক্রিকেটার। এখন সে ইনজুরির কারণে খেলা থেকে দূরে, তবে সে প্রতিভাবান। প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে খুব ভালো সূচনা হয় নি তবে তার প্রতিভা আছে। যখন সে ফিরবে তখন প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করতে হবে। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ কোচিং, ধারাভাষ্যকার, ওয়াসিম জাফরের ভবিষ্যৎ কী? 

ওয়াসিমঃ হতে পারে, আমি ক্রিকেটের সাথেই থাকতে চাই, সেটা যেভাবেই হোক। ধারাভাষ্যকার হিসেবে হোক কিংবা কোচিং। আমি যেটা উপভোগ করব সেটাই চালিয়ে যাব। আমি এখনো এমন কিছু করি নি। যার কারণে বলতে পারছি না কোন পথ ধরব। যদি কিছু করি সেটা উপভোগ করেই করব।