বাংলাদেশ-উইন্ডিজ সিরিজ

ঢাকার মাঠে ভাগ্য বদলের আশায় বাংলাদেশ

তামজিদুর রহমান

তামজিদুর রহমান
প্রকাশের তারিখ: 12:35 বুধবার, 19 ডিসেম্বর, 2018

|| ডেস্ক রিপোর্ট ||

টি টুয়েন্টি ফরম্যাটে উইন্ডিজরা যে কতটা শক্তিশালী দল এর প্রমাণ গত ম্যাচেই চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছে বাংলাদেশ। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তিন ম্যাচে টি টুয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে ক্যারিবিয়ানদের কাছে রীতিমত খড়কুটোর মতোই উড়ে গিয়েছিলো সাকিব আল হাসানের দল।

বাংলাদেশের ১২৯ রানের জবাবে খেলতে নেমে ৫৫ বল হাতে রেখে ৮ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছিলো সফরকারীরা। সিরিজে পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশ তাই বর্তমানে রয়েছে অনেকটাই কোণঠাসা অবস্থার মধ্যে। সিলেট থেকে ঢাকায় ফিরে নিজেদের ভাগ্য বদলাতে ইচ্ছুক তারা ব্যাপকভাবে। সেই লক্ষ্যেই আগামীকাল মিরপুর শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামে বিকেল পাঁচটায় উইন্ডিজদের মুখোমুখি হবে টাইগাররা আবারো।

এদিকে এই ম্যাচে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ শিবিরে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের ব্যাটিং। গত ম্যাচে ব্যাটিংয়ে একেবারেই নিস্প্রভ ছিলেন বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। ব্যাট হাতে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের ৬১ রানের ইনিংসটি ছাড়া আর বলার মতো কেউ রান করতে পারেননি। সুতরাং আগামীকালের ম্যাচে টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনার বড় অংশ জুড়ে থাকবে ব্যাটিংয়ে ভালো করার বিষয়টি। 

অবশ্য শুধু ব্যাটিংয়েই নয়, বোলিংয়ের অবস্থাও যে ছিলো তাথৈবচ তা উইন্ডিজদের স্কোর দেখলেই প্রমাণ পাওয়া যায়। যে ক্যারিবিয়ানরা ওয়ানডেতে তেমন সুবিধাই করতে পারেনি টাইগার বোলারদের সামনে তাঁরাই যেন প্রথম টি টুয়েন্টিতে অচেনা বেশে হাজির হয়েছিলো। 

সাকিব, মিরাজ, মুস্তাফিজদের বলে চার ছক্কার ফুলঝুরি দেখিয়েছিলো তারা। সুতরাং আগামীকালের ম্যাচে জয় দিয়ে সিরিজে ফিরতে হলে যথেষ্ট আটঘাঁট বেঁধেই খেলতে নামতে হবে সাকিব বাহিনীকে। উইন্ডিজদের আটকাতে ভিন্ন রণ কৌশল সাজাতে হবে তাদের।  

মুদ্রার উল্টো পিঠ অবশ্য টি টুয়েন্টি 'স্পেশালিষ্ট' উইন্ডিজদের ক্ষেত্রে। প্রথম ম্যাচটি হেসে খেলে জেতার পর বর্তমানে বেশ নির্ভার থাকছে তারা। দলের ব্যাটিং এবং বোলিং নিয়েও আপাতদৃষ্টিতে খুব একটা চিন্তা নেই দলটির। ব্যাটিংয়ে আছে তাদের এভিন লুইস, শাই হোপ, নিকোলাস পুরানদের মতো বিশ্ব মাতানো টি টুয়েন্টি ব্যাটসম্যান। যাদের ক্ষুরধার ব্যাটিং আগের ম্যাচেও দেখেছে টাইগাররা।

অপরদিকে বোলিংয়ে কিমো পল এবং ওশানে থমাসের সাথে দোসর হিসেবে যোগ দিয়েছেন শেল্ডন কট্রেল। যিনি কিনা সিলেটের মাঠে একাই ৪ উইকেট নিয়ে ধ্বস নামিয়েছিলেন বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপে। সুতরাং সবমিলিয়ে অনেকটা স্বস্তিতেই থাকছে ক্যারিবিয়ানরা।   

মুখোমুখিঃ

এখন পর্যন্ত সিলেটের ম্যাচটি সহ মোট ১০টি ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে উইন্ডিজ এবং বাংলাদেশ। যার মধ্যে উইন্ডিজরা জিতেছে ৫টি ম্যাচে (সর্বশেষ সিলেটে)। আর ৪টি জয় পেয়েছে বাংলাদশ। আর একটিতে কোনও ফলাফল আসে নি। উইন্ডিজদের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বশেষ দুটি জয় এসেছিলো গত ক্যারিবিয়ান সফরে। 

পিচ এবং কন্ডিশনঃ

আগামীকালের ম্যাচে ঢাকার উইকেট স্পিন সহায়ক হতে পারে বলে ধারণা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্পিন নির্ভরতা এবং শক্তিমত্তার কথা চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে। আর উইকেট স্পিন সহায়ক হলে সাকিব এবং মিরাজের সাথে বাড়তি স্পিনার হিসেবে দলে আসতে পারেন নাজমুল ইসলাম অপু।

সেক্ষেত্রে সাইড বেঞ্চে থাকতে হবে আরিফুল হককে। এদিকে আগামীকালের আবহাওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী দুপুর পর্যন্ত হালকা কুয়াশা থাকতে পারে। তবে বিকেলের দিকে তা কেটে যাবে অনেকটাই। এছাড়াও বৃষ্টি সম্ভাবনা তেমন একটি নেই। 

স্পট লাইটেঃ 

সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ):

গত ম্যাচে ব্যাট হাতে একাই লড়াই করে গিয়েছিলেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। দলের বিপর্যয়ে খেলেছিলেন ৪৩ বলে ৬১ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস। যেখানে ছিলো ৮টি চার এবং ২টি ছয়। সুতরাং আগামীকালের ম্যাচেও তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকবে দল।

শুধু ব্যাট হাতেই নয়, বোলিংয়ের ক্ষেত্রেও প্রভাব রাখবেন সাকিব- এমন প্রত্যাশাই থাকবে তাঁর কাছে। এখন পর্যন্ত গত ম্যাচটি সহ মোট ৮টি আন্তর্জাতিক টি টুয়েন্টিতে উইন্ডিজদের মুখোমুখি হয়েছেন সাকিব। যেখানে ২৪.২৫ গড় এবং ১৩৮.৫৭ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন ১৯৪। অপরদিকে বল হাতে তাঁর শিকার ১১টি উইকেট।

শাই হোপ (উইন্ডিজ):

ওয়ানডে সিরিজের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন উইন্ডিজ এই ওপেনার। দারুণ সেই পারফর্মেন্সের ধারাবাহিকতা টি টুয়েন্টিতেও বয়ে নিয়ে এসেছেন তিনি। প্রথম ম্যাচে খেলেছেন মাত্র ২৩ বলে ৫৫ রানের বিধ্বংসী একটি ইনিংস। হাঁকিয়েছিলেন ৬টি ছয় এবং ৩টি চার। এবার দ্বিতীয় ম্যাচেও যে একই ভাবে বাংলাদেশের বোলারদের ওপর চড়াও হতে চাইবেন হোপ তা বলাই বাহুল্য।   

বাংলাদেশ স্কোয়াডঃ 

সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), আবু হায়দার রনি, আরিফুল হক, লিটন কুমার দাস, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ মিঠুন, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মুস্তাফিজুর রহমান, নাজমুল ইসলাম অপু, রুবেল হোসেন, সৌম্য সরকার, তামিম ইকবাল। 

উইন্ডিজ স্কোয়াডঃ

কার্লোস ব্র্যাথওয়েট (অধিনায়ক), ফাবিয়ান অ্যালেন, ড্যারেন ব্রাভো, শেল্ডন কটরেল, শিমরন হেটমায়ার, শাই হোপ, এভিন লুইস, কিমো পল, খারি পিয়েরে, নিকোলাস পুরান, রোভম্যান পাওয়েল, দীনেশ রামদিন, শিরফানে রাদারফোর্ড, ওশানে থমাস, কেসরিক উইলিয়ামস।