বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ে সিরিজ

ভয় তাড়ালেন সেই মুশফিকই

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 19:37 সোমবার, 12 নভেম্বর, 2018

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

১৯৯ রানে অপরাজিত মুশফিকুর রহিম, মিরপুরে হাজার খানেক দর্শক থেকে শুরু করে প্রেস বক্সের সাংবাদিকরা, সবাই মুখিয়ে আছেন, মহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায়। বল হাতে সিলেট টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মুহূর্তেই চার উইকেট শিকার করে নেয়া তরুন লেগ স্পিনার ব্রেন্ডন মাভুতা। 

উইকেটে জমে যাওয়া মুশফিক সিঙ্গেলের খোঁজে থাকবে, সেটা সবার জানা, প্রতিপক্ষের অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা ফিল্ডার দিয়ে মুশফিককে ঘিরে ফেললেন। মাভুতা অফ স্ট্যাম্পের আশেপাশে একে একে চারটি লেগ স্পিন ছাড়েন, চারটিই সামলে নেন মুশফিক। অপেক্ষা বাড়ে, মুশফিকের অপেক্ষা, পুরো মিরপুর ও আরও বৃহৎ দৃষ্টিকোণ থেকে, পুরো বাংলাদেশের অপেক্ষা। 

পঞ্চম বলটি একটু ফুল লেন্থের। মুশফিক তাঁর পছন্দের সুইপ শটে রান খোঁজার চেষ্টা করেন, কিন্তু ফরওয়ার্ড শর্ট লেগ ফিল্ডার সতর্ক ছিলেন। ওভারের শেষ বলেই ডাবল সেঞ্চুরি হতে চলছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে চতুর্থ, মুশফিকের দ্বিতীয়? 

কিন্তু মাভুতার লেন্থ বলটিকে কোন রানের আশা না করেই অফ সাইডে খেলেন মুশফিক। অপেক্ষা বাড়ে, আরও এক ওভারের অপেক্ষা। সাথে ভয়ও বৃদ্ধি পায়। কে জানে, শেষ মুহূর্তে এসে তালগোল পাকিয়ে আউট হবেন না তো? সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মুশফিকের তীরে এসে তরী ডোবানোর উদাহরণ তো কম নয়। 

২০১৬ সালের বিশ্বকাপ টি-টুয়েন্টির ম্যাচ থেকে শুরু করে চলতি বছরের ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ, গত দুই বছরে বেশ কয়েকবার চাপের মুখে স্নায়ুর পরীক্ষায় ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। অনেক সময় ম্যাচ জয়ের আগেই উল্লাসে মেতেছেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতিয়ে আসতে পারেননি। 

মুশফিকের ১৯৯ রানে আটকে থাকার সময় পেছনের তিক্ত অভিজ্ঞতা গুলো ভয় হয়ে ধাওয়া দিচ্ছিল। কিন্তু এবারের মুশফিক ভিন্ন, পাথরের দেয়ালের মত শক্ত। আবেগের স্রোত বহমান থাকলেও আবেগ নিয়ন্ত্রণের পথটা চেনা হয়ে গেছে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলা মুশফিকের। দিন শেষে মুশফিক বলেছেন,

'নব্বই এর ঘরে আমার মনে হয় না এমন কেউ আছে যে স্নায়ুর চাপ অনুভব করে না। তাহলে সে মনে হয় মানুষ না, ফেরেশতা। যদি খেয়াল করে দেখেন, সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান শচিন টেন্ডুলকার, তিনিও অনেকবার নব্বই এর ঘরে আউট হয়েছেন। যদিও আমি তাঁর পর্যায়ে যাই নি। একজন মানুষ ব্যক্তি হিসেবে কেমন সেই সময়টায় বুঝা যায়। এটা নিয়ন্ত্রণে আনার বিষয়। আর সেটাই চেষ্টা করেছি। আমার মাথায় ছিল আরেকটু কষ্ট করলেই দুইশ হতেই পারে। তারচাইতে বড় ছিল বিশ্বাস করে যাওয়া।

মুশফিক বিশ্বাস করে গেছেন, তাঁর শরীরী ভাষা বিশ্বাস বাড়িয়েছে পুরো স্টেডিয়ামের। পরের ওভারেই মিরাজের সিঙ্গেলে স্ট্রাইক দখল করেই সিকান্দার রাজার অফ স্পিন মেশানো বলকে স্কয়ার লেগে খেলে পৌঁছে গেলেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে।

মুশফিকের জন্য পথচলাটা কখনই মসৃণ ছিল না। ২০০৫ সালে টেস্টের অভিষেকের পর ২০১০ সালে এসে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি অর্জন করা থেকে শুরু করে কঠোর পরিশ্রমের চূড়ান্ত উদাহরণ সৃষ্টি করে আজকের মুশফিকে পরিনত হয়েছেন তিনি। এই বাংলাদেশ দলের দীর্ঘক্ষণ ব্যাট করে যাওয়ার ক্ষেত্রে অনেকের চেয়ে এগিয়ে থাকবেন মুশফিক। কিন্তু এই দেয়াল সদৃশ মানসিকতা লালন করতে বেশ কাঠখড় পড়াতে হয় মুশফিককে।

'মনোযোগের ব্যাপারটা সাধনার ব্যাপার। আর এটা সব সময় আসে না। আমি অনুশীলন সেভাবেই করা চেষ্টা করি যেন ম্যাচে এই ব্যাপারটা পাই। চেষ্টা করি মনোযোগ ধরে রেখে যত বেশিক্ষণ সম্ভব নেটে ব্যাটিং করার। যদি আউট না হলে ব্যাটিং করতে পারি সেটা আমাকে ম্যাচ খুব সাহায্য করে। একেক জনের প্রস্তুতি একেক রকম, তো আমার প্রস্তুতিটা এরকম। এটা আমাকে বড় একটা আত্মবিশ্বাস দেয় যে, আমি আমার কাজটা করেছি সব ঠিক থাকলে আশা করি ম্যাচেও বাস্তবায়ন করতে পারব।'