ক্রিকেট লিজেন্ডস

রঙ্গনা হেরাথঃ লঙ্কান ক্রিকেটের চিরসবুজ তারকা

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট

ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট
প্রকাশের তারিখ: 21:08 শুক্রবার, 09 নভেম্বর, 2018

|| ফ্রাইডে স্পেশাল ||

যদি প্রশ্ন করা হয়, মুরালি-উত্তর যুগে বল হাতে শ্রীলঙ্কার সেরা ম্যাচ উইনার কে? উত্তরে কেবল একটাই নাম আসবে — হেরাথ মুদিয়ানসেলাগে রঙ্গনা কীর্তি বান্দারা হেরাথ! টেস্ট ইতিহাসের সফলতম বাঁহাতি স্পিনার, সফলতম বাঁহাতি বোলার!

প্রায় বছরখানেক হতে চলল পেরিয়েছেন চল্লিশের কোটা। রঙিন পোশাকের ক্রিকেট ছেড়ে দিয়েছেন তারও দুই বছর আগে। তাছাড়া পিঠ এবং হাঁটুর ইনজুরি সমস্যাও তাঁকে ভোগাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। এবারে তাই আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় বলে দিলেন সাদা পোশাকের ক্রিকেটকেও। ইতি টানলেন দীর্ঘ ১৯ বছরের বর্ণাঢ্য আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের।

টেস্ট অভিষেক সেই ১৯৯৯ সালে। নব্বইয়ের দশকে অভিষেক হওয়া টেস্ট ক্রিকেটারদের একমাত্র প্রতিনিধি হয়েই ছিলেন এতদিন। হেরাথের অবসরের পর সেই প্রতিনিধিত্ব আর রইল না।

অভিষেকের পর থেকে ক্যারিয়ারের অর্ধেকের বেশি সময় তিনি ছিলেন স্পিন জাদুকর মুত্তিয়া মুরালিধরনের ছায়া হয়ে। সত্যি বলতে ২০০৯ সালের আগে তাঁকে সেভাবে কেউ চিনতও না। জাতীয় দলে প্রায় সময় উপেক্ষিতই থাকতেন, খেলার সুযোগ মিলত কালেভদ্রে। তবে মুরালির বিদায়ের পর যেদিন থেকে তিনি দলের স্পিন আক্রমণের দায়িত্বটা বুঝে নিলেন, সেদিন থেকেই তাঁর ক্যারিয়ার যেন পুনর্জন্ম নিল। অসামান্য দক্ষতায় জেতাতে শুরু করলেন ম্যাচের পর ম্যাচ, সিরিজের পর সিরিজ। মেতে উঠলেন রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলায়। নিজেকে নিয়ে গেলেন গ্রেটদের কাতারে, অনন্য এক উচ্চতায়।

মুরালি-উত্তর যুগের হেরাথ আর আগের হেরাথের মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে একটা পরিসংখ্যান দিচ্ছি। ২০১০ সালের জুলাইয়ে মুরালির অবসরের পর টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া স্পিনারের নাম রঙ্গনা হেরাথ! মুরালির অবসরের আগে ২২ টেস্টে হেরাথের ছিল মাত্র ৭১ উইকেট, ইনিংসে ৫ উইকেট ছিল ৪ বার। আর মুরালির অবসরের পর ৭১ টেস্টে তাঁর শিকার ৩৬২ উইকেট! ৫ উইকেট ৩০ বার, ম্যাচে ১০ উইকেট ৯ বার!

ক্যারিয়ারের প্রথম ২২ ম্যাচে যেখানে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন মাত্র ১ বার, সেখানে পরের ৭১ ম্যাচের ১০টিতেই হয়েছেন ম্যাচসেরা; ৫ বার হয়েছেন সিরিজসেরা! মুরালিধরনের পর হেরাথই যে শ্রীলংকার ইতিহাসে এক নম্বর বোলার এ নিয়ে দ্বিমত করার কোন সুযোগই রাখেন নি তিনি।

হেরাথকে মনে করা হয় ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা বাঁহাতি ফিঙ্গার স্পিনারদের একজন। একজন আদর্শ বাঁহাতি স্পিনার হওয়ার সব উপকরণই ছিল তাঁর মধ্যে। বলের ফ্লাইট, লুপ, গতি এবং অ্যাঙ্গেলের সুক্ষ্ম বৈচিত্র‍্য তো ছিলই। পাশাপাশি ন্যাচারাল ভ্যারিয়েশন হিসেবে ছিল ইনসুইঙ্গিং আর্ম বল এবং 'মিস্ট্রিয়াস' ক্যারম বল। তবে হেরাথের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা ছিল অ্যাকুরেসি, নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাটসম্যানের মাইন্ড রিড করতে পারার ক্ষমতা। লম্বা স্পেলে ওভারের পর ওভার একটানা বোলিং করে যেতে পারতেন। কখনো অধৈর্য কিংবা ক্লান্ত হতেন না।

উইজডেনের ভাষায়, “His unrelenting accuracy, and his ability to subtly vary his pace and flight have made him a potent force even overseas, where conditions don't always favour spin bowling.”

প্রতিভা নয়, হেরাথের সাফল্যের মূলে ছিল কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, প্রতিজ্ঞা এবং আত্মনিবেদন। বয়স বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে তিনি নিজেকে করেছেন আরও নিখুঁত, আরও কার্যকর, আরও ধারাবাহিক। সময় যতই গড়িয়েছে, বোলিংয়ের ধার যেন ততই তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর হয়েছে।

শ্রীলংকার হয়ে ৯৩টি টেস্ট, ৭১টি ওয়ানডে এবং ১৭টি কুড়ি ওভারের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন এই কিংবদন্তি স্পিনার। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তাঁর রয়েছে ৫০০ এর বেশি উইকেট এবং ২ হাজারের কাছাকাছি রান। টেস্টে ব্যাট হাতে ৩টি ফিফটিও আছে তাঁর।

টেস্টে মাত্র ২৮.০৯ গড়ে হেরাথের শিকার ৪৩৩ উইকেট। সব মিলিয়ে টেস্ট ইতিহাসের অষ্টম সর্বোচ্চ এবং নিজ দেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার তিনি। ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন ৩৪ বার আর ম্যাচে ১০ উইকেট পেয়েছেন ৯ বার।

চলুন এক নজরে দেখে নিই রঙ্গনা হেরাথের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার হাইলাইটস।

❐ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গলে হেরাথের টেস্ট অভিষেক ১৯৯৯ সালে। মাত্র ২১ বছর বয়সে। অভিষেকে তাঁর প্রাপ্তি ছিল বল হাতে ৯৭ রান খরচায় ৪ উইকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হেরাথের প্রথম শিকার ছিলেন রিকি পন্টিং।

❐ ২০০৪ সালে হারারাতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক। কোন উইকেট না পেলেও ১০ ওভার বোলিং করে রান দিয়েছিলেন মাত্র ৩৭।

❐ ১৯৯৯-২০০৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ১৪ টেস্ট খেলা হেরাথের পরিসংখ্যান ছিল একেবারেই সাদামাটা। প্রায় ৪০ ছুঁইছুঁই গড়ে উইকেট পেয়েছিলেন মাত্র ৩৬টা!

❐ ২০০৯ সালের জুলাই। মুরালির চোটে একরকম  অপ্রত্যাশিতভাবেই ডাক পেয়ে গেলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দলে। আর প্রথম সুযোগেই রীতিমতো বাজিমাত করলেন তিনি। গল টেস্টে দলকে জেতালেন ১৫ রানে ৪ উইকেটের বিধ্বংসী এক স্পেলে। চতুর্থ ইনিংসে পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল ১৬৮। হেরাথের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কা জিতেছিল ৫০ রানে। 

পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক গল টেস্টকে মনে করা হয় হেরাথের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট। গল টেস্টের সাফল্য হেরাথের মৃতপ্রায় ক্যারিয়ারে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিল।

এরপর কলম্বোর পি সারা ওভালে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত নিলেন ৫ উইকেট। তিন ম্যাচে মাত্র ২৬ গড়ে তুলে নিলেন ১৭ উইকেট। পরের মাসেই ৮ উইকেট নিয়ে কলম্বো টেস্ট জেতালেন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।

২০০৯ সালকে বলা যেতে পারে হেরাথের প্রত্যাবর্তনের বছর। চারবার ইনিংসে ৫ উইকেটসহ পেয়েছিলেন ৩৪ উইকেট।

❐ ২০১০ সালের জুলাইতে গল টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ১০ উইকেটের অবিস্মরণীয় এক জয় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। বল হাতে মাত্র ২ উইকেট পেলেও হেরাথের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল ব্যাট হাতে। খেলেছিলেন অপরাজিত ৮০ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।

❐ ২০১১ সালের আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরাথের টি২০ অভিষেক, ভেন্যু ছিল পাল্লেকেলে। ৩ ওভার বোলিং করে মাত্র ১১ রানের বিনিময়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট।

একই বছর ডিসেম্বরে হেরাথের অনবদ্য বোলিং নৈপুণ্যে ইতিহাসে প্রথমবারের মত দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েছিল শ্রীলঙ্কা। ডারবানের কিংসমিডে বল হাতে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। শ্রীলঙ্কা জিতেছিল ২০৮ রানের বিশাল ব্যবধানে।

❐ ২০১২ সালের মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত শিকার করেন ১০ উইকেট। গল টেস্টে ১২ উইকেট (৬/৭৪ ও ৬/৯৭) নিয়ে হন ম্যাচসেরা। দুই টেস্টের সিরিজে মাত্র ১৭.৯৫ গড়ে ১৯ উইকেট নিয়ে জিতে নেন সিরিজসেরার পুরস্কার।

এরপর নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে ৩ বার ইনিংসে ৫ উইকেটসহ মাত্র ১৩.৯০ গড়ে তুলে নেন ২০ উইকেট!

২০১২ সালকে বলা যায় হেরাথের টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা বছর। সে বছর ৭ বার ইনিংসে ৫ উইকেট ও দুইবার ম্যাচে ১০ উইকেটসহ মাত্র ২৩.৬১ গড়ে তাঁর শিকার ছিল ৬০ উইকেট।

❐ ২০১৩ সালের মার্চে বাংলাদেশের বিপক্ষে কলম্বো টেস্ট জয়ের নায়ক ছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। ধ্রুপদী বাঁহাতি স্পিনের অনুপম প্রদর্শনী দেখিয়ে একাই নিয়েছিলেন ১২ উইকেট (৫/৬৮ ও ৭/৮৯)।

জুলাইতে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং স্পেলটা করেছিলেন ভারতের বিপক্ষে। ১০ ওভার বল করে মাত্র ২০ রানে তুলে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় অধিনায়ক ধোনির বীরত্বে মাত্র ১ উইকেটে হেরেছিল শ্রীলঙ্কা।

❐ ২০১৪ সালের মার্চে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আইসিসি টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপের গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন হেরাথ। ৫ উইকেটের সঙ্গে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে দুটি রান আউটও করেছিলেন তিনি।

সেদিন মাত্র ২১ বলের বিধ্বংসী এক স্পেলে ধসিয়ে দিয়েছিলেন কিউইদের টপ এবং মিডল অর্ডার। হেরাথের বাঁহাতি ঘুর্ণিজাদুতে আচ্ছন্ন হয়ে সেদিন একে একে প্যাভিলিয়নে ফেরত গিয়েছিলেন মার্টিন গাপটিল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, রস টেলর, জিমি নিশাম ও লুক রনকির মত টি২০ স্পেশালিষ্টরা। ১২০ রানের 'সহজ' টার্গেট চেজ করতে গিয়ে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয়েছিল মাত্র ৬০ রানে!

নিঃসন্দেহে এটি ছিল সীমিত ওভারের ক্রিকেটে হেরাথের সেরা সাফল্য। তবে শুধু ওই ম্যাচ নয়, দেশের হয়ে টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে পারাটাও ছিল বিশেষ কিছু। 

জুনে ইংল্যান্ডের মাটিতে ১৬ বছর পর টেস্ট সিরিজ জয়লাভ (১-০) করে শ্রীলঙ্কা। যেখানে হেরাথের অবদান ছিল ব্যাট হাতে ৬৫ রান এবং বল হাতে ৮ উইকেট।

আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মাত্র ১৫.১৩ গড়ে হেরাথ নেন ২৩ উইকেট! কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ইতিহাসের প্রথম বাঁহাতি বোলার হিসেবে এক ইনিংসে শিকার করেন ৯ উইকেট (৯/১২৭)!

❐ ২০১৫ সালের আগস্টে গল টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ৬৩ রানের 'অভাবনীয়' এক জয় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে ৭ উইকেট নিয়ে জয়ের মূল কারিগর ছিলেন যথারীতি রঙ্গনা হেরাথ। আর ৩ উইকেট নিয়ে পার্শ্বনায়কের ভূমিকায় ছিলেন উদীয়মান অফ স্পিনার থারিন্ডু কৌশল।

১৭৫ রানের মামুলি পুঁজিকে সেদিন রীতিমতো 'এভারেস্ট' বানিয়ে ছেড়েছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। তাঁর স্পিন ফাঁদে ধরাশায়ী হয়ে একে একে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয়েছিল রাহুল, রোহিত, রাহানে, সাহা, হরভজন, ইশান্ত ও অশ্বিনকে।

উইজডেনের ভাষায়, “Herath realised that he needed to spin the ball harder to make a helpful pitch respond to him. And he did so emphatically.”

হেরাথের ৪৮ রানে ৭ উইকেট ভারতের বিপক্ষে যে কোন বাঁহাতি স্পিনারের সেরা বোলিং ফিগার। ১৯৩৪ সালে ইংল্যান্ডের হেডলি ভেরিটির ৭/৪৯ ছিল আগের সেরা।

উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক গল টেস্টটাই ছিল লঙ্কান গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট।

অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মাত্র ১৬.১৩ গড়ে ১৫ উইকেট নিয়ে আরও একবার সিরিজসেরা  হয়েছিলেন হেরাথ।

❐ ২০১৬ সালের ২৯ মে, লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুরালিধরন ও ভাসের পর 'তৃতীয়' শ্রীলঙ্কান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক অর্জন করেন রঙ্গনা হেরাথ।

আগস্টে তৎকালীন টেস্ট র‍্যাংকিংয়ের ১ নম্বর দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইতিহাসে প্রথমবারের মত টেস্ট সিরিজ (৩-০) জয়ের গৌরব অর্জন করে শ্রীলঙ্কা। ৩ ম্যাচ খেলে মাত্র ১২.৭৫ গড়ে ২৮ উইকেট নিয়ে যথারীতি সিরিজসেরা হয়েছিলেন রঙ্গনা হেরাথ।

গল টেস্টে মাত্র 'দ্বিতীয়' শ্রীলঙ্কান হিসেবে করেছিলেন 'হ্যাটট্রিক'! পর পর তিন বলে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অ্যাডাম ভোজেস, পিটার নেভিল এবং মিচেল স্টার্ককে। ১৮৯২ সালে জনি ব্রিগসের পর ইতিহাসের মাত্র 'দ্বিতীয়' লেফট আর্ম অর্থোডক্স বোলার হিসেবে টেস্টে হ্যাটট্রিক করেন হেরাথ।

অক্টোবর-নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে সফরের দুটি টেস্টে নিয়মিত অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হেরাথ। বল হাতে মাত্র ১৫.১১ গড়ে ১৯ উইকেট নিয়ে সিরিজ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সামনে থেকে।

উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ।

❐ ২০১৭ সালের মার্চে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও শ্রীলঙ্কার অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন হেরাথ। ১-১ এ ড্র হওয়া সিরিজের সফলতম বোলারও (১৮.০ গড়ে ১৬ উইকেট) ছিলেন তিনিই। 

জুলাইতে কলম্বোর প্রেমাদাসায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের 'ম্যান অফ দি ম্যাচ' হেরাথের শিকার ছিল ১১ উইকেট।

সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ইউএই সফরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ (২-০) জয়ের নেপথ্য নায়ক ছিলেন হেরাথ। মাত্র ১৭.৩১ গড়ে ১৬ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন সিরিজসেরা।

৮ অক্টোবর, দুবাই টেস্টে মুরালিধরনের পর 'দ্বিতীয়' শ্রীলঙ্কান এবং ইতিহাসের প্রথম বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক অর্জন করেন তিনি।

❐ ২০১৮ সালের জুলাইতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ১৭.২৫ গড়ে ১২ উইকেট নিয়ে দলকে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতাতে রেখেছিলেন প্রধান ভূমিকা।

২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর। 'অভিষেকের ভেন্যু' গলে হেরাথ খেললেন টেস্ট ক্যারিয়ারের বিদায়ী ম্যাচ, বল হাতে নিলেন ৩ উইকেট। ক্যারিয়ারের শুরু যেখানে, শেষটাও ঠিক সেখানেই! কী অদ্ভুত মিল, তাই না!

প্রথম ইনিংসে ইংলিশ অধিনায়ক জো রুটের উইকেটটি ছিল 'গলে' হেরাথের শততম টেস্ট উইকেট। টেস্ট ইতিহাসে এর আগে নির্দিষ্ট কোন ভেন্যুতে ১০০ বা তার বেশি উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব ছিল শুধু মুত্তিয়া মুরালিধরন (এসএসসি, ক্যান্ডি) আর জিমি অ্যান্ডারসনের (লর্ডস)। 'তৃতীয়' ক্রিকেটার হিসেবে অভিজাত  এই ক্লাবে যোগ দিলেন হেরাথ। 

চলুন এক নজরে দেখে নিই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হেরাথের যত রেকর্ড।

• টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলারদের তালিকায় এই মুহূর্তে যুগ্মভাবে ৮ম স্থানে অাছেন রঙ্গনা হেরাথ (৪৩৩)। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ উইকেট নিয়ে তিনি ছাড়িয়ে যান কিংবদন্তি অলরাউন্ডার স্যার রিচার্ড হ্যাডলিকে (৪৩১)।

• টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি স্পিনারদের তালিকায় মুরালি (৮০০), ওয়ার্ন (৭০৮) এবং কুম্বলের (৬১৯) পর চার নম্বরে রয়েছেন রঙ্গনা হেরাথ (৪৩৩)।

• ৯৩ টেস্টে ৪৩৩ উইকেট নিয়ে ইতিহাসের সফলতম বাঁহাতি বোলার রঙ্গনা হেরাথ। ৪১৪ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন ওয়াসিম আকরাম।

• বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক রঙ্গনা হেরাথ (৪৩৩)। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ড্যানিয়েল ভেটোরি (৩৬২)।

• ৯৩ টেস্টে ৩৪ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন হেরাথ যা বাঁহাতি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাঁর চেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব রয়েছে কেবল ৪ জনের। অনিল কুম্বলে (১৩২ টেস্টে ৩৫ বার), স্যার রিচার্ড হ্যাডলি (৮৬ টেস্টে ৩৬ বার), শেন ওয়ার্ন (১৪৫ টেস্টে ৩৭ বার) ও মুত্তিয়া মুরালিধরন (১৩৩ টেস্টে ৬৭ বার)।

• টেস্টে সবচেয়ে বেশিবার ১০ উইকেট পাওয়া বোলারদের মধ্যে মুরালি (২২ বার) এবং ওয়ার্নের (১০ বার) পর স্যার রিচার্ড হ্যাডলির (৯ বার) সাথে যৌথভাবে 'তৃতীয়' স্থানে আছেন রঙ্গনা হেরাথ (৯ বার)।

• টেস্টে ৪০০ উইকেট পাওয়া প্রথম বাঁহাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ। এই মাইলফলক অর্জন করতে হেরাথের লেগেছে মাত্র ৮৪ টেস্ট। তাঁর চেয়ে কম টেস্ট খেলে ৪০০ উইকেট পেয়েছেন কেবল স্টেইন (৮০) এবং মুরালিধরন (৭২)।

• সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে অন্তত একবার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করা বোলার আছেন মাত্র ৪ জন। তাঁরা হলেন যথাক্রমে মুত্তিয়া মুরালিধরন, ডেল স্টেইন, রঙ্গনা হেরাথ* এবং সাকিব আল হাসান।

• টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক শেন ওয়ার্ন (১৩৮)। দুই নম্বরে থাকা রঙ্গনা হেরাথের শিকার ১১৫ উইকেট।

• টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট নেয়া বোলারের নাম রঙ্গনা হেরাথ (১২ বার)! যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওয়ার্ন ও মুরালি নিয়েছেন ৭ বার করে।

উইকেট সংখ্যায় ওয়ার্ন-মুরালিরা রীতিমতো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু এই একটা রেকর্ডে বাকি সবাইকে পেছনে ফেলে শীর্ষে অবস্থান করছেন হেরাথ।

• দুই টেস্টের সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ডটিও রঙ্গনা হেরাথের দখলে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৪ সালে দুই টেস্টের সিরিজে ২৩ উইকেট নিয়ে ভেঙেছিলেন আরেক স্বদেশীর রেকর্ড। এর আগে ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মুরালি পেয়েছিলেন ২২ উইকেট।

• পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে 'একমাত্র বোলার' হিসেবে তিনি পেরিয়েছেন ১০০ উইকেটের কোটা।

• বয়স ৩৫ পূর্ণ হওয়ার আগেই ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেল কত কত ক্রিকেটারের! অথচ ৩৫ পেরোনোর পর টেস্টে সবচেয়ে বেশি ২৩০ উইকেটের মালিক রঙ্গনা হেরাথ। ইতিহাসে আর কোন বোলার যেখানে ২০০ উইকেটই নিতে পারে নি! ১৯২ উইকেট নিয়ে হেরাথের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ল্যারি গ্রিমেট।

• টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি বয়সে হ্যাটট্রিক করা বোলারের নাম রঙ্গনা হেরাথ। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করার দিন তাঁর বয়স হয়েছিল ৩৮ বছর ১৩৯ দিন।

প্রথম শ্রীলংকান হিসেবে অধিনায়কত্বের প্রথম তিন টেস্টেই জয় পাওয়া ক্যাপ্টেনের নাম রঙ্গনা হেরাথ। ২০১৭ সালে জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা তিন টেস্ট জিতেছিলেন 'ভারপ্রাপ্ত' অধিনায়কের ভূমিকায়।

খেলাধুলার জগতে বহুল প্রচলিত শব্দ যুগল ‘লেট ব্লুমার’। তারই সার্থক উদাহরণ হলেন রঙ্গনা হেরাথ। যে ফুল দেরিতে ফোটে, তার সুঘ্রাণ যে কতটা তীব্র হতে পারে, সেটা হেরাথকে দেখলেই বোঝা যায়। অন্যরা যে বয়সে শেষের ডাক শুনতে পান সেই বয়সেই 'হেরাথের' মত কেউ কেউ খুঁজে পান নতুন সাফল্যের মন্ত্র। যার শুরুর গল্পটা আক্ষেপ আর অপূর্ণতার হলেও শেষটা প্রাপ্তি আর অর্জনে ভরপুর।

মুরালি-উত্তর যুগের হেরাথ আর আগের হেরাথের মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে একটা পরিসংখ্যান দিচ্ছি। ২০১০ সালের জুলাইয়ে মুরালির অবসরের পর টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়া স্পিনারের নাম রঙ্গনা হেরাথ! মুরালির অবসরের আগে ২২ টেস্টে হেরাথের ছিল মাত্র ৭১ উইকেট, ইনিংসে ৫ উইকেট ছিল ৪ বার। আর মুরালির অবসরের পর ৭১ টেস্টে তাঁর শিকার ৩৬২ উইকেট! ৫ উইকেট ৩০ বার, ম্যাচে ১০ উইকেট ৯ বার!

ক্যারিয়ারের প্রথম ২২ ম্যাচে যেখানে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন মাত্র ১ বার, সেখানে পরের ৭১ ম্যাচের ১০টিতেই হয়েছেন ম্যাচসেরা; ৫ বার হয়েছেন সিরিজসেরা! মুরালিধরনের পর হেরাথই যে শ্রীলংকার ইতিহাসে এক নম্বর বোলার এ নিয়ে দ্বিমত করার কোন সুযোগই রাখেন নি তিনি।

হেরাথকে মনে করা হয় ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা বাঁহাতি ফিঙ্গার স্পিনারদের একজন। একজন আদর্শ বাঁহাতি স্পিনার হওয়ার সব উপকরণই ছিল তাঁর মধ্যে। বলের ফ্লাইট, লুপ, গতি এবং অ্যাঙ্গেলের সুক্ষ্ম বৈচিত্র‍্য তো ছিলই। পাশাপাশি ন্যাচারাল ভ্যারিয়েশন হিসেবে ছিল ইনসুইঙ্গিং আর্ম বল এবং 'মিস্ট্রিয়াস' ক্যারম বল। তবে হেরাথের সবচেয়ে বড় শক্তির জায়গা ছিল অ্যাকুরেসি, নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যাটসম্যানের মাইন্ড রিড করতে পারার ক্ষমতা। লম্বা স্পেলে ওভারের পর ওভার একটানা বোলিং করে যেতে পারতেন। কখনো অধৈর্য কিংবা ক্লান্ত হতেন না।

উইজডেনের ভাষায়, “His unrelenting accuracy, and his ability to subtly vary his pace and flight have made him a potent force even overseas, where conditions don't always favour spin bowling.”

প্রতিভা নয়, হেরাথের সাফল্যের মূলে ছিল কঠোর পরিশ্রম, অধ্যবসায়, প্রতিজ্ঞা এবং আত্মনিবেদন। বয়স বাড়ার সাথে পাল্লা দিয়ে তিনি নিজেকে করেছেন আরও নিখুঁত, আরও কার্যকর, আরও ধারাবাহিক। সময় যতই গড়িয়েছে, বোলিংয়ের ধার যেন ততই তীক্ষ্ণ থেকে তীক্ষ্ণতর হয়েছে।

শ্রীলংকার হয়ে ৯৩টি টেস্ট, ৭১টি ওয়ানডে এবং ১৭টি কুড়ি ওভারের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন এই কিংবদন্তি স্পিনার। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে তাঁর রয়েছে ৫০০ এর বেশি উইকেট এবং ২ হাজারের কাছাকাছি রান। টেস্টে ব্যাট হাতে ৩টি ফিফটিও আছে তাঁর।

টেস্টে মাত্র ২৮.০৯ গড়ে হেরাথের শিকার ৪৩৩ উইকেট। সব মিলিয়ে টেস্ট ইতিহাসের অষ্টম সর্বোচ্চ এবং নিজ দেশের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলার তিনি। ইনিংসে ৫ উইকেট পেয়েছেন ৩৪ বার আর ম্যাচে ১০ উইকেট পেয়েছেন ৯ বার।

চলুন এক নজরে দেখে নিই রঙ্গনা হেরাথের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার হাইলাইটস।

❐ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গলে হেরাথের টেস্ট অভিষেক ১৯৯৯ সালে। মাত্র ২১ বছর বয়সে। অভিষেকে তাঁর প্রাপ্তি ছিল বল হাতে ৯৭ রান খরচায় ৪ উইকেট। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হেরাথের প্রথম শিকার ছিলেন রিকি পন্টিং।

❐ ২০০৪ সালে হারারাতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক। কোন উইকেট না পেলেও ১০ ওভার বোলিং করে রান দিয়েছিলেন মাত্র ৩৭।

❐ ১৯৯৯-২০০৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ১৪ টেস্ট খেলা হেরাথের পরিসংখ্যান ছিল একেবারেই সাদামাটা। প্রায় ৪০ ছুঁইছুঁই গড়ে উইকেট পেয়েছিলেন মাত্র ৩৬টা!

❐ ২০০৯ সালের জুলাই। মুরালির চোটে একরকম  অপ্রত্যাশিতভাবেই ডাক পেয়ে গেলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজের দলে। আর প্রথম সুযোগেই রীতিমতো বাজিমাত করলেন তিনি। গল টেস্টে দলকে জেতালেন ১৫ রানে ৪ উইকেটের বিধ্বংসী এক স্পেলে। চতুর্থ ইনিংসে পাকিস্তানের লক্ষ্য ছিল ১৬৮। হেরাথের দুর্দান্ত বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কা জিতেছিল ৫০ রানে। 

পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক গল টেস্টকে মনে করা হয় হেরাথের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় টার্নিং পয়েন্ট। গল টেস্টের সাফল্য হেরাথের মৃতপ্রায় ক্যারিয়ারে যেন নতুন প্রাণের সঞ্চার করেছিল।

এরপর কলম্বোর পি সারা ওভালে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত নিলেন ৫ উইকেট। তিন ম্যাচে মাত্র ২৬ গড়ে তুলে নিলেন ১৭ উইকেট। পরের মাসেই ৮ উইকেট নিয়ে কলম্বো টেস্ট জেতালেন নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে।

২০০৯ সালকে বলা যেতে পারে হেরাথের প্রত্যাবর্তনের বছর। চারবার ইনিংসে ৫ উইকেটসহ পেয়েছিলেন ৩৪ উইকেট।

❐ ২০১০ সালের জুলাইতে গল টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ১০ উইকেটের অবিস্মরণীয় এক জয় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। বল হাতে মাত্র ২ উইকেট পেলেও হেরাথের উল্লেখযোগ্য অবদান ছিল ব্যাট হাতে। খেলেছিলেন অপরাজিত ৮০ রানের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস।

❐ ২০১১ সালের আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরাথের টি২০ অভিষেক, ভেন্যু ছিল পাল্লেকেলে। ৩ ওভার বোলিং করে মাত্র ১১ রানের বিনিময়ে নিয়েছিলেন ১ উইকেট।

একই বছর ডিসেম্বরে হেরাথের অনবদ্য বোলিং নৈপুণ্যে ইতিহাসে প্রথমবারের মত দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট জয়ের অবিস্মরণীয় কীর্তি গড়েছিল শ্রীলঙ্কা। ডারবানের কিংসমিডে বল হাতে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। শ্রীলঙ্কা জিতেছিল ২০৮ রানের বিশাল ব্যবধানে।

❐ ২০১২ সালের মার্চে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত শিকার করেন ১০ উইকেট। গল টেস্টে ১২ উইকেট (৬/৭৪ ও ৬/৯৭) নিয়ে হন ম্যাচসেরা। দুই টেস্টের সিরিজে মাত্র ১৭.৯৫ গড়ে ১৯ উইকেট নিয়ে জিতে নেন সিরিজসেরার পুরস্কার।

এরপর নভেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুই টেস্টের সিরিজে ৩ বার ইনিংসে ৫ উইকেটসহ মাত্র ১৩.৯০ গড়ে তুলে নেন ২০ উইকেট!

২০১২ সালকে বলা যায় হেরাথের টেস্ট ক্যারিয়ারের সেরা বছর। সে বছর ৭ বার ইনিংসে ৫ উইকেট ও দুইবার ম্যাচে ১০ উইকেটসহ মাত্র ২৩.৬১ গড়ে তাঁর শিকার ছিল ৬০ উইকেট।

❐ ২০১৩ সালের মার্চে বাংলাদেশের বিপক্ষে কলম্বো টেস্ট জয়ের নায়ক ছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। ধ্রুপদী বাঁহাতি স্পিনের অনুপম প্রদর্শনী দেখিয়ে একাই নিয়েছিলেন ১২ উইকেট (৫/৬৮ ও ৭/৮৯)।

জুলাইতে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং স্পেলটা করেছিলেন ভারতের বিপক্ষে। ১০ ওভার বল করে মাত্র ২০ রানে তুলে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় অধিনায়ক ধোনির বীরত্বে মাত্র ১ উইকেটে হেরেছিল শ্রীলঙ্কা।

❐ ২০১৪ সালের মার্চে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আইসিসি টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপের গুরুত্বপূর্ণ এক ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাত্র ৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছিলেন হেরাথ। ৫ উইকেটের সঙ্গে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে দুটি রান আউটও করেছিলেন তিনি।

সেদিন মাত্র ২১ বলের বিধ্বংসী এক স্পেলে ধসিয়ে দিয়েছিলেন কিউইদের টপ এবং মিডল অর্ডার। হেরাথের বাঁহাতি ঘুর্ণিজাদুতে আচ্ছন্ন হয়ে সেদিন একে একে প্যাভিলিয়নে ফেরত গিয়েছিলেন মার্টিন গাপটিল, ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, রস টেলর, জিমি নিশাম ও লুক রনকির মত টি২০ স্পেশালিষ্টরা। ১২০ রানের 'সহজ' টার্গেট চেজ করতে গিয়ে নিউজিল্যান্ড অলআউট হয়েছিল মাত্র ৬০ রানে!

নিঃসন্দেহে এটি ছিল সীমিত ওভারের ক্রিকেটে হেরাথের সেরা সাফল্য। তবে শুধু ওই ম্যাচ নয়, দেশের হয়ে টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা জিততে পারাটাও ছিল বিশেষ কিছু। 

জুনে ইংল্যান্ডের মাটিতে ১৬ বছর পর টেস্ট সিরিজ জয়লাভ (১-০) করে শ্রীলঙ্কা। যেখানে হেরাথের অবদান ছিল ব্যাট হাতে ৬৫ রান এবং বল হাতে ৮ উইকেট।

আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মাত্র ১৫.১৩ গড়ে হেরাথ নেন ২৩ উইকেট! কলম্বোর সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ইতিহাসের প্রথম বাঁহাতি বোলার হিসেবে এক ইনিংসে শিকার করেন ৯ উইকেট (৯/১২৭)!

❐ ২০১৫ সালের আগস্টে গল টেস্টে ভারতের বিপক্ষে ৬৩ রানের 'অভাবনীয়' এক জয় পেয়েছিল শ্রীলঙ্কা। দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে ৭ উইকেট নিয়ে জয়ের মূল কারিগর ছিলেন যথারীতি রঙ্গনা হেরাথ। আর ৩ উইকেট নিয়ে পার্শ্বনায়কের ভূমিকায় ছিলেন উদীয়মান অফ স্পিনার থারিন্ডু কৌশল।

১৭৫ রানের মামুলি পুঁজিকে সেদিন রীতিমতো 'এভারেস্ট' বানিয়ে ছেড়েছিলেন রঙ্গনা হেরাথ। তাঁর স্পিন ফাঁদে ধরাশায়ী হয়ে একে একে প্যাভিলিয়নে ফিরতে হয়েছিল রাহুল, রোহিত, রাহানে, সাহা, হরভজন, ইশান্ত ও অশ্বিনকে।

উইজডেনের ভাষায়, “Herath realised that he needed to spin the ball harder to make a helpful pitch respond to him. And he did so emphatically.”

হেরাথের ৪৮ রানে ৭ উইকেট ভারতের বিপক্ষে যে কোন বাঁহাতি স্পিনারের সেরা বোলিং ফিগার। ১৯৩৪ সালে ইংল্যান্ডের হেডলি ভেরিটির ৭/৪৯ ছিল আগের সেরা।

উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক গল টেস্টটাই ছিল লঙ্কান গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারার ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট।

অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে মাত্র ১৬.১৩ গড়ে ১৫ উইকেট নিয়ে আরও একবার সিরিজসেরা  হয়েছিলেন হেরাথ।

❐ ২০১৬ সালের ২৯ মে, লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মুরালিধরন ও ভাসের পর 'তৃতীয়' শ্রীলঙ্কান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৩০০ উইকেটের মাইলফলক অর্জন করেন রঙ্গনা হেরাথ।

আগস্টে তৎকালীন টেস্ট র‍্যাংকিংয়ের ১ নম্বর দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইতিহাসে প্রথমবারের মত টেস্ট সিরিজ (৩-০) জয়ের গৌরব অর্জন করে শ্রীলঙ্কা। ৩ ম্যাচ খেলে মাত্র ১২.৭৫ গড়ে ২৮ উইকেট নিয়ে যথারীতি সিরিজসেরা হয়েছিলেন রঙ্গনা হেরাথ।

গল টেস্টে মাত্র 'দ্বিতীয়' শ্রীলঙ্কান হিসেবে করেছিলেন 'হ্যাটট্রিক'! পর পর তিন বলে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অ্যাডাম ভোজেস, পিটার নেভিল এবং মিচেল স্টার্ককে। ১৮৯২ সালে জনি ব্রিগসের পর ইতিহাসের মাত্র 'দ্বিতীয়' লেফট আর্ম অর্থোডক্স বোলার হিসেবে টেস্টে হ্যাটট্রিক করেন হেরাথ।

অক্টোবর-নভেম্বরে জিম্বাবুয়ে সফরের দুটি টেস্টে নিয়মিত অধিনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসের অনুপস্থিতিতে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন হেরাথ। বল হাতে মাত্র ১৫.১১ গড়ে ১৯ উইকেট নিয়ে সিরিজ জয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সামনে থেকে।

উল্লেখ্য, শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ অধিনায়ক রঙ্গনা হেরাথ।

❐ ২০১৭ সালের মার্চে বাংলাদেশের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও শ্রীলঙ্কার অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন হেরাথ। ১-১ এ ড্র হওয়া সিরিজের সফলতম বোলারও (১৮.০ গড়ে ১৬ উইকেট) ছিলেন তিনিই। 

জুলাইতে কলম্বোর প্রেমাদাসায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের 'ম্যান অফ দি ম্যাচ' হেরাথের শিকার ছিল ১১ উইকেট।

সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে ইউএই সফরে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ (২-০) জয়ের নেপথ্য নায়ক ছিলেন হেরাথ। মাত্র ১৭.৩১ গড়ে ১৬ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন সিরিজসেরা।

৮ অক্টোবর, দুবাই টেস্টে মুরালিধরনের পর 'দ্বিতীয়' শ্রীলঙ্কান এবং ইতিহাসের প্রথম বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ৪০০ উইকেটের মাইলফলক অর্জন করেন তিনি।

❐ ২০১৮ সালের জুলাইতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মাত্র ১৭.২৫ গড়ে ১২ উইকেট নিয়ে দলকে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতাতে রেখেছিলেন প্রধান ভূমিকা।

২০১৮ সালের ৬ নভেম্বর। 'অভিষেকের ভেন্যু' গলে হেরাথ খেললেন টেস্ট ক্যারিয়ারের বিদায়ী ম্যাচ, বল হাতে নিলেন ৩ উইকেট। ক্যারিয়ারের শুরু যেখানে, শেষটাও ঠিক সেখানেই! কী অদ্ভুত মিল, তাই না!

প্রথম ইনিংসে ইংলিশ অধিনায়ক জো রুটের উইকেটটি ছিল 'গলে' হেরাথের শততম টেস্ট উইকেট। টেস্ট ইতিহাসে এর আগে নির্দিষ্ট কোন ভেন্যুতে ১০০ বা তার বেশি উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব ছিল শুধু মুত্তিয়া মুরালিধরন (এসএসসি, ক্যান্ডি) আর জিমি অ্যান্ডারসনের (লর্ডস)। 'তৃতীয়' ক্রিকেটার হিসেবে অভিজাত এই ক্লাবে যোগ দিলেন হেরাথ। 

চলুন এক নজরে দেখে নিই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হেরাথের যত রেকর্ড।

• টেস্ট ইতিহাসের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি বোলারদের তালিকায় এই মুহূর্তে যুগ্মভাবে ৮ম স্থানে অাছেন রঙ্গনা হেরাথ (৪৩৩)। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩ উইকেট নিয়ে তিনি ছাড়িয়ে যান কিংবদন্তি অলরাউন্ডার স্যার রিচার্ড হ্যাডলিকে (৪৩১)।

• টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি স্পিনারদের তালিকায় মুরালি (৮০০), ওয়ার্ন (৭০৮) এবং কুম্বলের (৬১৯) পর চার নম্বরে রয়েছেন রঙ্গনা হেরাথ (৪৩৩)।

• ৯৩ টেস্টে ৪৩৩ উইকেট নিয়ে ইতিহাসের সফলতম বাঁহাতি বোলার রঙ্গনা হেরাথ। ৪১৪ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছেন ওয়াসিম আকরাম।

• বাঁহাতি স্পিনারদের মধ্যে টেস্টে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক রঙ্গনা হেরাথ (৪৩৩)। দ্বিতীয় স্থানে আছেন ড্যানিয়েল ভেটোরি (৩৬২)।

• ৯৩ টেস্টে ৩৪ বার ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়েছেন হেরাথ যা বাঁহাতি বোলারদের মধ্যে সর্বোচ্চ। তাঁর চেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট শিকারের কৃতিত্ব রয়েছে কেবল ৪ জনের। অনিল কুম্বলে (১৩২ টেস্টে ৩৫ বার), স্যার রিচার্ড হ্যাডলি (৮৬ টেস্টে ৩৬ বার), শেন ওয়ার্ন (১৪৫ টেস্টে ৩৭ বার) ও মুত্তিয়া মুরালিধরন (১৩৩ টেস্টে ৬৭ বার)।

• টেস্টে সবচেয়ে বেশিবার ১০ উইকেট পাওয়া বোলারদের মধ্যে মুরালি (২২ বার) এবং ওয়ার্নের (১০ বার) পর স্যার রিচার্ড হ্যাডলির (৯ বার) সাথে যৌথভাবে 'তৃতীয়' স্থানে আছেন রঙ্গনা হেরাথ (৯ বার)।

• টেস্টে ৪০০ উইকেট পাওয়া প্রথম বাঁহাতি স্পিনার রঙ্গনা হেরাথ। এই মাইলফলক অর্জন করতে হেরাথের লেগেছে মাত্র ৮৪ টেস্ট। তাঁর চেয়ে কম টেস্ট খেলে ৪০০ উইকেট পেয়েছেন কেবল স্টেইন (৮০) এবং মুরালিধরন (৭২)।

• সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিপক্ষে অন্তত একবার ইনিংসে ৫ উইকেট শিকার করা বোলার আছেন মাত্র ৪ জন। তাঁরা হলেন যথাক্রমে মুত্তিয়া মুরালিধরন, ডেল স্টেইন, রঙ্গনা হেরাথ* এবং সাকিব আল হাসান।

• টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক শেন ওয়ার্ন (১৩৮)। দুই নম্বরে থাকা রঙ্গনা হেরাথের শিকার ১১৫ উইকেট।

• টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট নেয়া বোলারের নাম রঙ্গনা হেরাথ (১২ বার)! যৌথভাবে দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওয়ার্ন ও মুরালি নিয়েছেন ৭ বার করে।

উইকেট সংখ্যায় ওয়ার্ন-মুরালিরা রীতিমতো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু এই একটা রেকর্ডে বাকি সবাইকে পেছনে ফেলে শীর্ষে অবস্থান করছেন হেরাথ।

• দুই টেস্টের সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ডটিও রঙ্গনা হেরাথের দখলে। পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৪ সালে দুই টেস্টের সিরিজে ২৩ উইকেট নিয়ে ভেঙেছিলেন আরেক স্বদেশীর রেকর্ড। এর আগে ২০০৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মুরালি পেয়েছিলেন ২২ উইকেট।

• পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে 'একমাত্র বোলার' হিসেবে তিনি পেরিয়েছেন ১০০ উইকেটের কোটা।

• বয়স ৩৫ পূর্ণ হওয়ার আগেই ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেল কত কত ক্রিকেটারের! অথচ ৩৫ পেরোনোর পর টেস্টে সবচেয়ে বেশি ২৩০ উইকেটের মালিক রঙ্গনা হেরাথ। ইতিহাসে আর কোন বোলার যেখানে ২০০ উইকেটই নিতে পারে নি! ১৯২ উইকেট নিয়ে হেরাথের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ল্যারি গ্রিমেট।

• টেস্ট ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি বয়সে হ্যাটট্রিক করা বোলারের নাম রঙ্গনা হেরাথ। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করার দিন তাঁর বয়স হয়েছিল ৩৮ বছর ১৩৯ দিন।

• প্রথম শ্রীলংকান হিসেবে অধিনায়কত্বের প্রথম তিন টেস্টেই জয় পাওয়া ক্যাপ্টেনের নাম রঙ্গনা হেরাথ। ২০১৭ সালে জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশের বিপক্ষে টানা তিন টেস্ট জিতেছিলেন 'ভারপ্রাপ্ত' অধিনায়কের ভূমিকায়।

খেলাধুলার জগতে বহুল প্রচলিত শব্দ যুগল ‘লেট ব্লুমার’। তারই সার্থক উদাহরণ হলেন রঙ্গনা হেরাথ। যে ফুল দেরিতে ফোটে, তার সুঘ্রাণ যে কতটা তীব্র হতে পারে, সেটা হেরাথকে দেখলেই বোঝা যায়। অন্যরা যে বয়সে শেষের ডাক শুনতে পান সেই বয়সেই 'হেরাথের' মত কেউ কেউ খুঁজে পান নতুন সাফল্যের মন্ত্র। যার শুরুর গল্পটা আক্ষেপ আর অপূর্ণতার হলেও শেষটা প্রাপ্তি আর অর্জনে ভরপুর।