সাক্ষাৎকার

'রাতারাতি বদলাবে না বাংলাদেশের ফিল্ডিং'

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 22:30 বৃহস্পতিবার, 01 নভেম্বর, 2018

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

বাংলাদেশ দলের ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুক বেশ আমুদে মানুষ। ক্রিকেটারদের সাথে দারুন সম্পর্ক তাঁর। ফিল্ডিং অনুশীলন যে উপভোগ্য হতে পারে, সেটা রায়ান কুকের সাথে বাংলাদেশ দলের সদস্যদের অনুশীলন দেখলেই বুঝা যায়। অনুশীলনে দুই-একটি ক্যাচ হাত ফসকে গেলেও সবসময়ই দৌড়ে এসে পিঠ চাপড়ে উৎসাহ দিতে দেখা যায় এই দক্ষিণ আফ্রিকানকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ দলে যোগ দেয়া রায়ান কুকের অধীনে সীমিত ওভারের ক্রিকেটের ফিল্ডিংয়ে লক্ষণীয় উন্নতি করেছে টাইগাররা। এবার নতুন চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে কুকের সামনে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ফিল্ডিংয়ের মান গড়পড়তা বলা চলে। সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের আগে বাংলাদেশের ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি ফিল্ডিংয়ের সাফল্য ও সামনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে ক্রিকফ্রেঞ্জির সাথে কথা বলেছেন রায়ান কুক।
 
ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ দায়িত্ব নেয়ার পর ফিল্ডিংয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে কিভাবে দেখছেন?

রায়ান কুকঃ আমি এখন পর্যন্ত যথেষ্ট উপভোগ করে আসছি। তাঁরা খুবই আগ্রহী এক দল ক্রিকেটার। তাঁরা শেখার ইচ্ছে পোষণ করে, যদিও বিভিন্ন ধাপ থেকে। কেউ একটু ভাল, কেউ একটু খারাপ। কিন্তু এর মধ্যে সবাই শেখার ক্ষেত্রে আগ্রহী।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ আপনাকে সবার সাথে হাসিখুশি থেকে অনুশীলন করতে দেখা যায়, ছেলেরাও আপনাকে পছন্দ করে। এমন পরিবেশ সৃষ্টি করে রাখা কি প্লেয়ারদের সেরাটা বের করে আনার ফর্মুলা?

রায়ান কুকঃ দেখুন, আপনি যখন একটা বিষয়ে ভাল করতে থাকবেন, তখন আপনি উপভোগ করতে চাইবেন। আর কোন জিনিস যদি আপনি উপভোগ করে করে থাকেন, তাহলে শেষ পর্যন্ত ওই বিষয়ে আপনি ভাল করবেনই। আমরা শুধু তাদের সাথে কাজ করার চেষ্টা করছি এবং সর্বোচ্চ ইতিবাচক মানসিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করছি। যতটা সম্ভব উৎসাহ দেয়া হচ্ছে তাদের। হ্যাঁ, অনুশীলনে দুই-একটি ভুল হবেই। আমরা তাদের সীমানা ছাড়িয়ে নিজেদের সর্বোচ্চটা উজাড় করে দিতে অনুপ্রেরণা দিচ্ছি। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ দল কেমন সাড়া দিচ্ছে?

রায়ান কুকঃ খুব ভাল। অন্য কোচরাও আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। আমরা সবাই একই বার্তা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চাই। এখানে স্টিভ রোডস আগে ফিল্ডিং কোচ ছিল, নিল ম্যাকেঞ্জি আছেন, যিনি ফিল্ডিং নিয়ে অনেক কাজ করেন। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের পর সাদা বলে ব্যস্ত সময় পার করার পর এবার টেস্টের পালা, যেই ফরম্যাটে বাংলাদেশের ফিল্ডিং রেকর্ড খুল একটা ভাল না। এবার অতীত বদলাতে কি করা হচ্ছে?

রায়ান কুকঃ হ্যাঁ, ফরম্যাট অনুযায়ী অবশ্যই ভিন্ন। এখানে অপেক্ষাকৃত বেশি ক্যাচ আসবে, বিশেষ করে স্লিপ অঞ্চলে। আমরা ইতোমধ্যেই অনেক কাজ করেছি। তবে কোচ হিসেবে অনুশীলনে টেস্ট ম্যাচের অবহ তৈরি করা কঠিন কাজ। কারণ ছয় ঘণ্টা ধরে খেলা হচ্ছে, দেখা যাচ্ছে দিনের শেষ বলে ক্যাচ উঠল। তবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছি। আমরা চেষ্টা করছি লাল বলে আমাদের সুযোগ বৃদ্ধি করতে।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ বাংলাদেশের স্লিপ ফিল্ডিং বেশ নিচুমানের। এই অবস্থা থেকে দ্রুত উন্নতির পথ কী?

রায়ান কুকঃ আপনি দুই ভাবে চিন্তা করতে পারেন। প্রথমত শিক্ষাটা জরুরী। এটা দ্রুত সমাধান হতে পারে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় গেলে দেখবেন প্রতি ম্যাচেই তিন-চারজন স্লিপ থাকছে। এখানে হয়তো একজন থাকবে, না হয় থাকবে না। আমাদের তরুন ক্রিকেটারদের এই স্লিপ কোচিংয়ের সাথে একদম শুরু থেকেই পরিচিত করে দিতে হবে। ফলে তাঁরা দ্রুতই স্লিপ ক্যাচিংয়ের সাথে পরিচিত হতে পারে। এই পদ্ধতি আবার দীর্ঘমেয়াদী।

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ স্পিনের বিপক্ষে বাংলাদেশ দলের ক্লোজিং ফিল্ডিংকে কিভাবে দেখেন? এটাও তো বিশেষজ্ঞের জায়গা।

রায়ান কুকঃ আমরা (দক্ষিণ আফ্রিকা) এই জায়গায় এগিয়ে, অন্য দল থেকে। অন্য দল গুলোকে এই জায়গার জন্য প্লেয়ার তৈরি করতে হয়। ব্যাটের চার পাশে ফিল্ডার থাকবে, এই দৃশ্য দক্ষিণ আফ্রিকায় নিয়মিত দেখা যায়। আজ আমরা এখানে ব্যাটের চার পাশে ফিল্ডার রেখে অনুশীলন করেছি। দেখা যাবে টেস্ট ম্যাচ জয়ের জন্য দরকার এক উইকেট, হাতে আছে দুই ওভার। তখন দেখা যাবে ফাস্ট বোলারও সিলি পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা আসলে চাচ্ছি সবার স্কিলেই উন্নতি আসুক। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের প্রায় টেস্ট খেলুড়ে দেশেই স্লিপ কর্ডনে ধারাবাহিকতা নেই। এর কারণ কী হতে পারে?

রায়ান কুকঃ আমি মনে করি এখনও বিশেষজ্ঞ স্লিপ ফিল্ডারের দরকার আছে। মনে করে দেখুন, স্পিনারদের বিপক্ষে রাহুল দ্রাবিড ও হালের আজিঙ্কে রাহানে, তাঁরা টেস্ট ক্রিকেটে অনেক ক্যাচ লুফে নিয়েছে। মাঝে মাঝে দলের কম্বিনেশনের কারণে স্লিপ ফিল্ডারদের জায়গা এলোমেলো হয়। প্রতিপক্ষ, বোলারও এখানে ভূমিকা পালন করে। তবে স্লিপ কর্ডনে ভাল সম্পর্ক থাকা জরুরী, যা গড়ে তুলতে হলে সময়ের প্রয়োজন। আর আমাদের ব্যাক আপ রাখতে হবে। কেউ যদি ইনজুরির শিকার হয়, তাহলে বদলী ক্রিকেটার যেন সমান মাপে দলকে সার্ভিস দিতে পারে। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ স্থিতিশীল স্লিপ কর্ডন কতোটা গুরুত্বপূর্ণ?

রায়ান কুকঃ হ্যাঁ, স্থির থাকলে একজন আরেকজনের জন্য সুবিধা হয়। ক্যাচ ধরতে সাহায্য করবে কি করবে না, সেটা দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। আমি মনে করি ওই নির্দিষ্ট পজিশনের জন্য প্লেয়ারকে তৈরি করাই আসল। 

ক্রিকফ্রেঞ্জিঃ টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের স্লিপ কর্ডন কেমন হতে পারে?

রায়ান কুকঃ আমাদের দুই-তিন প্লেয়ার আছে যাদের নিয়ে আমরা অনুশীলন করছি। তাঁরাই মূলত গুরুত্বপূর্ণ পজিশন সামলাবে। বোলার, প্রতিপক্ষ ও উইকেট বিবেচনার সাথে উইকেটের আচরণ দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আমরা বেশ কয়েকজনকে এই জন্য আলাদা করেছি এবং এদের নিয়ে কাজ চলতে থাকবে।