রোডসের পরীক্ষা

বাংলাদেশ ক্রিকেটের আসল চেহারা দেখছেন স্টিভ রোডস

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 17:37 বৃহস্পতিবার, 11 অক্টোবর, 2018

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

জাতীয় দলের প্রধান কোচ স্টিভ রোডস তাঁর হানিমুনের সমাপ্তি দেখছেন। ইংল্যান্ড থেকে আগত রোডস বাংলাদেশ ক্রিকেটের আসল রূপ দেখতে পাচ্ছেন সময়ের সাথে সাথে। চলতি বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর থেকে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে ভাল সময়ই কেটেছে স্টিভ রোডসের।

ইংলিশ ক্রিকেটের সংস্কৃতিতে অধিনায়ক ও প্রধান কোচ সিদ্ধান্ত গ্রহনের পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়ে থাকেন। দীর্ঘ সময় কাউন্টি দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে থাকা রোডসও সেই সংস্কৃতি ধারণ করে থাকেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট সেই তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন মেরুর দল।

কোচ, অধিনায়কের বালাই নেই, ক্রিকেট বোর্ডের কর্তা ব্যক্তিরাই দায়িত্বশীল কোচ থেকে ঢের বেশি ক্রিকেট জ্ঞান লালন করে থাকেন। বিসিবির সূত্র মতে, বাংলাদেশ ক্রিকেটে কোচ, অধিনায়ক ও বোর্ডের কর্তা ব্যক্তিদের মধ্যে মতের মিল হচ্ছিল না বিধায় সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে আচমকা বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব ছেড়েছিলেন।

গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে মমিনুল হককে স্কোয়াডের বাইরে রেখে দল সাজিয়েছিলেন হাথুরুসিংহে। পরবর্তীতে বোর্ডের হস্তক্ষেপে মমিনুল হককে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। স্টিভ রোডসকে অবশ্য এখনও এত কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয় নি।

তবে যতই দিন গড়াচ্ছে, বাংলাদেশ ক্রিকেটের আসল চেহারা উন্মোচিত হচ্ছে তাঁর কাছে। যেমন ধরুন, দেশের বাইরে বাংলাদেশ টেস্ট দলের রেকর্ড খুব একটা ভাল নয়। প্রধান কোচ হিসেবে বাংলাদেশ টেস্ট দলের বিদেশ ভূত তাড়াতেই চাইবেন স্টিভ রোডস।

বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই দেখেছেন বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশ দলের দুর্দশা। ওয়েস্ট ইন্ডিজে পেস বোলিং এর স্বর্গে বাংলাদেশ দলকে ৪৩ রানে অল আউট হতে দেখেছেন তিনি।

বিদেশের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের দুর্দশার কথা মাথায় রেখে ঘরের মাঠে সবুজ উইকেটে টাইগারদের পরীক্ষায় ফেলতে চেয়েছিলেন রোডস। কিন্তু কোচ চাইলেই তো হবে না। ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট বোদ্ধারা তো বসে নেই। গত কয়েক বছর ঘরের মাঠে বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক সময়ের টেস্ট রেকর্ড যথেষ্ট সমৃদ্ধ।

ঘরের মাঠে গত দুই হোম সিজনে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার পূর্ণ শক্তির দলকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। উপমহাদেশের বাইরের দলের স্পিন দুর্বলতা মাথায় রেখে উইকেট তৈরি করে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করায় সফল দল ছিল বাংলাদেশ। সেই ধারায় বদল চাইছে না বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কর্তা।

অথচ আসন্ন হোম সিজনে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চারটি টেস্ট ম্যাচ খেলার পর নিউজিল্যান্ড সফর করবে বাংলাদেশ দল। কে জানে, আগামী বছরের শুরুতে হয়তো বিদেশের কন্ডিশনে সেই লজ্জাজনক হারই অপেক্ষা করছে!

অদ্ভুত উটের পিঠে চলা বাংলাদেশ ক্রিকেটের কিঞ্চিৎ চেহারা অবশ্য ইতিমধ্যেই দেখা হয়ে গেছে রোডসের। এশিয়া কাপ চলাকালীন সময়ে ইনজুরি আক্রান্ত তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের বদলী হিসেবে আচমকা ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকার দলে জায়গা করে নেয়ায় তাজ্জব বনে গিয়েছিলেন এই ইংলিশ ম্যান।

অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা ও কোচ স্টিভ রোডস এমনকি প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, কেউই দলে দুইজন নতুন ক্রিকেটারের অন্তর্ভুক্তি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। ইমরুল ভাল খেললেও তাঁর আচমকা দলে সুযোগ পাওয়ার প্রক্রিয়া রোডসের পক্ষে সহজে হজম হওয়ার কথা না।

একই সাথে এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচে ওপেনিংয়ে মেহেদি হাসান মিরাজকে সুযোগ দেয়ার পক্ষেও ছিলেন না তিনি। ওপেনিংয়ে তামিম ইকবালের জায়গায় তরুণ বাঁহাতি নাজমুল হাসান শান্তকে চেয়েছিলেন তিনি।

কিন্তু বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন কোন রকম ব্যাখ্যা ছাড়াই দলীয় সিদ্ধান্তে হস্তক্ষেপ করেন। এশিয়া কাপের ফাইনালে লিটন দাস ও মেহেদি হাসান মিরাজের ওপেনিং জুটির সাফল্য 'মাস্টার স্ট্রোক' মনে হলেও সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি ছিল ক্রিকেট সংস্কৃতির পরিপন্থি।