এশিয়া কাপ ২০১৮

লোয়ার অর্ডারে বাংলাদেশি বিস্ফোরণ হবে তো?

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 19:20 বুধবার, 12 সেপ্টেম্বর, 2018

|| ক্রিকফ্রেঞ্জি করেসপন্ডেন্ট ||

কয়েকদিন পরই পর্দা উঠবে এশিয়া কাপের ১৪তম আসরের। আর এবারও এই এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে নিজেদের প্রমান করতে প্রস্তুত গেল আসরের রানার্স আপ বাংলাদেশ দল।

এবারের এশিয়া কাপের আসরটি বসবে আরব আমিরাতে। তবে বরাবরের মত এশিয়া কাপের আগে বাংলাদেশকে সবচেয়ে বেশী দুশ্চিন্তায় পরতে হতে পারে লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের নিয়ে। কারণ এখন পর্যন্ত বিগত ৩-৪ বছর লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা নিজেদেরকে প্রমান করতে পারেননি।

বিগত দশ বছরের উদাহরণ টেনে বলতে গেলে এখনকার ক্রিকেটের ধরণ পুরই ভিন্ন। আগে স্কোরবোর্ডে ২৫০ রান করেও স্বস্তিতে থাকতো দলগুলো। আর এখন তো ৩৫০-৪০০ রান অনায়েসে তাড়া করে ফেলে যেকোন দল।

এর মূল কারণ যদি বলতে হয় তাহলে নীচের সারির ব্যাটসম্যানদের দ্রুত রান তুলতে পারার প্রবনতাকেই বলা যায়। কারণ টি-টুয়েন্টি ফরম্যাট চালু হওয়ার পর ওয়ানডেতে ব্যাটসম্যানদের মানসিকতাতেও পরিবর্তন এসেছে। 

কিন্তু আমাদের দেশে এখনও কোন নির্ভরযোগ্য লোয়ার মিডেল অর্ডার ব্যাটসম্যান নেই। হার্ড হিটার পরিচয় খ্যাত ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমান ফর্মে নেই। সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের নিষেধাজ্ঞার কারণে এশিয়া কাপের স্কোয়াডে জায়গা হয়নি এই ডানহাতি ব্যাটসম্যানের। 

যদি এশিয়া কাপের স্কোয়াডে সাব্বির জায়গা পেতেনও তাহলে প্রশ্ন উঠে আসতো সাব্বির কোথায় ব্যাট করবেন? কখনও তিন কখনও লোয়ার অর্ডার এই দুজন পজিশন নিয়ে সাব্বিরের সঙ্গে নয়-ছয় খেলা হয়। 

স্ট্রাইক রেটের বিচারে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সাব্বির রহমান দ্বিতীয় স্থানে আছেন। তার উপরে আছেন সৌম্য সরকার। দু'জনের স্ট্রাইক রেটের মধ্যে পার্থক্য মাত্র তিনের। সাব্বিরের ৯৪ ছুই ছুই আর সৌম্যর ৯৬।

আর সম্প্রতি ওয়ানডে ফরম্যাটে সাব্বির কবে ভালো খেলেছেন এই পজিশনে তাও হয়তো ক্রিকেট প্রেমিদের মনে নেই। লোয়ার অর্ডারে সাব্বিরের ফিফটির সংখ্যা মাত্র দুটি আর স্ট্রাইক রেট প্রায় ১০০।

যেখানে আশা করা হয় একজন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানের স্ট্রাইক রেট ১২০-১৩০। একই পজিশনে ভারতের হার্দিক পান্ডিয়া সাব্বিরের চেয়ে কম ম্যাচ খেলে ১১৭ স্ট্রাইক রেটে রান করেছেন। একই জায়গায় শ্রীলংকার থিসারা পেরেরার স্ট্রাইক রেট ১১৩। থিসারা এবং হার্দিকের স্ট্রাইক রেটই বলে দেয় কেন শ্রীলংকা এবং ভারত স্লগ ওভারে বেশি রান তুলতে সফল।

শুধু যে সাব্বিরই একমাত্র লোয়ার অর্ডারে ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে থাকেন তা নয়। মেহেদি হাসান মিরাজও একজন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যান। যুব বিশ্বকাপ পর্যন্ত মিরাজের পরিচয় ছিল বোলারের পাশাপাশি একজন ব্যাটসম্যানেরও।

কিন্তু জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার পর সেই মিরাজ এখন একজন বোলার যিনি কিনা মোটামোটি ব্যাটিং করতে পারেন। আর এই পজিশনে তার স্ট্রাইক রেট মাত্র ৬০। পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে কেন মিরাজ শেষের দিকে কেন দ্রুত রান তুলতে পারেন না।

কয়েক বছর পেছনে গেলে বাংলাদেশ দলের লোয়ার মিডেল অর্ডারের নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান ছিলেন নাসির হোসেন। কিন্তু তার স্ট্রাইক রেটও ১০০'র নীচে। এসব পরিসংখ্যান থেকেই উত্তর পাওয়া যাচ্ছে বাংলাদেশ এখনও কেন বাকি দলগুলো থেকে পিছিয়ে।

লোয়ার মিডেল অর্ডার বা হার্ড হিটারদের কথা রেখে এখন যদি বাংলাদেশ দলের তিন নির্ভরযোগ্য ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের এই নীচের দিকে পরিসংখ্যান দেখা হয় তাহলে এদের কারও স্ট্রাইক রেট ১০০'র কাছেও নেই। 

বরং সাকিব আল হাসান বাকি দুজনের চেয়ে এগিয়ে আছেন কিন্তু তার স্ট্রাইক রেট মাত্র ৮১। এই তিন ব্যাটসম্যানকে অবশ্য স্ট্রাইক রেটের বিচারে পেছনে ফেলেছেন কাপ্তান মাশরাফি। যিনি ৯১ স্ট্রাইক রেটে লোয়ার অর্ডারে রান করে থাকেন। 

মাঝে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ থেকে আরিফুল হককে খুঁজে পেয়েছে বাংলাদেশ দল। যিনি আসন্ন এশিয়া কাপের স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে তাকে দিয়েই লোয়ার অর্ডারে স্লগারের ঘাটতি পুরন করবে টাইগাররা। 

যার টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে স্ট্রাইক রেট ১২০'র কাছাকাছি। আর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ 'এ' দলের হয়ে দ্রুত রান তুলে নিজের নামের পাশে আরেকটি পরিচয় যোগ করেছেন মোহাম্মাদ মিথুন। 

যিনি আসছে এশিয়া কাপের স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছেন। ওয়ানডে ফরম্যাটে তার স্ট্রাইক রেট ৬০'র নীচে হলেও টি-টুয়েন্টি ফরম্যাটে তার স্ট্রাইক রেট ১১৬। হয়তো সম্প্রতি দ্রুত রান করতে পারার এই নতুন শক্তির কারণে আরিফুলকে টোপকে লোয়ার অর্ডারের দায়িত্ব পড়তে পারে মিথুনের উপর। 

আর এশিয়া কাপের আগে কিভাবে এই লোয়ার অর্ডার সমস্যার সমাধান করবে বাংলাদেশ দল সেটা নিয়ে সমাধান দেয়ার চেষ্টা করেছেন নারী ক্রিকেট দলের ম্যানেজার নাজমুল আবেদিন ফাহিম। জানিয়েছেন প্রত্যেক পজিশনের জন্য খেলোয়াড়দের আলাদাভাবে প্রস্তুত করতে হবে। তিনি বলেন, 

'দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়ার মত দেশগুলো পজিশন নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালায়, তাদের ঘরোয়া লীগ থেকেই এসব নিয়ে প্রশিক্ষণ শুরু হয়। কিন্তু আমাদের ক্ষেত্রে এটা হয়না, প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে বলেন বা প্রিমিয়ার লীগ বলি এসব জায়গায় কাজ করা হয়না। জাতীয় দলে আসার পরই এসব নিয়ে কাজ শুরু হয়। 

কোচিং স্টাফ থাকলেও উদ্যোগ নেয়া হয়না যে কোন নির্দিষ্ট পজিশনের জন্য ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করা। এমনও হতে পারে একজন ব্যাটসম্যান নিজেকে তৈরি করেছে ৬ বল বা ৮ বল খেলার জন্য এতোটুকই তার কাজ কিন্তু। 

সে প্রস্তুত থাকলে ৬ বলে ১৮ রান করবে আর প্রস্তুত না থাকলে ৬ বলে ৯ রান করবে। এইজে ৯ রানের পার্থক্য এটাই পার্থক্য গড়ে তুলে একটা চ্যাম্পিয়ন টিম আর একটা সাধারণ টিমের মধ্যে। প্রস্তুতি যেখানে যত ভালো সেখানে ভালো করার সুযোগও তত বেশি।' 

নতুন কোচ স্টিভ রোডস চাইছেন সৌম্য সরকারকে দিয়ে এই ঘাটতি পূরণ করতে। কিন্তু সৌম্য সরকারকেও এশিয়া কাপের স্কোয়াডে জায়গা দেয়া হয়নি। এক কথায় কিন্তু আসছে এশিয়া কাপের জন্য ঘষিত স্কোয়াডে সবচেয়ে ভালো স্ট্রাইক রেট থাকা এই দুই ব্যাটসম্যান সাব্বির এবং সৌম্যের কারও জায়গা হয়নি। 

কিন্তু কথা হল একজন ওপেনার লোয়ার অর্ডারে নিজে প্রমান করতে পারবেন নাকি বাকিদের মত ব্যর্থতার প্রমান দিবেন।লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানদের দ্রুত রান তুলতে না পারার ব্যর্থতা বাংলাদেশকে বারবার ভগান্তিতে ফেলছে। 

আসছে এশিয়া কাপের আগে এখন আরব আমিরাতে নিজেদের ঝালাই করে নিচ্ছেন স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটাররা। এশিয়া কাপের আগে এই সমস্যার সমাধান করতে না পারলে গ্রুপে থাকা শ্রীলংকা এবং আফগানিস্তানের চেয়ে এক কদম পিছিয়ে থাকতে হবে বাংলাদেশ দলকে।