বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ

তামিমের তিন মুখোশ

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 00:10 সোমবার, 30 জুলাই, 2018

'ড্যাশিং ওপেনার' তকমাটি বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্ব প্রথম তামিম ইকবালের নামের সাথেই জুড়ে দেয়া হয়েছিল। টপ অর্ডারে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের শুরু করেছিলেন তিনিই। তবে সময়ের সাথে সাথে তামিমের ব্যাটিংয়ে আমুল পরিবর্তন এসেছে।

১২ বছর ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে আসা তামিম ইকবালের সাথে ২০০৭ সালে তরুন তামিম ইকবালের বিস্তর তফাৎ লক্ষণীয়। দুই-একটি আক্রমণাত্মক শট নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আবির্ভাব হওয়া তামিম ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটে অন্যতম অপরিপূর্ণ প্রতিভার নাম।

শুরুর দিকে প্রান্ত বদল করে খেলার সহজাত দক্ষতা ছিল না তার। শক্তির জায়গা অফ সাইড হলে তামিমের দুর্বলতার আরেক নাম ছিল লেগ সাইড। তবে তিনি দমে যাননি। সময়ের সাথে সাথে প্রতিপক্ষের গবেষণায় বেরিয়ে আসা দুর্বলতা গুলোর সমাধান বের করেছেন অবিশ্বাস্য কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে।

ফলাফল, এক যুগ দীর্ঘ ক্যারিয়ার শেষে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারীর তালিকায় চূড়ায় পৌছে গেছেন তামিম ইকবাল। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে তামিম ইকাবালের যুদ্ধটা মূলত নিজের সাথে।

সাম্প্রতিক সময়ে নিজের সাথে লড়াইয়ে বড় ব্যবধানে জয়ী হয়ে আসছেন তিনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট সিরিজে ব্যর্থতার পর ওয়ানডের লড়াইয়ে জিততেই হতো তামিমকে। 
তিন ম্যাচের সিরিজে দুই সেঞ্চুরি ও এক ফিফটিতে ২৮৭ রান করেছেন তিনি, যা বাংলাদেশের সিরিজ জয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।

একটু পেছনে ফিরে তাকালে অবিশ্বাস্য ফর্মে থাকা তামিমের ওয়ানডে ক্যারিয়ারকে তিনভাবে ব্যবচ্ছেদ করা যায়। ক্যারিয়ারের শুরুতে তামিমের ধারাবাহিকতার অভাব ছিল প্রচন্ড। ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে পরিনত করার ক্ষেত্রে বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিলেন তিনি।

প্রান্ত বদল করে খেলায় দক্ষতার অভাব ছিল স্পষ্ট। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তামিমের স্ট্রাইক রেটে যার প্রভাব লক্ষণীয়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রথম চার বছরে ৮৯টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা তামিম ১৬টি ফিফটির বিপরিতে মাত্র তিনটি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। 

ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ধাপে কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়েন তামিম। ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সালের দিকে তামিম ইকবালের স্ট্রাইক রেটে ৭৪ এ নেমে আসে। মাঠের বাইরের বিতর্কের সাথে চরম ফর্মহীনতার মুখে পড়তে হয় তাকে। 

এই সময়ে খেলা ৪৬ ম্যাচে ১১টি ফিফটির বিপরিতে মাত্র একটি সেঞ্চুরির দেখা পান তিনি। সেই চরম ব্যর্থতার বেড়াজাল থেকেই জন্ম হয় নতুন তামিমের। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত খেলা ৪৭ ম্যাচে অবিশ্বাস্য গড়ে (৫৬.৯২) রান তুলেছেন তিনি।

১৫টি ফিফটির সাথে ৭টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন গত কয়েক মৌসুমে। ক্যারিয়ারের চলমান সুফলা সময়েও তামিমের রান ক্ষুধা তরুনদের জন্য অনুকরণীয়। নাজমুল আবেদিন ফাহিম, দেশের ক্রিকেটারদের প্রিয় মেন্টর এই তামিমকে যতই দেখছেন, ততই মুগ্ধ হচ্ছেন।

এই বাঁহাতি ওপেনারকে খুব কাছে দেখেছেন তিনি। তার ভাষায়, 'তামিমের মত একটা ছেলে, যার ইগো বা আত্মসম্মানবোধ অনেক বেশী। সে কিন্তু এখনও শিখছে। এই কথাটা আমি জুনিয়রদের বা সবাইকে বলতে চাই। তামিম কিন্তু এখনও নিজেকে নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে।

'নিজেকে ক্রমাগত শেখার মধ্যে রাখে। আমাদের অনেকেই তা করে না। দুই একটা সফল মৌসুম গেলেই আমরা মনে করি অনেক কিছু হয়ে গেছে। আসলে তা না। কথায় আছে, শুধুমাত্র পরিবর্তনটাই স্থিতিশীল। যে নিজেকে নিয়ে ক্রমাগত উন্নতির দিকে পরিবর্তন করবে সে ভাল করবে।

'পুরাতন জিনিস নিয়ে অগ্রসর হওয়া সম্ভব না। মানুষ সবসময় আপনার ভুল খুঁজবে। সেখান থেকে বের হয়ে আসতে, নিজের ভুল নিয়ে কাজ করতে অনেক সময় ও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হয়। এটা দেখতে খুব সহজ মনে হয়। কিন্তু এটা অনেক কঠিন, মারার বল মারবে না, জুটি গড়বে... এটা অনেক পরিশ্রমের কাজ। তামিমের এই পরিবর্তনটা অনেক বড় অর্জন।'

বাংলাদেশের মত দলের ওপেনার হিসেবে প্রায় প্রতি ম্যাচেই তামিমকে বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে খেলতে হয়। ওয়ানডে ফরম্যাটে তামিমের সেঞ্চুরির ম্যাচে বাংলাদেশের শতকরা জয়ের হার ৭০ ভাগ। দলের জন্য তামিম কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। 

'তামিম তামিমের নিজস্বতা অনুযায়ী খেলেছে। অনেকে বলেছে তামিম বল নষ্ট করেছে। কিন্তু না, তামিম যেটা খেলেছে সেটা ওর নিজস্ব খেলা। সে ক্রিস গেইলের মত খেলবে এমনটা তো আর উচিত না। সে যে খেলাটা খেলে তাতে দলের রান বাড়ানোটা সহজ। আর ওয়ানডে ক্রিকেটে সে যদি এভাবে খেলে দলের রান করতে অসুবিধা হবে না, আমি মনে করি।,' বলেছেন নাজমুল আবেদিন।