সাক্ষাতকার

খালেদের বড় স্বপ্ন

আবিদ মোহাম্মদ

আবিদ মোহাম্মদ
প্রকাশের তারিখ: 12:44 মঙ্গলবার, 24 জুলাই, 2018

সদ্য সমাপ্ত শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশ 'এ' দলের সবচেয়ে সফল বোলার ছিলেন ২৫ বছর বয়সী পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ। সিরিজে সর্বোচ্চ উইকেট নেয়া এই পেসার আসন্ন আয়ারল্যান্ড সিরিজে আরও ভালো করতে চান।

এর আগে ২০১৫-১৬ মৌসুমে সিলেট বিভাগের হয়ে জাতীয় ক্রিকেট লিগে অভিষেক হয় খালেদের। খেলেছেন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে, প্রাইম দোলেশ্বরের হয়ে।

সেখান থেকে তিনি চলে আসলেন বিপিএলের মঞ্চে। বিপিএলে অভিজ্ঞতা নিয়েছেন সাঙ্গাকারা-আমিরদের কাছ থেকে। তাদের উপদেশ কাজে লাগিয়েই সাফল্য পেয়েছেন দেশের ঘরোয়া লীগে। 

আসন্ন আয়ারল্যান্ড সিরিজ, শ্রীলংকা সিরিজের অভিজ্ঞতা, বিপিএলে তারকাদের সাথে কাটানো মুহূর্ত এবং ক্রিকেটে আসার যাত্রা নিয়ে ২৫ বছর বয়সী খালেদ কথা বলেছেন ক্রিকফ্রেঞ্জির সঙ্গে... পাঠকদের সুবিধার জন্য খালেদ আহমেদের সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল... 

ক্রিকেটে আসা হল কিভাবে?

আমার এক বন্ধুর (ইমরান আলি) হাত ধরেই ক্রিকেটে আসা। সেও ক্রিকেট খেলে, ওকে দেখতাম ক্রিকেট খেলতো, স্টেডিয়ামে যেত, আমাদের এখানে লোকাল লীগগুলোতে খেলতো, এলাকায়ও আসতো টেপ টেনিস খেলতে। ওকে দেখেই ক্রিকেটে আসার অনুপ্রেরণা পাই, তারপর ওকে বলি আমিও খেলতে চাই।

তারপর ও আমাকে একটা একাডেমিতে জায়গা করে দেয়, এরপর থেকেই শুরু হল ক্রিকেট খেলা। পরবর্তীতে সিলেট লীগ খেললাম, এরপর আসতে আসতে এখানে আসা। বেশীদিন হয়নি ক্রিকেট খেলি, খুব বেশি হলে পাঁচ বছর হবে।ওর অনুপ্রেরণাতেই ক্রিকেটে আসা আরকি।

বন্ধুর অনুপ্রেরণার পাশাপাশি ছোট বেলায় ইচ্ছে ছিল কি ক্রিকেটার হবেন?

ছোট বেলা থেকেই টেপ টেনিস খেলতাম, ইচ্ছে ছিল বাংলাদেশের হয়ে খেলার এগুলো চিন্তা করতাম। তখনও ক্রিকেট বল দিয়ে খেলা শুরু করিনি, টেপ টেনিস দিয়ে খেলতাম। এরপর বন্ধুকে দেখতাম যে ক্রিকেট বলে খেলতে, তারপর চিন্তা করলাম বন্ধু যখন খেলতেছে আমিও চেষ্টা করে দেখি পারি কিনা। পরে বন্ধু (ইমরান) ঢাকা লীগে আমাকে একটা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেয়। এরপর ফার্স্ট ক্লাস আর প্রিমিয়ার লীগ খেললাম, যদিও মাত্র একবারই প্রথম বিভাগে খেলেছি। আর ২০১৫ সাল থেকে জাতীয় লীগ খেলি।

পেস বোলিংই কেন?

ছোট বেলা থেকেই জোরে বোলিং করতাম, বিশেষ করে টেপ টেনিসে। আমার যে বন্ধুর কথা বললাম, সে নিজেও পেস বোলার। কোথাও গেলে একসাথে জেতাম। ক্রিকেট বলে আসার আসার পর দেখলাম এখানেও জোরে বোলিং করতে পারছি। ছোট বেলা থেকেই জোরে বোলিং করার ইচ্ছা থেকেই পেস বোলার হয়ে ওঠা। আর জেমন্স অ্যান্ডারসনকে দেখেও অনেকটা অনুপ্রেরণা নেয়া। ওকে অনেক ফলো করি, ছোট বেলা থেকেই দেখে আসতেসি ওকে।

বিপিএলে তো ঢাকা'র হয়ে খেলেছেন গতবছর, দল পাওয়া থেকে শুরু করে ৪০ দিনের যাত্রাটা কেমন ছিল আপনার কাছে? 

শুরু থেকে বলি, দুই বছর আগে প্রিমিয়ার লীগে প্রাইম দোলেশ্বরে ছিলাম। সেবার মাত্র একটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম। তো প্রাইম দোলেশ্বরের যিনি কোচ বাবুল স্যার, উনি আমাকে বলেন, এবার খেলতে পারিস নাই সামনের বার খেলবি, সামনে আরও বেশী ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবি। আরও উন্নতি করবি ধীরে ধীরে, পরে উনি আমাকে হাথুরুসিংহের সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।

হাথুরুসিংহে আমাকে অনেক পছন্দ করেন। উনি আমাকে এইচপি দলে পাঠিয়ে দেন, এইচপি থেকে ইংল্যান্ড ট্যুরে যাই, জীবনেও কল্পনা করিনি যে ইংল্যান্ডে যাবো। আর এইচপি দলে আসার পর অনূর্ধ্ব-১৯ টিমের সাথে আমাদের খেলা ছিল তিন ম্যাচের সিরিজ। সেই সিরিজে অনেকগুলো উইকেট নেই, তারপর ইংল্যান্ডে গিয়েও ভালো করি। আল্লাহ'র ইচ্ছা ছিল বিধায় ইংল্যান্ডে যেতে পেরেছিলাম।

আর সেখানে থাকা অবস্থায়ই বিপিএলের নিলাম চলে, আমি ঘুমে ছিলাম। তখন আমার বন্ধু ফোন করে বললো যে, তুই ঢাকা ডাইনামাইটসের দলে। আমার প্রথমে বিশ্বাস হয়নি, পরে ডাইনামাইটস কর্তৃপক্ষ থেকে মেসেজ আসে যে তুমি আমাদের দলে। আমি কোনদিন ভাবিওনি যে ঢাকায় সুযোগ পাবো। 

ঢাকায় সাকিব আল হাসানের অধীনে ছিলেন, তার অধিনায়কত্বে খেলেছেন... সঙ্গে আফ্রিদি,সাঙ্গাকারা,আমির এবং লুইসরাও ছিলেন। ডাইনামাইটস শিবিরে আপনার অভিজ্ঞতা নিয়ে যদি কিছু বলতেন?

আমার সৌভাগ্য যে আমি সাকিব ভাই'র অধিনায়কত্বে খেলেছি। স্বপ্নের মত ছিল একদম, যিনি পুরা বিশ্বে রাজত্ব করেন তার অধীনে খেলেছি এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার মত না। বিদেশীদের কাছ থেকেও অনেক কিছু শিখেছি, একসাথে ৪০ দিন ছিলাম। সাঙ্গাকারা অনেক উপদেশ দিয়ে গিয়েছেন আমাকে, উনি যাওয়ার আগে আমাকে বলে গিয়েছেন যে, পরের বার যদি একসাথে খেলি তাহলে যেন তোমার মধ্যে এই সব উন্নতিগুলো দেখতে পাই।

ফিল্ডিং নিয়ে অনেক পরামর্শ দিয়েছেন পোলার্ড, এরপর আমির তো বোলিং নিয়ে অনেক উপদেশ দিয়েছেন। আমির থেকে অনেক কিছু শিখেছি, অনেক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। এগুলো নিয়েই কাজ করতেসি, সুযোগ হলে একদিন বিশ্ব মঞ্চেও দেখাবো। দেখবেন ইন শা আল্লাহ।

বিপিএল থেকে পাওয়া এই অভিজ্ঞতাগুলো ডিপিএল, বিসিএল, এনসিএলে কাজে লাগাতে পেরেছিলেন? 

সেটা তো অবশ্যই। এগুলা অনেক কাজে দিয়েছে, শেষ বিসিএল অনেক গিয়েছে। প্রিমিয়ার লীগেও উইকেট পেয়েছি, বিপিএলের পর পরই এনসিএলের দুটা ম্যাচ ছিল যার একটিতে খেলার সুযোগ পেয়েছিলাম, সেখানেও ভালো করি। এরপর বিসিএল প্রথমে ছিলাম প্রাইম ব্যাংকে, তো ওদের আরেকজন বোলার চলে আসে, পরে ইমরান স্যার আমাকে সিলেটে নিয়ে আসেন। এসেই ৮ উইকেট নেই। বিপিএলের পরই ম্যাচ ছিল সেখানে গিয়ে ভালো দল এবং ভালো ক্রিকেটারদের বিপক্ষে ৮ উইকেট নেই, যা বিপিএলের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়েই পেয়েছিলাম অনেকখানি।

সম্প্রতি শ্রীলংকা 'এ' দলের বিপক্ষে খেলেছেন, বলতে গেলে তো ওরা জাতীয় দলকেই পাঠিয়ে দিয়েছে, থারাঙ্গা-থিসারাদের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতাটা কেমন ছিল?

ওরা জাতীয় দল থেকে ৯ জন এসেছিল, তিন ম্যাচেই ৯জন খেলেছে। আমিও তিন ম্যাচেই খেলেছি। মোট ৬টা ম্যাচ খেলেছি, সব ম্যাচের ওদের জাতীয় দলের খেলোয়াড় ছিল। আর অভিজ্ঞতা বলতে, নার্ভাস হইনি মনে হয়েছে আমি পারবো। চিন্তা করেছি আগেও বড় মঞ্চে বোলিং করেছি, ভয় লাগার কিছু নেই। যা করেছি, ভালো করেছি, আল্লাহ'র নামে শুরু করেছি... ভালোই হয়েছে শেষ পর্যন্ত।

শ্রীলংকার অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের বিপক্ষে এক ম্যাচে চার উইকেট পেয়েছেন, কঠিন কাজ সহজ ভাবেই করতে পেরেছেন, প্রত্যেক ম্যাচেই উইকেটের মধ্যে ছিলেন, সাফল্যের রহস্যটা যদি বলতেন? 

আমাদের কোচ ছিলেন চম্পকা রামানায়াকে, উনি আমাদের নিয়ে কক্স বাজারে যান। ঠিক সিরিজ শুরুর আগেই, সেখানে গিয়ে ৯ দিনের অনুশীলন ক্যাম্প করি আমরা। সেখানে উনি একটা কথাই বলতেন সব সময় যে একটা চ্যানেলে বোলিং করতে। একটা নির্দিষ্ট জায়গায় বোলিং করলে ব্যাটসম্যানকে সহজেই আউট করতে পারবে। একটা চ্যানেল ধরে বোলিং করার উনার যে টিপস সেটা মেনেছিলাম বলেই সাফল্য পেয়েছি।

আমি নিজেও খুশি যে উনার টিপস কাজে লাগাতে পেরেছি। শত ভাগ দিতে পারিনি তারপরও নব্বই ভাগ দিতে পেরেছি। শতভাগ দিতে পারলে আরও ভালো লাগতো। চম্পকা সবসময়ই আমাদের সাথে ছিলেন, উপদেশ দিয়েছেন এভাবে এভাবে করতে। উনি শ্রীলংকান কোচ, উনি যানতেন কে কেমন খেলে, তার সাজেশন অনেক কাজে লেগেছে আমার। উনি অনেক ভালো, উনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি, আরও শিখবো। আরও কিছুদিন থাকবেন আমাদের সাথে। 

আয়ারল্যান্ড সিরিজের জন্য দেশ ছাড়বেন শীঘ্রই, আসন্ন সিরিজের আগে আরও প্রস্তুত করবেন নিজেকে? আয়ারল্যান্ড সিরিজে আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য ঠিক করেছেন কোন?

আমাদের ছুটি চলছে। তারপরও সুযোগ পেলে চম্পকার সাথে কাজ করবো। উনি বলেছেন, উনি যদি শ্রীলংকা না যান তাহলে আমার বাউন্সার-ইয়র্কার নিয়ে কাজ করবেন। খুব বেশী হলে দুই একদিন কাজ করবো। আর উনি চলে গেলে তো আর সম্ভব না। আয়ারল্যান্ড যাচ্ছি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী বোলার হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে। শ্রীলংকা সিরিজেও সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলাম। শ্রীলংকা সিরিজের চেয়ে আরও ভালো করার চেষ্টা করবো।