সাক্ষাৎকার

'বীজ ভালো তো শস্য ভালো'

জুবাইর

জুবাইর
প্রকাশের তারিখ: 13:16 বুধবার, 11 জুলাই, 2018

বেশ কয়েকদিন ধরেই হোম অব ক্রিকেটে জাতীয় দলের ব্যস্ততা নেই। বাংলাদেশ 'এ' দল খেলছে সিলেটে। এছাড়া হাই পারফর্মেন্স স্কোয়াড আছে খুলনায়। সব মিলিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলের ক্রিকেটারদের ঝালিয়ে নেয়ার ভালোই সুযোগ পেয়েছে ক্রিকেট কর্তারা।

বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রেক্ষাপটে পাইপলাইনের অন্য নাম এই অনূর্ধ্ব-১৯ প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রাম থেকেই নিয়মিত তরুন প্রতিভার খোঁজ পায় বাংলাদেশ ক্রিকেট। টেস্ট খেলুড়ে দেশ গুলোর মধ্যে অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটা এগিয়ে। 

মিরপুরে ক্ষুদে টাইগারদের অনুশীলনেও সেই চিত্রই দেখা গেল। ইনডোরে ব্যাটিং অনুশীলন আর একাডেমী মাঠে ক্ষুদে পেসারদের নিয়ে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছেন বিসিবি দায়িত্বরত কোচরা।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের পেস বোলিং বিভাগের দুর্দশার ভাবনা থেকেই অনূর্ধ্ব-১৯ দলের পেসারদের দিকে আলাদা দৃষ্টি গেল। ওয়ানডে, টি-টুয়েন্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দলের ফাস্ট বোলিং বিভাগে ভালো প্রতিযোগিতা থাকলেও টেস্ট ক্রিকেটের চিত্রটা ভিন্ন। 

প্রতি টেস্ট সিরিজেই স্পষ্ট হয় পেস বোলিং বিভাগের দৈন্য দশা। দেশের ক্রিকেটের শীর্ষ পর্যায়েই পেসারদের এমন দুর্দশা, তাহলে পাইপলাইনের কি অবস্থা? সেটা জানতেই বিসিবি স্পেশালিস্ট ফাস্ট বোলিং কোচ ও সাবেক ফাস্ট বোলার মাহবুব আলি জাকি স্যারের শরণাপন্ন হয়েছিল ক্রিকফ্রেঞ্জি। 

পাঠকদের সুবিধার্থে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল...

প্রশ্নঃ সামগ্রিক ভাবে এই দলের ছেলেদের কিভাবে দেখছেন? 

- আমাদের ফাস্ট বোলিং বিভাগে একটু খরা যাচ্ছে। এটা নিয়ে সবাই একটু চিন্তিত। আমাদের পাইপলাইনটা ভালোই। নির্বাচকরা একটা ভালো দল এনে দিচ্ছে আমাদের কাছে। কিন্তু আমাদের কোন মনিটরিং সেল নেই, ফাস্ট বোলিংয়ের ক্ষেত্রে বিষয়টি খুব জরুরি। এটা শুধু ক্যাম্প নির্ভর হবে না। সারা বছর ধরে একটা পরিকল্পনা করে কাজ করা দরকার। আর এবারের দলটা ভালো। গত দুই বছর ধরে পেসার নির্বাচনের ক্ষেত্রে একটা নির্দিষ্ট উচ্চতা (কমপক্ষে ছয় ফুট) বেঁধে দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক লেভেলে ছয় ফুট না হলে কঠিন হয়ে যায়। এর মধ্যে শরিফুল এসেছে এর মধ্য থেকে। 

আর অনূর্ধ্ব-১৯ এর সময়টা একটু কঠিন। ওদের এখান থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত করার একটা ব্যাপার থাকে। এখানে খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে সব কিছুতেই একজন পেসারকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত করার চেষ্টা থাকে। আগের বয়স ভিত্তিক প্রোগ্রাম গুলোতে স্পিড নিয়ে খুব একটা চিন্তা করা হত না। এখানে সেটা হচ্ছে না। আমাদের ছেলেদের স্পিড মাপতে হবে, ডেভলপ করতে হবে। সুইং ও বোলিংয়ের অন্যান্য খুঁটিনাটি নিয়েও কাজ করতে হবে। 

যখন আপনি অনূর্ধ্ব-১৯ নিয়ে চিন্তা করবেন তখনই আপনাকে এক চোখ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে রাখতে হবে। এখান থেকে কোন ছেলেটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার যোগ্যতা রাখে, সেটা মাথায় রাখতে হবে। আগামী দুই বছরে তাকে যুব বিশ্বকাপ, পরের দুই বছরের মধ্যে এইচপি অথবা বাংলাদেশ 'এ' দলে যেতে হবে। এটা একধরনের গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রাম বলা যায়। এখানে যে পারবে না সে পিছিয়ে পড়বে। 

প্রশ্নঃ প্রোগ্রাম গুলো সারা বছর ধরে চলছে তো?

- না এটা আমাদের হচ্ছে না। এটা আমাদের দেশের একটা বছর ক্ষতি। বিষয়টা বেশ খরুচে। এই ছেলেরা পড়াশোনা করছে। ওরা যখন ক্যাম্পে আসে তখন আমরা ছেলেদের ফিটনেস ও অন্যান্য বিষয় পরীক্ষা করব। এরপর পরের ক্যাম্পের জন্য প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদা প্রোগ্রাম ডিজাইন করব। কিন্তু এই জিনিসটা ফাস্ট বোলারদের ক্ষেত্রে মেনটেইন হচ্ছে না। কাজ গুলো একা আমাকেই করতে হচ্ছে। 

উপরের লেভেলে যে হচ্ছে না সেটা কিন্তু বুঝা যায়। রুবেল হোসেন সর্বোচ্চ গতি এসেছিল ১৪৮+। কিন্তু রুবেল বল করছে ১৩৫ এর আশেপাশের গতিতে। এটা কিন্তু বড় পার্থক্য। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ক্ষেত্রে এটা কিন্তু মেনে নেয়া যায় না, বিশেষ করে দেশের ফ্রন্ট লাইন পেসারের ক্ষেত্রে। ওর সব সময় ১৪৫+ গতিতে থাকতেই হবে এবং সেটা মেনটেইন করতে হবে। শুধু বোলিং করালেই হবে না। বোলিং সবাই করতে পারে। 

আপনাকে সময়ের সাথে সাথে গতি ও বোলিংয়ের অন্যান্য দিক গুলো উন্নতি করতে হবে। নাহলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টিকে থাকা সম্ভব না। ব্যাটসম্যানরা আমাদের থেকে অনেক অগ্রসর। বোলারদের হাতে তিন চারটি অপশন রয়েছে। ব্যাটসম্যানরা নতুন নতুন শট বের করে আসছে নিয়মিত। ইয়র্কার বলেও দেখছি ছয় হচ্ছে। তার মানে ইয়র্কার বলে আপনার স্পিড বাড়াতে হবে। স্পিড বাড়ানোর প্রসেসটা কিন্তু লম্বা। শুধু প্রসেস হলে হবে না, ফিটনেস, লাইফ স্টাইল, ফুডিং এই বিষয় গুলো গুরুত্বপূর্ণ। 

প্রশ্নঃ বয়স ভিত্তিক ক্রিকেটে ফাস্ট বোলিং ফিটনেসে পরিবর্তন দেখছেন?

- একটা সময় হয়তো পরিবর্তন হবে। প্রসেস শুরু হয়ে গেলে অবশ্যই পরিবর্তন আসবে। এই সব ক্ষেত্রে স্পেশালিস্ট লোকজন বাড়ানো দরকার। ক্রিকেট এখন অনেকটাই পাওয়ারের খেলা। আমাদের অ্যাথলেটিসিজম আরও বাড়ানো দরকার। 

প্রশ্নঃ এমনিতে এই গ্রুপের ছেলেদের সম্ভাবনা কেমন দেখেন?

- ওরা ভালো। এখানে যারা আছে তারা খুবই প্রতিভাবান। এদের সাথে কাজ করে মজা আছে। ভালোই রেসপন্স করে ছেলেরা। তবে কিছু সমস্যা থাকেই। সবাই তো বড় লেভেলে যাবে না। তবে ওইটাও আমাদের জন্য একটা অভিজ্ঞতা, কেন হচ্ছে না। সবাই তো জাতীয় দলে খেলবে না, তবে আমাদের কালচারটা যদি ভালো হয় তাহলে আমাদের ক্রিকেট এগিয়ে যাবে। 

প্রশ্নঃ ফাস্ট বোলিং বিভাগে প্রতিযোগিতা কেমন?

- আমাদের পাইপলাইনই বয়স ভিত্তিক ক্রিকেট। তবে ফাস্ট বোলিংয়ের ক্ষেত্রে অনেক ভিড় দেখি না। আমরা কালচারালি একটু পেছানো। বেশিরভাগই লোয়ার মিডেল ক্লাস পরিবারের ছেলে। সেখান থেকে যা আসছে তা যথেষ্ট না। আর আমাদের তৃণমূল পর্যায়ে ঠিক মত পরিচর্যা হচ্ছে না। বীজ যদি ভালো না হয় তাহলে শস্য ভালো হবে না।