বাংলাদেশ বনাম আর্জেন্টিনা

আর্জেন্টিনাও হেরেছিল বাংলাদেশের কাছে!

তামজিদুর রহমান

তামজিদুর রহমান
প্রকাশের তারিখ: 12:54 বৃহস্পতিবার, 14 জুন, 2018

আজ থেকে দীর্ঘ ২১ বছর আগে মালয়শিয়ার কুয়ালালামপুরে আইসিসি ট্রফি জয়ের মাধ্যমেই ক্রিকেটে নতুন দিগন্তের সূচনা করেছিলো বাংলাদেশ। আর সেই ট্রফি জয়ের ফলে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে পা রাখার গৌরব অর্জন করেছিলো লাল সবুজের দেশটি।

সেবার শুধু বিশ্বকাপেই পা রাখেনি বাংলাদেশ, পাশাপাশি তারা হারিয়েছিলো ফুটবল বিশ্বের পরাশক্তি দল আর্জেন্টিনাকেও। আজ যখন দোরগোড়ায় ফুটবল বিশ্বকাপ, তখন বাংলাদেশ চাইলেই গর্ব করে বলতে পারে আর্জেন্টিনা হারিয়েছিলো তারা একটা সময়! হোক না সেটি ক্রিকেটে।

সেই ম্যাচে শুরুতে টসে হেরে ফিল্ডিং করতে নেমে আর্জেন্টিনাকে ১৩৮ রানে অলআউট করে দিয়েছিলো বাংলাদেশ। এরপর ব্যাটিংয়ে এসে ৫ উইকেটের সহজ জয় তুলে নিয়েছিলো বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক সেই ম্যাচটির খবর অবশ্য পরবর্তীতে চাপা পড়ে গেছে টাইগারদের নানা অর্জনে।

তবে অনেকে ভুলে গেলেও সেবার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে থাকা চার সদস্য আকরাম খান, নাইমুর রহমান দুর্জয়, আতাহার আলি খান এবং হাসিবুল হোসেন শান্ত। দেশের শীর্ষস্থানীয় বাংলা দৈনিক মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সেদিনের সেই ম্যাচের স্মৃতিচারণ করেছেন এই সাবেক চার ক্রিকেটার।

ফুটবল খেলায় ব্রাজিলের পাঁড় ভক্ত আকরাম খান জানিয়েছেন আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলার কথা শুনে বেশ অদ্ভুত অনুভূতি হয়েছিলো তাঁর। কেননা সর্বদা ফুটবল খেলুড়ে দেশ হিসেবে পরিচিত আর্জেন্টাইনরা ক্রিকেট খেলবে এমনটা ভাবা আসলেই বেশ মজার। এই প্রসঙ্গে আকরাম খান বলছিলেন,

‘আমার মনে আছে সেটি ছিল আইসিসি ট্রফিতে আমাদের প্রথম ম্যাচ। আগেই শুনেছিলাম আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলা। তাই একটু অদ্ভুত লাগছিল। কারণ ওরা ফুটবলেতো বিশ্বসেরা। ক্রিকেটে কেমন হবে তা নিয়ে একটু দ্বিধা ছিল। ওরা সেই সময় মাঠে ওয়ার্মআপ করতো ফুটবল খেলে। ম্যাচের আগে নিজেদের মধ্যে ওদের ক্রিকেটাররা যে ফুটবল খেলছিল তা দেখেই আমরা মুগ্ধ। ম্যাচটি আমরা জিতেছি। ম্যাচ শেষে বলেছিলাম ‘আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ক্রিকেট ম্যাচ বলেই জিততে পেরেছি। ওদের ক্রিকেটাররাই যে সুন্দর ফুটবল খেলে জাতীয় দলতো পরের বিষয় ওদের সঙ্গেই জিততে পারতাম না। ব্রাজিলের দারুণ ভক্ত আকরাম খান এবার মাঠে বসেই দেখবেন রাশিয়া বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ। তিনি বলেন, ‘আমি তো ফুটবলের দারুণ ভক্ত। এবার রাশিয়াতে বসেই দুটি ম্যাচ দেখবো। আশা করি প্রিয় দল ব্রাজিলই বিশ্বকাপ জিতবে।'

আকরামের মতো অবাক লেগেছিলো নাঈমুর রহমান দুর্জয়েরও। টাইগারদের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক যদিও নিজেদেরকেই এগিয়ে রেখেছিলেন সেই ম্যাচে। তার থেকেও ভালো লাগার বিষয় হলো আর্জেন্টাইনদের বিপক্ষে ম্যাচ সেরাও নির্বাচিত হয়েছিলেন দুর্জয়। তাঁর ভাষায়,

'এটিতো সত্যি যে আর্জেন্টিনা ফুটবলে অন্যতম সেরা দল। তাই ওরা ক্রিকেট খেলছে ভেবে তেমন কোন ভয়ের চিন্তা আসেনি। বরং একটু অদ্ভুত লেগেছিল। আমরা জানতাম জিতবো তাই হয়েছে। আমার কাছে এখানো ভালো লাগেই ম্যাচে আমি ম্যাচসেরা হয়েছিলাম।'

বর্তমানে ধারাভাষ্যকারের ভূমিকা পালন করা আতাহার আলি খানের আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা অবশ্য দুই বার। ১৯৯৬ এবং ১৯৯৭ সালে তাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে খেলেছিলেন আতাহার। ব্রাজিলের সমর্থক হলেও ক্রিকেট খেলে বলেই আর্জেন্টিনাকে সমর্থন দেন তিনি উল্লেখ করে আতাহার বলেন,

'আমি ১৯৯৬ ও আর্জেন্টিনার বিপক্ষে খেলেছিলাম। এরপর ১৯৯৭ এ খেলি। আর্জেন্টিনা ক্রিকেট খেলে এটা অবশ্য আমরা খুব কম লোকই জানতাম। কিন্তু খেলতে গিয়ে ভালোই লেগেছে। ওদের প্রতি দারুণ সম্মান এসেছে যে এত বড় ফুটবল জাতি হয়েও ক্রিকেটে মনোযোগ আছে। আর আইসিসি’র চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলাতো এত সহজ নয়। যদিও আমি ব্রাজিলের সবসময়ের সমর্থক তবে ক্রিকেট খেলে বলে আর্জেন্টিনাকেও ভালো লেগেছিল সেই সময়।'

এদিকে আর্জেন্টিনা যে ক্রিকেট খেলে একথা নাকি জানতেনই না সাবেক টাইগার পেসার হাসিবুল হোসেন শান্ত। আর তাই তাদের প্রতিপক্ষে খেলতে নামাটাও ভিন্নরকম এক অনুভূতি ছিলো তাঁর। এই প্রসঙ্গে শান্তর উক্তি,

'আমিতো জানতামই না যে আর্জেন্টিনা ক্রিকেট খেলে। সেটি ছিল আইসিসিতে আমাদের আসরে প্রথম ম্যাচ। যখন শুনলাম আর্জেন্টিনা ধরেই নিয়েছিলাম জিতবো, তাই হয়েছে।’ অন্যদিকে জাতীয় দলের এ পেসারের প্রিয় দল ব্রাজিল হলেও তিনি আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসির দারুণ ভক্ত।'